ফুসফুসে ভাইরাস ঢুকতেই পারবে না, প্রথমবার থ্রি-ডি মডেলে স্পাইক প্রোটিনকে রোখার রাস্তা বের করলেন বিজ্ঞানীরা

দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনই যত নষ্টের গোড়া। এই প্রোটিনই পারে মানুষের দেহকোষে অবলীলায় ঢুকে যেতে। মানব শরীরের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধী কোষগুলিকেও হার মানিয়ে দেয়। কীভাবে ভাইরাসের এই প্রোটিনকে জব্দ করা যায়, সে নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্বজুড়েই। ভ্যাকসিনে ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করা যাবে, কিন্তু ফুসফুসের কোষে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করা যাবে না। করোনা থেকে মানুষকে বাঁচাতে ভাইরাল প্রোটিনের নতুন থ্রি-ডি মডেল তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রথমবার ভাইরাল প্রোটিনের অণু-পরমাণু বিশ্লেষণ করে এমন মডেল তৈরি হয়েছে।

‘নেচার কমিউনিকেশন‘ সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর বেরিয়েছে বুধবার। অ্যাটোমিক-লেভেলে ভাইরাস নিয়ে গবেষণা আগে হয়নি। প্রথমবার করলেন মার্কিন গবেষকরা। ব্রুকহ্যাভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে এই গবেষণা হয়েছে। ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে কীভাবে ফুসফুসে ঢুকতে বাধা দেওয়া যায়, সে নিয়েই উচ্চস্তরের গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

Scientists create atomic-scale map of coronavirus' deadly weapon - GeekWire

এই গবেষণার মুখ্য বিজ্ঞানী ডক্টর কুন লিউ বলেছেন, ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করে ভাইরাসের স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনের (S) হালহকিকত খুঁজে বের করা হয়েছে। কোন পথে ভাইরাস ঢুকছে, কীভাবে দেহকোষের রিসেপটর প্রোটিনের সঙ্গে নিজেদের স্পাইক প্রোটিন জুড়ে দিচ্ছে আর কীভাবেই বা মানব শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা হয়েছে। দেখা গেছে, ভাইরাল প্রোটিনের বাইরের পর্দা বা মেমব্রেন এই কাজটা করে থাকে। ভাইরাসের সংক্রামক অংশকে মানুষের কোষে ঢুকিয়ে দিতে পারে। বয়স্ক বা কোমর্বিডিটির রোগীরা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কম, তাদের শরীর এই প্রক্রিয়াটাকে থামাতে পারে না। যে কারণেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর একবার দেহকোষে ঢুকে ভাইরাসের বিভাজন শুরু হলে তা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এক শরীর থেকে অন্য শরীরে তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে (হিউম্যান ট্রান্সমিশন) পারে। তখন বলা হয় ভাইরাল স্ট্রেন সুপার-স্প্রেডার হযে গেছে। তাই যদি গোড়া থেকেই মানুষের কোষে ঢোকার রাস্তাটা বন্ধ করে দেওয়া যায়, তাহলে ভাইরাসের বিভাজন থামবে, ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকবে।

রোগীদের শরীরে যেভাবে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ ও রোগের ধরন বদলাচ্ছে তাতে বিজ্ঞানীদের সন্দেহ জেগেছে যে, মানুষের জিনের বিন্যাসে করোনা কোনওভাবে প্রভাব ফেলছে কিনা।  গবেষকরা বলছেন, মানুষের শরীরে জেনেটিক রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে কিনা বা থাকলেও কতটা, সেটা বের করাও উদ্দেশ্য এই থ্রি-ডি মডেলের। আসলে করোনার স্পাইক প্রোটিনই হল মানুষের শরীরে ঢোকার চাবি। ভাইরাল প্রোটিনকে মানুষের দেহকোষে ঢুকতে দেবে এমন রিসেপটর খুঁজে বার করাই এর কাজ। এই স্পাইক প্রোটিন তৈরি হয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড দিয়ে। এই অ্যামাইনো অ্যাসিডের বিন্যাসকে ইচ্ছামতো বদলে দিচ্ছে ভাইরাস, কখনও কোড মুছে দিচ্ছে, আবার কখনও নতুন কোড সাজিয়ে নিচ্ছে। এই কারণেই ভাইরাসের মিউটেশন বা জিনগত বদল হচ্ছে আর নতুন নতুন প্রজাতির জন্ম হচ্ছে।

SARS-CoV-2 virus envelope protein is represented with magenta sticks while the coloured blue, green and orange surfaces represent the human protein PALS1 | Credit: US Department of Energy's (DOE) Brookhaven National Laboratory

গবেষকরা বলছেন, মানুষের ফুসফুসে PALS1 প্রোটিন খুঁজে নিয়েছে ভাইরাস যার সাহায্যে এরা শ্বাসযন্ত্রে ঢুকে পড়ছে। তাই ভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে আগে ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে, অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম দেখা যাচ্ছে রোগীর। তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, অক্সিজেন সাপোর্টে রাখতে হচ্ছে রোগীকে। থ্রি-ডি মডেলে ভাইরাসের ফুসফুসে ঢুকে রোগ ছড়াবার এই পুরো প্রক্রিয়াটাই ধরা পড়েছে। এবার একে আটকানোর জন্য উপায় বের করছেন গবেষকরা। এই গবেষণার ভিত্তিতেই নতুন ওষুধ বা অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে যা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুরোপুরি থামিয়ে দিতে পারে। এমনটাই আশা বিজ্ঞানীদের।