
বুড়ো হবে না ব্রেন, মস্তিষ্ককে সচল রাখতে রক্তচাপ কেমন হওয়া উচিত, জানাল গবেষণা
গুড হেলথ ডেস্ক
তরতাজা থাকবে ব্রেন (BrainAge)। স্মৃতিশক্তি থাকবে টাটকা। বয়স বাড়লেও ব্রেন থাকবে একদম ঝরঝরে, ফুরফুরে। শরীর বুড়ো হলেও, ব্রেন বুড়ো হবে না, বরং বয়স কমবে আরও বছর ছয়েক। অবাক লাগলেও সত্যি। একেবারে পরীক্ষিত সত্যি। তবে একটাই শর্ত আছে। শুধু এই নিয়ম মানলেই ব্রেনের এজিং ঠেকাতে পারবেন যে কেউ, এমনটাই বলেছেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ANU) গবেষকরা।
কী সেই শর্ত? গবেষকরা বলছেন, রক্তচাপ রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণে। কারও যদি উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে তাহলে ব্রেন এজিং ঠেকানো যাবে সহজেই। রক্তচাপ বশে থাকলে, হার্ট ভাল থাকে, কোলেস্টেরল বশে থাকে, তেমনি মস্তিষ্কও সচল ও সক্রিয় থাকে। ‘ফ্রন্টিয়ারস ইন এজিং নিউরোসায়েন্স’ সায়েন্স পেপারে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাঁদের মস্তিষ্কের কলকব্জা অনেক নড়বড়ে (BrainAge)। হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি, স্মৃতিনাশ বা ডিমেনশিয়ার আশঙ্কাও বেশি।
যে কোনও সুস্থ ব্যক্তির স্বাভাবিক রক্তচাপ হওয়া উচিত ১৩০/৮০। সেটা বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলেরই জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু যদি এই রিডিং বদলে ১৪০ বা তার বেশি হয়ে যায় তখনই চিন্তার কারণ রয়েছে। প্রেশার যদি ১৪০/৯০এর বেশি হয়, তখন রক্তচাপ বেড়েছে বলা যায়। হাইপার টেনশন (হাই ব্লাড প্রেশার) ও হাইপো টেনশন (লো ব্লাড প্রেশার)-এর মধ্যে হাইপার টেনশনের সমস্যাই বেশি দেখা যায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, রক্তচাপ স্বাভাবিক মানে হল ১২০/৮০ এর নীচে, আর যে অপটিমাল ব্লাড প্রেসারের কথা বলা হচ্ছে, সেটি ১১০/৭০ এর কাছাকাছি। গবেষক ওয়াল্টার অভয়রত্ন বলছেন, এই অপটিমাল ব্লাড প্রেসার যদি ধরে রাখা যায়, তাহলে মস্তিষ্কের বয়স আরও বছর ছয়েক কমে যাবে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জার্মানিতে দু’হাজার জনের ব্রেন স্ক্যান করা হয়েছিল। দেখা গেছে, যাদের এই অপটিমাল ব্লাড প্রেসার আছে তাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা অনেক বেশি। ৪৪ থেকে ৭৬ বছরের এমন ৬৮৬ জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে যাদের মস্তিষ্কের যে কোনও ধরনের রোগের ঝুঁকি অনেক কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) একটা পরিসংখ্যান দিয়েছিল কয়েক মাস আগে। পৃথিবীর প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে বেঁচে আছেন। রক্তচাপ বেড়ে হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকে প্রতি বছরই ৭০-৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। অনেক সময়েই রোগের লক্ষণ বোঝা যায় না। আচমকাই বুকে ব্যথা, হৃদপিণ্ডে ধড়ফড়, তারপর সব শেষ। রক্তচাপ বশে না রাখলে একে একে বিকল হবে হৃদযন্ত্র, কিডনি, মস্তিষ্ক, চোখ-সহ শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ রোগী জানেনই না যে তাঁদের রক্তচাপ বাড়তে বাড়তে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাইপারটেনশন সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ। তাই সতর্ক থাকতেই হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু রোগীর মাথা ঘোরা, হাল্কা শ্বাসের সমস্যার মতো উপসর্গ দেখা যায়। সামান্য পরিশ্রমে নিঃশ্বাসের কষ্ট ও বুক ধড়ফড় করে। হঠাৎ করেই রাগ হয়, মাথা ঝিমঝিম করতে পারে। অনেকেই এমন উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। তাই অসুখ চট করে ধরা পড়ে না।
কিন্তু লাগাতার অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ নিয়ে জীবনযাপন করলে কিডনি, হার্ট-সহ বিভিন্ন অঙ্গ একে একে বিকল হতে শুরু করে। আমাদের দেশে হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ। যার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কেও। আচমকাই রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যেতে পারে, ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু হতে পারে রোগীর। তাই কোনও শারীরিক অসুবিধা না থাকলেও বছরে এক বার হেল্থ চেক আপের সময় ব্লাড প্রেশার মেপে নেওয়া দরকার। নিজে সচেতন হলেই হবে না, পারিপার্শ্বিক মানুষজনকেও সতর্ক করতে হবে। রোগের লক্ষণগুলো চিনে রাখতে হবে। সামান্য উপসর্গ দেখা গেলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।