মৃত্যুর পরেও প্রাণ ফিরছে? মৃত শুয়োরের হার্ট, লিভার জাগিয়ে তুলছেন বিজ্ঞানীরা

গুড হেলথ ডেস্ক

মৃত্যুর পরেও প্রাণ ফেরানো সম্ভব? ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের মতো কোন জটিল গবেষণায় মেতেছেন বিজ্ঞানীরা?

মৃত শুয়োরের মস্তিষ্কের কোষ জাগানোর প্রক্রিয়া চলছে। ব্রেন-এক্স যন্ত্রে মৃত্যুর পরেও শুয়োরের ব্রেনে বিদ্যুৎ তরঙ্গ তৈরি করে মস্তিষ্ককে বাঁচিয়ে তোলার জটিল গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। একই সঙ্গে তার হার্ট, লিভার ও শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে আবার পুনরুজ্জীবিত করে তোলার চেষ্টাও চলছে (Pig organs Revived)। সেই কাজে অনেকটাই এগিয়েছে বিজ্ঞান। সাড়া জাগছে মৃত হার্ট, লিভারে। বন্ধ হয়ে যাওয়া রক্তপ্রবাহ আবার শিরা-ধমনী দিয়ে বইতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানের চমৎকারে অবাক হয়েছেন বিজ্ঞানীরাও।

৩ আগস্ট বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ‘নেচার’ সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই গবেষণা করছেন। কার্ডিয়াক অ্য়ারেস্টে মৃত শুয়োরের শরীরের অঙ্গপ্রত্য়ঙ্কগুলিকে পুনরুজ্জীবিত (Pig organs Revived) করার চেষ্টা চলছে। তার মানে এই নয়, যে মৃত শুয়োর ফের বেঁচে উঠছে। আপাতত তার শরীরের কিছু অঙ্গকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, প্রাণ ফেরাতে হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো ফের সক্রিয় করে তুলতে হবে। তার জন্য ব্রেনে ইলেকট্রিক ওয়েভ পাঠাতে হবে। এই গবেষণা খুব জটিল। সাফল্য আসবে কিনা তার সম্ভাবনাও নেই। তবে আগামী দিনে এমন গবেষণাতেও হয়ত সাফল্য পাওয়া যাবে। সেটা হবে বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার।

pig

নর্থ ক্যারোলিনার ডিউক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী নিতা ফারাহ্যানি বলছেন, অভূতপূর্ব গবেষণা করছেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। মৃত্যু পরেও যে শরীরের সবচেয়ে ভাইটাল অর্গ্যানগুলিকে বাঁচানো যায় সেটাই আশ্চর্যের।

মৃত শুয়োরের হার্ট জাগাল অর্গ্যান-এক্স

ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের নিউরোসায়েন্টিস্ট ডক্টর ডেভিড অ্যান্ড্রিজেভিক বলছেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত শুয়োরের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ করতে গিয়েই এই গবেষণা চালানো হয়। অর্গ্যান-এক্স (OrganEx) যন্ত্রে মৃত্যুর এক ঘণ্টার মধ্যে শুয়োরের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হার্ট, লিভার, কিডনি ইত্যাদি বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয় (Pig organs Revived)। এই যন্ত্রের সাহায্যে ফের শরীরে রক্ত সঞ্চালন শুরু করার পাশাপাশি বিশেষ এক ধরনের ককটেল পাঠানো হয় যা শরীরে নতুন করে প্রোটিন ও এনজাইম তৈরি করতে পারে। ৬ ঘণ্টা ধরে টানা এই পরীক্ষা করার পরে দেখা যায় হার্ট সাড়া দিচ্ছে। রক্ত সঞ্চালন শুরু হচ্ছে। অ্যালবুমিন প্রোটিন তৈরি হচ্ছে নতুন করে।

মৃত শুয়োরের মস্তিষ্ক জাগছে, বেঁচে উঠছে মরা কোষ, সাঙ্ঘাতিক গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা

লোূহীা

গবেষক বলছেন, মৃত্যুর পরেই সব কোষ একেবারে মরে যায় না। কিছু তখনও সক্রিয় থাকে। যেমন ব্রেনের কিছু সেল অ্যাকটিভ থাকে। সেই কোষগুলোর মধ্য়ে স্পন্দন তৈরি করাই এই যন্ত্রের কাজ। মৃত্যুর পর পরই সেটা করতে হবে (Pig organs Revived)। যেমন এই পরীক্ষা কিছু শুয়োরকে ইকমো সাপোর্টে, ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তাদের আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু যাকে অর্গ্যান-এক্সের সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তার শরীরে হার্ট, লিভারের স্পন্দন দেখা গেছে। ব্রেনের কোষ এখনও জাগানো যায়নি, তবে হার্ট কিছুটা হলেও সচল হয়েছে।

অসাধ্য সাধন, মরে যাওয়া কোষ জাগছে, প্রবাহিত হচ্ছে তরঙ্গ

২০১৯ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্টিস্টরা ‘নেচার’ সায়েন্স জার্নালে একটি প্রতিবেদন ছাপেন। সেখানে তাঁরা বলেন, মৃত শুয়োরের মস্তিষ্কের কিছু কোষকে (Brain Cells) কীভাবে ফের জাগিয়ে তোলা যায় সেই চেষ্টা চলছে। গবেষণার জন্য কোনও প্রাণী হত্যা করা হয়নি। কষাইখানা থেকে মৃত শুয়োরের ব্রেন সংগ্রহ করে এনে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ৩০০টি মৃত প্রাণীর মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এখনও অবধি ৩২টি মৃত মস্তিষ্ককে জাগিয়ে তুলতে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষক স্টেফানো ড্যানিয়েল বলছেন, অত্যন্ত রহস্যজনক এই গবেষণা। মস্তিষ্কের এমন কিছু রহস্যময় কোষ (Brain Cells) আছে যারা মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরেও বেঁচে থাকে। হৃদযন্ত্রের কাজকর্ম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেই মানবমস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেল, তা নয়। তার পরেও সক্রিয় থাকে মানবমস্তিষ্কের কয়েকটি কোষ। তাদের সক্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। তবে ধীরে ধীরে সেইসব কোষেরও মৃত্যু হয়। সেই মৃত কোষগুলিতে আবারও প্রাণ সঞ্চার করার কাজই করছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা বলছেন, জীবিতের মতো মস্তিষ্ক পুরোপুরি সক্রিয় হচ্ছে এমনটা নয়, ল্যাবরেটরিতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের কোষগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে।

মানুষের কী উপকার হবে?

মৃত মানুষের প্রাণ ফেরানো যাবে কিনা সে অনেক পরের ব্যাপার। এই যন্ত্রের কাজ সফল হলে হার্ট, লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। অনেক জটিল মারণ রোগ, মানসিক ব্যধি, ব্রেন ডেথের রোগীকে হয়ত ফিরিয়ে আনা যাবে। কোমায় চলে গেছেন যে রোগী বা মস্তিষ্কের জটিল ব্যামোয় মৃতপ্রায়, তাঁদের ক্ষেত্রে এইসব যন্ত্রের সাহায্যে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। সেই সাফল্য আসবে কিনা তা গবেষণার আরও অনেক স্তর পার হওয়ার পরেই বোঝা যাবে।

খবর ও ছবি সূত্র: নেচার (Nature) সায়েন্স জার্নাল