
Pollution: দূষণরোধী আইন জরুরি, তার আগে পর্যন্ত ঝুঁকি থেকে বাঁচবেন কীভাবে, বললেন চিকিৎসকরা
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,. তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছো…’– বহু বছর আগে তাঁর লেখা কবিতায় এমনই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ কয়েক দশক পেরিয়ে এসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বিবৃতি দিয়ে বলছে, “কোটি কোটি মানুষ এখনও অস্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নেয় (Pollution)।”
আর ঠিক এই জায়গা থেকেই সরব হয়েছেন চিকিৎসকরা। পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ প্রকোপ নিয়ে প্রকাশ করেছেন উদ্বেগ। কার্ডিওলজিস্ট থেকে অঙ্কোলজিস্ট, সকলেই একযোগে বলছেন, এবার পরিস্থিতির বদল না হলে বিপদ। একের পর এক রোগের কামড় বাড়ছে কেবল দূষণের জেরে।
তাই ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস (World Health Day) উপলক্ষে কলকাতা মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে (Medica Superspeciality Hospital) অনুষ্ঠিত হল একটি প্যানেল ডিসকাশন, ‘স্বাস্থ্যের উপর দূষণের (Pollution) প্রভাব’। এবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের থিম হল, ‘আমাদের গ্রহ, আমাদের স্বাস্থ্য’।
আলোচনায় মেডিকা হাসপাতালের ডিরেক্টর অফ ক্যাথ ল্যাব, সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট ডক্টর দিলীপ কুমার (Doctor Dilip Kumar) জানালেন, এ দেশে বায়ু দূষণ যেভাবে বাড়ছে, তার ফলে হার্ট ব্লকেজ হতে পারে বহু মানুষের, এমনকি হতে পারে মৃত্যুও। এই সংখ্যা বাড়ছে ক্রমশ।
তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর চতুর্থ কারণ বায়ু দূষণ। এবং এই কারণটি ভীষণ রকম ভাবে উপেক্ষা করা হয়। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৬ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটছে দূষণের কারণে। এঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশই মারা যাচ্ছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
ডক্টর দিলীপ কুমারের কথায়, “বায়ুদূষণের (Pollution) কারণে হার্টের আর্টারিতে এথেরোস্ক্লেরোসিস বাড়ছে। এতে ধমনীগুলি শক্ত হয়ে ব্লক হয়ে যায়, যার ফলস্বরূপ স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক হয়। দূষণের কারণেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয় বহু মানুষ, যা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং হার্ট ফেলিওর-ও ঘটাতে পারে।”
ডাক্তারবাবু মনে করিয়ে দিলেন, সাতের দশকে আমেরিকা একটি আইন নিয়ে আসে, ‘ক্লিন এয়ার’ আইন। এই আইনের বলে দেশে দূষণ (Pollution) এতই কমেছিল, যাতে সে দেশের মৃত্যুর হারও ৭০% কমে গেছিল। আমেরিকা যদি পারে তাহলে আমরা কেন পারব না? উন্নত দেশগুলো কোনও না কোনও ভাবে পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন এবং সে বিষয়ে কাজও করছে। কিন্তু আমাদের দেশে দূষণ এখনও একটি বড় সমস্যা।”
ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডক্টর অবিরল রায় (Doctor Aviral Roy) আবার মনে করিয়ে দিলেন, বেশ কিছু ছোটদের মধ্যে দেখা যাওয়া প্রধান শারীরিক সমস্যার কারণই হয়ে দাঁড়াচ্ছে দূষণ। তাঁর কথায়, “গর্ভবতী মা এবং ছোট শিশুদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে দূষণ। দূষণ যে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে বা হৃদরোগের কারণ হয়ে ওঠে, তা নয়। ছোটদেরও বৃদ্ধি থেমে যাওয়া, হাড়ের দুর্বলতা– ইত্যাদি নানা সমস্যা তৈরি করে এই দূষণ। তাই বায়ুদূষণ শুধু বয়স্কদের জন্যই নয়, ছোটদের জন্যও একটি বড় সমস্যা। এইদিকটায় নজরই দেওয়া হয় না।”
রেসপিরেটরি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডক্টর নন্দিনী বিশ্বাস (Doctor Nandini Biswas) আবার জানান, ফুসফুসে উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে দূষণ (Pollution)। তিনি বলেন, “গোটা বিশ্বে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গরুত্বপূর্ণ বিষয় এই দূষণ। এবং এটি অনেক বছর ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক থাকবে। বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের ফুসফুস। দূষণের কারণেই সিওপিডি বেড়ে চলেছে। এটি দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, বর্তমানে বিশ্বের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। আমি নিশ্চিত, খুব শীঘ্রই এটি সারা বিশ্বে মৃত্যুর প্রথম ও প্রধান কারণ হবে। সিওপিডি-র জন্য ধূমপানকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়, কিন্তু আমাদের দেশে দূষণই হল সিওপিডি-র প্রথম কারণ।”
অঙ্কোলজিস্ট, হেড অ্যান্ড নেক সার্জন, ডক্টর হর্ষ ধর (Doctor Harsha Dhar) আবার জানিয়েছেন বিভিন্ন রকম দূষণ (Pollution) এবং পরিবেশগত কারণে ক্যানসারের বিপদ ক্রমেই বাড়ছে। তাঁর কথায়, “বিশ্বের সমস্ত রোগের সবচেয়ে বড় কারণটি এখন দূষণ৷ এ জন্য ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন এবং কলকারখানাগুলির অবাধ রাসায়নিক নির্গমনে লাগাম পরানো দরকার এই মুহূর্তে। এই বিষ গ্রহণের ফলে বহু ক্ষতিকারক রোগের সঙ্গেই ক্যানসারও বাড়ছে। যতদিন না সরকার সচেতন হচ্ছে, আইনি বদল আসচে, ততদিন পর্যন্ত নিরাপদে থাকার একমাত্র উপায় হল স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যতটা সম্ভব প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা, প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করা, পরিশুদ্ধ জল খাওয়া।”
বিনামূল্যে চোখ দেখানোর জনপ্রিয় ঠিকানা, দাশনগর বিরাজময়ী রোডের দাতব্য চিকিৎসালয়