কলকাতায় ছাগলের কান দিয়ে মানুষের চিকিৎসা! ছাগকর্ণেই ঠিক হচ্ছে বিকৃত নাক-মুখ

গুড হেলথ ডেস্ক

পুরাণকথা বলে, প্রজাপতি দক্ষের ধড়ে ছাগমুণ্ড বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ছাগলের মাথাতেই প্রাণ পেয়েছিলেন ব্রহ্মা-পুত্র। মানুষের ধড়ে ছাগলের মাথা কীভাবে জুড়ে দেওয়া যায়, সে নিয়ে অবশ্য পুরাণে কিছু লেখা নেই। তবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন অনেক অসম্ভবই সম্ভব হচ্ছে (Plastic Surgery)। আস্ত ছাগমুণ্ড না হোক, ছাগলের লম্বা কান মানুষের চিকিৎসায় কাজে লাগাচ্ছেন কলকাতার ডাক্তারবাবুরা।

ছাগলের কান নিয়ে এখন চারদিকেই কানাকানি হচ্ছে। ছাগকর্ণ শুনতে যতই খারাপ লাগুক, ছাগলের লম্বা কানই এখন ডাক্তারদের জাদুমন্ত্র। খচাখচ ছাগলের কান কেটে তা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে মানুষের নাকে-কানে। নাক কাটা যাক, কান কাটা যাক, ঘা হোক বা পচে যাক, ছাগলের কান দিয়েই মানুষের নাক-কানের খামতি পুষিয়ে দিচ্ছেন ডাক্তারবাবুরা (Plastic Surgery)। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, ছাগলের কান নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন রোগী। অথবা নাক-ঠোঁটের ভাঙাচোরা জায়গাতে নিপুণ দক্ষতায় সেঁটে দেওয়া হয়েছে ছাগলের কানের অংশ। যাই হোক, খাবার পাতে এর চাহিদা না থাকলেও, চিকিৎসার কাজে এখন ছাগলের কান বেশ মহার্ঘ্য।

R.G. Kar Medical College

ছাগকর্ণ নিয়ে ঠিক কী চিকিৎসা হচ্ছে?

বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারবাবুরা ছাগলের কান নিয়ে মানুষের প্লাস্টিক সার্জারি করছেন। যাদের নাক-কানে বিকৃতি রয়েছে, অথবা দুর্ঘটনায় বাদ গেছে, ক্ষত হয়েছে বা কোনও রোগে বিকৃতি হয়ে গেছে, তাদের সেই ক্ষতস্থান জুড়তে ছাগলের কান দিয়েই সবচেয়ে সহজ, নিরাপদ ও সস্তায় সার্জারি (Plastic Surgery) করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আরজি কর মেডিক্যালের ডাক্তারদের টিম। ছাগলের কানের তরুণাস্থি থেকে এমন ইমপ্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে যা মানুষের নাক-কানের জায়গায় সুন্দর করে অস্ত্রোপচার করে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছাগকর্ণ নাকি গ্রহণও করছে মানব শরীর। সার্জারির পরেও কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে না। ছাগলের কনের তরুণাস্থি থেকে তৈরি ইমপ্ল্যান্ট এমন সাড়া জাগিয়েছে যে ‘জার্নাল অব টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং ও রিজেনারেটিভ মেডিসিন’-এ এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে।

ছাগলের কানে আপত্তি করছে না মানুষের শরীর

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ও আরজি করের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য বলছেন, নাক-কান পুনর্গঠন বা রিজেনারেশন থেরাপি বেশ খরচসাপেক্ষ। এই সব অপারেশনের ক্ষেত্রে রোগীর পাঁজর থেকে তরুণাস্থি নেওয়া হয় অথবা বাজার থেকে রেডিমেড ইমপ্ল্যান্ট কিনতে হয়। বিদেশ থেকে আনানো রেডিমেড ইমপ্ল্যান্টের খরচ অনেক। সব রোগীর পক্ষে এই সার্জারির খরচ সামলানো সহজ নয়। আর রোগীর পাঁজর থেকে ইমপ্ল্যান্ট বানালে তার থেকে অনেক সময় সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়। অপারেশনও যে সব সময় সফল হয় তা নয়। কারণ মানুষের শরীর সবকিছু গ্রহণ করে না। গ্রাফটিং করার পরে নতুন অঙ্গ কোষ-কলার সঙ্গে খাপ খাবে কিনা সেটাও বড় ব্যাপার। না হলেই সংক্রমণ বাসা বাঁধবে। তাই রিজেনারেশনের থেরাপি সহজ নয়।

ছাগলের কান সহজলভ্য, তাছাড়া ছাগলের কান থেকে বানানো ইমপ্ল্যান্টের খরচও কম, তাই ছাগকর্ণেই প্লাস্টিক সার্জারির করার সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তাররা। মানুষের নাকের পুনর্গঠনের যে সার্জারি তাকে বলে রাইনোপ্লাস্টি আর কানের ক্ষেত্রে মাইক্রোশিয়া। দুটোই নাকি ছাগলের কান ভালভাবে খাপ খেয়ে গেছে। আগে খরগোশের ওপরে পরীক্ষা করে সাফল্য় এসেছিল, তারপর মানুষের শরীরে ইমপ্ল্যান্ট করার ঝুঁকি নেন ডাক্তাররা। এখন ১৫ জন রোগীর বিকৃত নাক-কান সারিয়ে তোলা হয়েছে ছাগলের কান দিয়ে।

ডাক্তাররা জানিয়েছেন, ইমপ্ল্যান্ট তৈরি ও সার্জারির প্রক্রিয়াটি সম্ভব হয়েছে কেন্দ্রীয় জৈবপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অর্থানুকূল্যে। কলকাতার ডাক্তারবাবুদের অস্ত্রোপচার দিল্লিতেও প্রশংসা পেয়েছে। বাস্তবে এমন সার্জারি আরও হোক এবং সবধরনের রোগীই সুবিধা পান, এমনটাই লক্ষ্য ডাক্তারদের।