সিকল সেল অ্যানিমিয়া গর্ভাবস্থায় কতটা ক্ষতি করে, কীভাবে মা-বাবার থেকে সন্তানে আসে রোগ

গুড হেলথ ডেস্ক

কেন্দ্রীয় বাজেটে সিকল সেল অ্যানিমিয়া (sickle cell anemia) নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর ঘোষণা করার পর থেকেই এই অসুখটি নিয়ে সর্বত্র চর্চা শুরু হয়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এই সিকল সেল অ্যানিমিয়া রোগ দূরীকরণে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ার কথা বলেছেন। ২০৪৭ সালের মধ্যে এই রোগ নির্মূল করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণাও করেছেন। এখন কথা হল এই অসুখটি জিনঘটিত এবং বংশপরম্পরায় বাবা-মায়ের থেকে সন্তানের শরীরে আসতে পারে। কীভাবে অসুখটি মা-বাবার থেকে শিশুর শরীরে আসে সেটা জেনে নেওয়া যাক।

সিকল সেল অ্যানিমিয়া বা সিকল সেল ডিজিজ (SCD) হল থ্যালাসেমিয়া ও হিমোফিলিয়ার মতো জিন বাহিত অসুখ। এই অসুখে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়, ফলে রক্তাল্পতা দেখা দেয়। তাই সিকল সেল ডিজিজকে সিকল সেল অ্যানিমিয়াও (Sickle cell anemia) বলা হয়। আমাদের লোহিত রক্তকণিকার (Red Blood Cell) আকার গোল হয়। কিন্তু সিকল সেল ডিজিজ হলে হিমোগ্লোবিনের আকার বিকৃত হয়। সেটি দেখতে অনেকটা ‘Sickle’ বা কাস্তের মতো দেখতে হয়। লোহিত রক্তকণিকার গঠন বিকৃত হয়ে যায় বলে এর মধ্যেকার হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin) প্রোটিনের পরিমাণও কমে যায়। রোগের শুরু সেখান থেকেই।

‘সিকল সেল অ্যানিমিয়া’ কী, কেন এত বাড়ছে? কেন্দ্রীয় বাজেটে কেন আলাদা গুরুত্ব এই অসুখকে?

 sickle cell disease

গর্ভাবস্থায় প্রসূতির সিকল সেল অ্যানিমিয়া ধরা পড়লে তার প্রভাব অনেক রকম হতে পারে–

১) প্লাসেন্টার মধ্যে দিয়ে রক্তের প্রবাহ কমে আসে, ফলে গর্ভস্থ শিশুর অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাব হতে পারে।

২) গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি কম হয়। প্রসবের পরে শিশুর শারীরিক গঠন খর্ব হতে পারে।

৩) গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহ পেরনোর আগেই শিশুর জন্ম হতে পারে। প্রিম্যাচিওর ডেলিভারির ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

৪) গর্ভে থাকার সময়েই শিশুর শরীরে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে যায়। ফলে শিশু অ্যানিমিয়া নিয়েই জন্মাতে পারে।

৫) গর্ভপাত বা মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি বাড়ে।

কীভাবে বাবা-মায়ের থেকে সন্তানে আসতে পারে রোগ

এই রোগ দু’ভাবে ছড়াতে পারে–১) ক্যারিয়ার বা বাহক এবং ২) রোগী নিজে। অনেক সময় দেখা যায় বাবা-মা রোগের বাহক কিন্তু তাদের সিকল সেল অ্যানিমিয়া নেই। অথচ সন্তান জন্মের পরে তার শরীরে রক্তের অসুখ ধরা পড়তে পারে। আবার এমনও হতে পারে যারা রোগের বাহক তাদের মৃদু অ্যানিমিয়া রয়েছে, অথচ সন্তানের মধ্যে পুরোদস্তর রোগের প্রকোপ দেখা যেতে পারে।

Sickle cell anemia

সিকল সেল অ্যানিমিয়ার ফলে যে বিকৃত বা কাস্তের আকারের হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় তাকে বলে হিমোগ্লোবিন এস (Hemoglobin S)। যদি বাবা ও মা দুজনেই সিকল সেল অ্যানিমিয়ার বাহক হন, তাহলে সন্তান হিমোগ্লোবিন এসএস (Hb SS) রোগ নিয়ে জন্মাবে। এর মানে হল, শিশু জন্ম থেকেই রক্তের রোগে আক্রান্ত হবে।

যদি সন্তান বাবা বা মায়ের একজনের থেকে হিমোগ্লোবিন এস ও অন্যজনের থেকে হিমোগ্লোবিন সি পায় তাহলেও জন্মের পরে তার সিকল সেল অ্যানিমিয়া হবে, সন্তান Hb SC রোগে আক্রান্ত হবে। হিমোগ্লোবিন সি-ও হল হিমোগ্লোবিন এসের মতো বিকৃত ও ভেঙে যাওয়া হিমোগ্লোবিন।

Sickle Cell Disease

এমনও দেখা যায় বাবা বা মা কেউ একজন হিমোগ্লোবিন এস-এর বাহক এবং অন্যজন থ্যালাসেমিয়ার। তাহলে সন্তান সিকল বিটা থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মাবে যা আরও ভয়ঙ্কর।

যদি বাবা বা মায়ের কারও ‘সিকল সেল ট্রেট’ (Sickle Cell Trait) রোগ থাকে তা হলে সন্তানের মধ্যে অবশ্যই সেই রোগ ছড়াবে। বাবা বা মা কেউ যদি তাঁদের বংশ পরম্পরায় হিমোগ্লোবিন এস ও হিমোগ্লোবিন এ পেয়ে থাকে তাহলে তাঁরা সিকল সেল অ্যানিমিয়ার রোগে বাহক হবে। মানে তাঁরা শরীরে রোগের বীজ বহন করবে। তাঁদের সন্তান হলে জন্ম থেকেই সিকল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হবে।