
যক্ষ্মায় মৃত্যু হয়েছে কলকাতার ডাক্তারের, কী কী লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হবেন
গুড হেলথ ডেস্ক
যক্ষ্মা (Tuberculosis) নিয়ে একটা সময় আতঙ্ক ছিল। এখন চিকিৎসাপদ্ধতি অনেক উন্নত, কাজেই যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিসের ভয় তেমনভাবে নেই। কিন্তু যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতার অভাব ও অবহেলাই বিপদ ডেকে আনতে পারে। তার মধ্যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে তো কথাই নেই। যক্ষ্মার জীবাণু জাঁকিয়ে বসবে শরীরে। ঠিক যেমনভাবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক ডাক্তারি পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে যক্ষ্মায়। টানা সাত মাস টিবিতে ভুগছিলেন ওই পড়ুয়া। তার পরেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, কোভিডের মতো যক্ষ্মাও (Tuberculosis) সংক্রামক রোগ। গত বছর করোনার কারণে মাস্কের ব্যবহার বাড়ায় যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা অনেক কমে যায়। যক্ষ্মার কারণ হল মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস (Mycobacterium Tuberculosis)। যক্ষ্মার জীবাণুও বাতাসে ভাসমান ড্রপলেটের মাধ্যমে শরীরে ঢুকতে পারে। কিন্তু এখন কোভিড কমে যাওয়ায় আবারও মাস্ক পরা ছেড়ে দিয়েছেন বেশিরভাগই। ফলে টিবি ফের জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে।
যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ মারা যান। সমীক্ষা বলছে, ২০২১ সালে গোটা দেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১ লক্ষ ৪০ হাজার জন। ২০২০ সালের থেকে ১৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের মধ্যে দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূল করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। করোনার দু’বছরে যক্ষ্মা অনেকটা কমে গেলেও, ইদানীংকালে ফের বাড়তে শুরু করেছে। আর উপসর্গ সঠিকভাবে চেনা না থাকায়, রোগ হলেও তা বুঝতে পারছেন না অনেকে। ফলে রোগ তলে তলে বাড়তে থাকছে শরীরে।
যক্ষ্মার ঝুঁকি বেশি কাদের
করোনার মতোই হাঁচি-কাশির মধ্যে দিয়ে বাতাসে ছোট ছোট কণার আকারে যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই রোগীর কাছাকাছি থাকলে অনেকটাই বেড়ে যায় এই রোগের ঝুঁকি। শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে গেলে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। যক্ষ্মা রোগীর থেকে সংক্রমণ আরও অনেকের মধ্যে ছড়াতে পারে। তাই সতর্ক থাকতেই হবে। ডায়াবেটিস ও কিডনির অসুখ থাকলে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনিতেই এইসব অসুখ থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাছাড়া বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ঘিঞ্জি ও অপরিষ্কার জায়গায় বসবাস করলে ও পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। তাছাড়া পরিবেশ দূষণ, সিগারেট-মাদকের নেশা, অপুষ্টিও যক্ষ্মার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
মাস্ক না পরাই কি কাল হল! যক্ষ্মায় মৃত্যু কলকাতা মেডিক্যালের ডাক্তারি পড়ুয়ার
ক্রনিক অসুখে ভুগছেন যাঁরা বা এইডস, ক্যানসারের রোগী যাঁদের স্টেরয়েড বা কেমোথেরাপি দিতে হয়, তাঁরাও রয়েছেন যক্ষ্মার ঝুঁকিতে। রোগ থেকে বাঁচার উপায় হল বিসিজি ভ্যাকসিন, যা ছোটবেলায় বাচ্চাদের দিতেই হবে।
১) ক্রমাগত হাঁচি, কাশি। ওষুধ খেলেও কমবে না। কাশির সঙ্গে রক্ত বেরতে পারে।
২) হঠাৎ রাতে ঘাম শুরু হলে সাবধান হতে হবে। যদি দেখা যায় প্রতি রাতেই এমন হচ্ছে, ঘুমের মধ্যে অস্বস্তি হচ্ছে, দম আটকে আসছে বলে মনে হচ্ছে, তখন সতর্ক হতে হবে।
৩) প্রায়ই বুকে ব্যথা হলে তা কখনওই ফেলে রাখবেন না।
৪) খিদে না পাওয়া, ঘন ঘন হজমের সমস্যা এই রোগের উপসর্গ। সেই সঙ্গে দুর্বলতা বাড়বে, ওজন কমতে থাকবে।
৫) যক্ষ্মার প্রভাব পড়ে শরীরের অন্য অঙ্গেও। প্রস্রাবের সময় জ্বালা, প্রস্রাবে রক্ত, কিডনির সমস্যা, পিঠে-কোমরে ব্যথাও এই রোগের লক্ষণ।
রোগী প্রাপ্তবয়স্ক হলে, তাঁর ব্লাড সুগার বা এইচআইভি রয়েছে কি না তা দেখে নেওয়া দরকার। কারণ এদের সহজে টিবিতে আক্রান্ত সম্ভাবনা থাকে।