West Bengal Caesarean deliveries: বাংলায় নর্মালের থেকে সিজার বেশি, নয়া নিয়ম বাঁধল রাজ্য

বাংলায় সিজার বা সি-সেকশন (West Bengal Caesarean deliveries) ডেলিভারির এখন বাড়বাড়ন্ত। নর্মাল ডেলিভারি সেখানে হাতে গোনা। কেন অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব করানোর এত বাড়াবাড়ি সে নিয়ে কৈফিয়ত চাইল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

স্বাস্থ্যকর্তাদের অভিযোগ, এটা ফাঁকি মারার আদর্শ পন্থা। সময়ের আগেই অস্ত্রোপচার করে গর্ভস্থ সন্তানকে বের করে আনা মানে তার শারীরিক বিকাশও সম্পূর্ণ হয় না। তাছাড়া সি-সেকশনের ঝুঁকিও আছে। তাই কেন সিজার করা হল তা চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির জন্য নয়া নির্দেশিকা আনল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রকাশিত এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মা-শিশুর প্রাণরক্ষার তাগিদে কোনও হাসপাতালে মোট প্রসবের ১০ থেকে ১৫%  সিজার  হতে পারে। তার বেশি নয়। সিজারের সংখ্যা কত হবে তারও একটা মাপকাঠি আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সেই নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। প্রসবকালীন কোনও জটিলতা থাকলে বা শিশু ও মায়ের শারীরিক অবস্থা বুঝে প্রয়োজন হলে সিজার করা যেতে পারে। স্বাস্থ্য দফতরের অভিযোগ, এখন হাসপাতালগুলিতে অপ্রয়োজনেই সি-সেকশন ডেলিভারি করা হচ্ছে। সেই সংখ্যাও ১৫ শতাংশের অনেক বেশি।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বেশিরভাগ মেডিক্যাল কলেজেই ‘হু’-এর সুপারিশের দ্বিগুণ, এমনকী তিন গুণ সিজার হচ্ছে। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে বলছে, সারা দেশে মোট প্রসবের ১৭ শতাংশ বা তার বেশি অস্ত্রোপচার করে হয়। আমাদের রাজ্যে সেই হার আরও বেশি। সরকারি ক্ষেত্রে প্রায় ৩৪ শতাংশ ও বেসরকারি ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি। স্বাস্থ্যদফতরের বক্তব্য, যে কোনও অস্ত্রোপচারেই সংক্রমণ, যন্ত্রণা, অ্যানেস্থেশিয়াজনিত জটিলতা, রক্ত জমাট বাঁধা এমনকী মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। তাই অহেতুক ও অপ্রয়োজনে সিজার করা যাবে না।

Calcutta Medical College: হার্ট চলছে অথচ স্পন্দন নেই, বিরল অসুখে আক্রান্ত রোগীকে বাঁচাল কলকাতা মেডিক্যাল

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কে প্রতি মিনিটে প্রায় ২৫ হাজার নিউরোন তৈরি হয়। ফলে সময়ের আগে অস্ত্রোপচার করলে ধাক্কা খায় মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশ। মা প্রসবকালীন যন্ত্রণা এড়াতে অস্ত্রোপচারেই ভরসা করেন বেশি, কিন্তু এতে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয় শিশুর। ডাক্তারদের মতে, উপযুক্ত পরিবেশ এবং মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য না পেলেই মায়েদের প্রসবযন্ত্রণা বেশি হয়। কিন্তু তা যথাযথ পেলে মায়ের মস্তিষ্ক থেকে অক্সিটোসিন হরমোন ক্ষরণ হয়, যা অল্প যন্ত্রণায় স্বাভাবিক প্রসবে সাহায্য করে।

শিশুরোগ চিকিৎসকদের মতে, গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কে প্রতি মিনিটে প্রায় ২৫ হাজার নিউরোন তৈরি হয়। ফলে সময়ের আগে অস্ত্রোপচার করলে ধাক্কা খায় মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশ। শুধু তা-ই নয়, মায়ের শরীরের পক্ষেও ক্ষতিকর সিজ়ার। অথচ অধিকাংশ মা প্রসবকালীন যন্ত্রণা এড়াতে অস্ত্রোপচারের পথই স্বচ্ছন্দ মনে করেন। ডাক্তারদের মতে, উপযুক্ত পরিবেশ এবং মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য না পেলেই মায়েদের প্রসবযন্ত্রণা বেশি হয়। কিন্তু তা যথাযথ পেলে মায়ের মস্তিষ্ক থেকে অক্সিটোসিন হরমোন ক্ষরণ হয়। যা অল্প যন্ত্রণায় স্বাভাবিক প্রসবে সাহায্য করে।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের মত, এখন চিকিৎসকদেরও একটা বড় অংশ প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। ফলে স্বাভাবিক প্রসব করানোর যে সময়টা লাগে তা তাঁরা দিতে রাজি নন। এর থেকে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে দেন। তাই গণহারে সিজারের সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য দফতরের মত, মা ও শিশুমৃত্যুর অডিটের মতোই ‘সিজার কেস অডিট’ শুরু হবে রাজ্যে।

তবে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের অনেকের দাবি, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রসবের জটিল কেস আসে। সে ক্ষেত্রে মা ও শিশুর শরীর বুঝে সিজার করতেই হয়। সব সময় অত নিয়ম মেনে সিজার করা যায় না। তা ছাড়া, উন্নত দেশের হাসপাতালে ব্যথাহীন স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা রয়েছে, আমাদের দেশে তা নেই। তাই অনেক মহিলাই ব্যথা সহ্য করতে না পেরে চিকিৎসককে সিজার করে দিতে বলেন।