পাঁচমেশালি ভ্যাকসিনে কি বিপদ বাড়বে? বাকি দেশে কোথায় কী হচ্ছে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

দ্য ওয়াল ব্যুরো: আলফা বিটা ডেল্টা কাপ্পা, নানা রূপে নানা ভাবে হাজির হচ্ছে করোনা ভাইরাস। তাকে ঠেকাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন বিজ্ঞানীরা। মারণ ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা গেছে ঠিকই, কিন্তু তার কার্যকারিতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বারবার চরিত্র বদলে ফেলছে করোনা। এমন অবস্থায় ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশ।

এক ভ্যাকসিনের সঙ্গে আরেক ভ্যাকসিন মিশিয়ে, এক ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের সঙ্গে অন্য ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ভারতের মতো দেশে যেখানে ভ্যাকসিনের সংকট দেখা দিয়েছে, দেশের জনগণের একটা বড় অংশ এখনও টিকা পাননি, সেখানে এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার গুরুত্বও বেড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল এটা কতটা সুরক্ষিত? কতটা নিরাপদ?

আজ না হয় কোভিড গ্রাফ নীচের দিকে, কিন্তু কাল যদি এসে পড়ে অন্য কোনও ঢেউ, চরিত্র বদল করে যদি ফের নতুন রূপে হানা দেয় ভাইরাস, তখন এই পাঁচমেশালি ভ্যাকসিন বিপদ আরও বাড়াবে না তো?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তা নয়। এক ভ্যাকসিনের সঙ্গে আরেক ভ্যাকসিন মিশিয়ে ব্যবহার করলে বড় কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রোজেনেকা ভ্যাকসিনের সঙ্গে ফাইজারের ভ্যাকসিন মেশানো হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে এতে কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। ডঃ সত্যজিৎ রাথের কথায়, “ভ্যাকসিন ওষুধ নয়। বরং শরীরের কিছু কিছু অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে ভ্যাকসিন। সাধারণত এক ভ্যাকসিনের সঙ্গে অন্য ভ্যাকসিন মেশালে কোনও ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।” দেশে ভ্যাকসিনের অভাব হলে এই কাজ করাই যায়, মত বিশেষজ্ঞদের।

আসুন দেখে নেওয়া যাক ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোন দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে।

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র:

মার্কিন মুলুকে যাঁদের পুরোপুরি টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে বুস্টার হিসেবে আলাদা আলাদা ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া শুরু হবে। গত মঙ্গলবারই এই মর্মে ঘোষণাও করা হয়েছে। শুরু হবে ক্লিনিকাল ট্রায়াল। গ্রীষ্মের শেষে এই ট্রায়ালের ফল জানা যাবে।

কানাডা:

কানাডার ন্যাশনাল অ্যাডভাইসরি কমিটি অন ইমিউনাইজেশনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে যাঁরা অ্যাস্ট্রোজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছেন, এবার তাঁরা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ফাইজার বা মডার্না ভ্যাকসিন পাবেন।

ব্রিটেন:

জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করেছে, কেউ যদি প্রথম ডোজ হিসেবে কোন ভ্যাকসিন নিয়েছেন তা না জানেন, বা প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন আর না পাওয়া যায়, তবে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। অর্থাৎ আলাদা আলাদা ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। ফেব্রুয়ারিতে আবার অ্যাস্ট্রোজেনেকা আর ফাইজারের ভ্যাকসিন মিশিয়ে ক্লিনিকাল ট্রায়ালও শুরু করে দিয়েছে ব্রিটেন। ফাইজার মডার্না ভ্যাকসিন মিলিয়ে মিশিয়ে নেওয়া যাচ্ছে।

বাহরিন:

টিকাকরণে ঘাটতি না থাকলেও সম্প্রতি এই ছোটো দ্বীপরাষ্ট্রে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া মানুষদের মধ্যে আবার করে ফাইজার আর চিনা সিনোফার্ম ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে এখানে।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহী:

এখানে প্রথমে নাগরিকদের সিনোফার্ম ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল। পরে বুস্টার হিসেবে আবার ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।

স্পেন:

স্পেনে অ্যাস্ট্রোজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ যাঁরা নিয়েছেন তাঁদের ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে।

একইভাবে ফ্রান্স নরওয়ে সুইডেনেও অ্যাস্ট্রোজেনেকা প্রথম ডোজের সঙ্গে অন্য ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে।

ভারতে কী হচ্ছে:

পাঁচমেশালি ভ্যাকসিনে এখনই ছাড়পত্র দেয়নি ভারত। এর সুরক্ষা বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা। যদিও উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতে ইতিমধ্যে ভুল করে কোভিশিল্ড আর কোভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে উদ্বেগও তৈরি হয়েছে, তবে এতে ক্ষতি হবে না বলেই জানাচ্ছেন এফআইটির বিশেষজ্ঞরা। যদিও ছাড়পত্র না পেলে এখনই এই ব্যবস্থা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।