
যখন তখন হার্ট অ্যাটাক, বাঁচানোর সময়টুকু মিলছে না, শরীর-মন ঠিক রাখার উপায় বললেন বিশেষজ্ঞরা
গুড হেলথ ডেস্ক
হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু বেড়ে গেছে। নাচতে গিয়ে, হাঁটার সময়, বসে থেকে, অফিসে-বাড়িতে-বিয়েবাড়িতে, ক্রিকেট-ফুটবল খেলার সময় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হচ্ছে কমবয়সি থেকে বেশি বয়সিদের। হৃদরোগ এখন বয়স বাছবিচার করে আসছে না। যখন তখন যত্রতত্র হার্ট অ্যাটাক হানা দিচ্ছে। উপসর্গও বোঝা যাচ্ছে না। মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে রোগী, তারপর সব শেষ। বাঁচানোর সময়টুকু পাওয়া যাচ্ছে না। পরপর এমন ঘটনা ঘটতে থাকায় চিন্তা বেড়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও। কী করলে হবে সমাধান (Yoga)? কীভাবে এই মারণ হৃদরোগ থেকে বাঁচা যাবে, সেই চিন্তাই এখন বেশি। আর তার কিছু সহজ সমাধানও বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এখনকার সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে অতিরিক্ত চিন্তা-স্ট্রেস-খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, নেশার প্রবণতা ইত্যাদি নানা কারণে হার্টের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। ভেতরে ভেতরে হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ছে, ব্লকেজ হচ্ছে যা বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে না। তারপর একদিন আচমকাই হার্টে অ্যাটাক হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইসবই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। বাইরে থেকে লক্ষণ বোঝা যায় না। তাই এই সময় হার্ট ভাল রাখতে যেমন নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করা জরুরি তেমনি দরকার শরীরচর্চা। তার জন্য যোগাসনই ভাল উপায় হতে পারে। যোগব্যায়ামে (Yoga) একই সঙ্গে শরীর ও মন দুইই ভাল থাকে।
শরীর ভেতর থেকে মজবুত করে যোগাসন
সুস্থ শরীর মানেই ফিট, আত্মবিশ্বাসী চেহারা। বাইরেটা ঝকঝকে করতে হলে আগে ভেতরের খোলনলচে সারিয়ে তুলতে হবে। এখন দেখা যাক, যোগাসনে কী কী সুফল মেলে—
রক্তচাপ—নিয়মিত যোগাভ্যাসে রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে। শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে হয়। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো সঠিক যোগাসন করলে উচ্চরক্তচাপের সমস্যা দূর হয়। ঘন ঘন ওষুধ খাওয়ার দরকার পড়ে না।
পালস রেট—হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ মানেই পালস রেট হঠাৎ করে খুব বেড়ে যাওয়া, বা একেবারে কমে যাওয়া। যোগাসন এই পালস রেটকে ঠিক জায়গায় রাখে।
রক্ত সঞ্চালন—নিয়মিত যোগাসন মানেই সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হওয়া। বিপাকের হার বাড়ে, শরীরের প্রতিটি অঙ্গে অক্সিজেন পৌঁছয়।
শ্বাসযন্ত্র থাকে ফিট–যাঁরা ক্রনিক সর্দিকাশির সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কিছু ব্রিদিং এক্সারসাইজ খুব ভাল কাজ দেয়। ফুসফুসকে ভাল রাখে। শ্বাসের সমস্যা, হাঁপানির মতো রোগ দূর করে।
শরীরের প্রতিটি অঙ্গ থাকে ফিট–ব্রিদিং এক্সারসাইজ, ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ভাল রাখার এক্সারসাইজ, স্পাইনাল এক্সারসাইজ (ব্যাক বেন্ডিং, ফরওয়ার্ড বেন্ডিং, এক্সটেনশন ইত্যাদি), নানা রকম আসন শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে ভাল রাখতে সাহায্য করে। জটিল রোগের ঝুঁকি কমায়।
রোগ প্রতিরোধ বাড়ায়—নীরোগ শরীর মানেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। বর্তমানে যেভাবে সংক্রামক রোগের প্রার্দুভাব বাড়ছে, তাতে শরীরকে সবচেয়ে আগে শক্তপোক্ত করতে হবে। ইমিউনিটি বাড়লেই কাবু হবে যে কোনও সংক্রামক ব্যধি।
বিপাকের হার বাড়ায়—নিয়মিত যোগাসনে খিদে বাড়ে, হজমের সমস্যা দূর হয়। খাবারের পুষ্টি সারা শরীরে পৌঁছয়। হজমশক্তি বাড়াতে মুঠো মুঠো ট্যাবলেট খাওয়ার দরকার পড়ে না।
গাঁটে গাঁটে ব্যথা কমায়—আর্থ্রাইটিসের মোক্ষম দাওয়াই হল যোগ ব্যায়াম। তাছাড়া অফিসে সারাদিন একভাবে বসে থেকে শিরদাঁড়ায় ব্যথা, পিঠে বা পায়ের ব্যথায় আরাম পেতেও নিয়মিত যোগাসন করা উচিত। যেমন, ঘাড় আর কাঁধের কিছু ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে কাঁধের ব্যথা বা ঘাড়ের ব্যথা সারিয়ে নেওয়া যায়।
মানসিক চাপও কমবে যোগাসনে
মুড– মেজাজই আসল রাজা। যোগাসন সবচেয়ে ভাল মুড বুস্টার। যোগের একটা সুন্দর গালভরা নাম আছে— সাইকো-সম্যাটিক মেডিসিন। মানে, মন থেকে শরীরে যে সব রোগ জন্ম নেয়, তাদের মোক্ষম দাওয়াই যোগাসন।
স্ট্রেস ফ্রি—মেজাজ ফুরফুরে তো স্ট্রেস বা ক্লান্তি পালাবে বহুদূর। হাল্কা আসান, নিয়মিত প্রাণায়ামে মন থাকবে একেবারে চাঙ্গা।
অবসাদ, উদ্বেগ গায়েব—অফিসের টেনশন হোক, বা সাংসারিক চাপ, নিজের জন্য দু’দণ্ড সময় বার করে যোগাসন করেই দেখুন না, অবসাদ-উদ্বেগ উধাও হয়ে যাবে চোখের পলকে।
মনের উপর নিয়ন্ত্রণ—এর জন্য যোগাসনের চেয়ে ভাল ওষুধ আর কিছু হয় না। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে সঠিক মেডিটেশন করতে পারলে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ হয় জোরালো। আবেগ, অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব দেখা যায়।
পজিটিভিটি– দুশ্চিন্তা সরিয়ে জীবনকে সুন্দর করে দেখতে হলে মানসিক চাপ আগে কমাতে হবে। তার জন্য যোগাসন প্রয়োজন।
মনোযোগ বাড়ে—যে কোনও কাজেই মনোযোগ বাড়াতে যোগাসনের চেয়ে ভার টোটকা কিছু হয় না। স্মৃতিশক্তিও বাড়ে।
চঞ্চল মন শান্ত হয়—উদ্বেগ কমা মানেই মন শান্ত, ধীরস্থির হয়। চিন্তাভাবনাগুলো ডানা মেলতে পারে।