
আগে ভাবা হত হার্টের রোগ মাত্রই বুঝি বয়স্কদের একচেটিয়া। এখন সে দিন গেছে। আশি নয়, আঠাশেও কাবু করছে হার্টের ব্যামো। ইতিমধ্যেই যাঁরা হার্টের অসুখে আক্রান্ত, যাঁদের একবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে বা যাঁদের অপারেশন করে স্টেন্ট বসানো হয়েছে বা বাইপাস করা হয়েছে— এমন নয় যে, তাঁদের জীবন শেষ। শখ, আহ্লাদ, ভাল থাকার অধিকার তাঁদেরও রয়েছে। একটু নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন প্রয়োজন বটে, কিন্তু সব স্বাভাবিকতা বিসর্জন দিয়ে নয়। বাইপাস সার্জারি হয়ে যাওয়ার পরেও আজীবন মানুষ দিব্যি বাঁচেন।
হার্টে অসুখেও ভালভাবে বাঁচা যায়, যার জন্য সবচেয়ে আগে দরকার লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট। রোজকার জীবনে কিছু অভ্যাস বদলালে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললেই হার্ট ভাল রাখা যায়। হার্টের রোগীরাও সুস্থ ও চনমনে থাকতে পারেন।
হার্ট ভাল রাখতে লাইফস্টাইল মডিফিকেশন খুব জরুরি
১) ডায়েট: নিত্যদিনের ডায়েট সার্বিকভাবে প্রভাব ফেলে হৃদয়ের ওপর। তাই ডায়েট ঠিকঠাক রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ডায়েটে মূলত তিনটি খাবারের আধিক্য। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট। নিরামিষ খান বা আমিষ, হার্ট ভাল রাখতে যতটা সম্ভব কম কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট খাওয়া যায়, ততই ভাল। রান্নাবান্নায় কম তেলমশলা ব্যবহার করুন আর প্রোটিন খান বেশি করে।
২) শরীরচর্চা: জানি, ব্যস্ত সময়ে এক্সারসাইজ করার সময় একেবারেই নেই, কিন্তু এই অজুহাতে শরীর কিন্তু আরও অলস হয়ে পড়বে। আর তার সরাসরি প্রভাব পড়বে হার্টের ওপর। তাহলে উপায়? দৈনন্দিনের ব্যস্ততার মাঝেই খুঁজে নিন একটু সময়। অফিসের লিফ্ট ছেড়ে সিঁড়ি বেয়েই এগিয়ে যান। সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন আধঘণ্টা করে হাঁটুন, না জগিং করার দরকার নেই। এমনি সাধারণভাবেই হাঁটুন। যে পথ হেঁটেই অতিক্রম করা সম্ভব, যে কোনও প্রকার বাহন ছেড়ে সে পথে পা বাড়ান। একটানা বসে কাজ করলে মস্তিষ্কও অবসর চায় মাঝে মাঝে, তার চেয়ে এক–দু’বার উঠুন। একটু চলাফেরা করুন।
৩) অভ্যাস বদলান: হাজার স্ট্রেসের মাঝে সিগারেটে একটু সুখটান না দিলে যেন কোনও কিছুই ভাল লাগে না। এ ছাড়া সিগারেট না খেলে মাথা খোলে না, সকালে পায়খানা হয় না, স্ট্রেস রিলিফ হয় না— এ সব অজুহাত তো রয়েছেই। কিন্তু এই যে প্রচণ্ড বাজে অভ্যাসটিকে আপনি আপনার জীবনের অঙ্গ করেছেন, তা কিন্তু আখেরে আপনার হার্টের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। তাই হার্ট ভাল রাখতে ধূমপান ছাড়ুন আজই, এখনই।
৪) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: সময় বাঁচাতে উপায় এখন ফাস্টফুড, যেমন তাড়াতাড়ি তার রান্না, তেমনই তাড়াতাড়ি তাকে খেয়ে সাবাড় করে দেওয়া যায়। কিন্তু অতিরিক্ত তেলমশলা দেওয়া এই ফাস্টফুড হজম হয় না সহজে। শরীরে জমে থেকে এগুলোই পরে ফ্যাট ও চর্বি হয়ে ওজন বাড়ায় চড়চড়িয়ে। এদিকে আবার বাড়তি মেদ ঝরাতে শরীরচর্চারও অবকাশ নেই। কিন্তু বাড়তি ওজন ভীষণভাবে আঘাত হানে আমাদের হৃদয়ের ওপর। তাই ওজন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৫) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন: রেগুলার রুটিন চেকআপ করার অভ্যাস থাকলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা, সহজেই বোঝা যায়। সাধারণত দেখা যায় উচ্চ রক্তচাপ যাঁদের রয়েছে, তাঁরা সহজেই হার্টের অসুখের কবলে পড়েন। উচ্চ রক্তচাপ আরও নানান অসুখের সঙ্কেত হতে পারে, তাই রক্তচাপ ঠিক থাকছে কিনা সে বিষয়ে সবসময় খেয়াল রাখা উচিত।
৬) রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখুন: আগেই বলেছি, ডায়েটে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা মানে হৃদয়ের ওপর বাড়তি চাপ। রক্তে শর্করা বা সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরের প্রধান অঙ্গগুলিতে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। দীর্ঘদিন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে বা ডায়াবেটিসে ভুগলে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যেতে পারে, তাই রক্তে যাতে কার্বোহাইড্রেট বেড়ে না যায়, সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
৭) মানসিক চাপ কমান: রোজকার জীবন নিয়ে যত না বেশি মাথাব্যথা হয়, বর্তমানে তার চেয়ে বেশি হয় মনে ব্যথা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের মানসিক চাপের শেষ নেই। প্রতিযোগিতার ইদুরদৌড়ে ছুটতে ছুটতে মানসিকভাবে আমরা হামেশাই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। চাইলেও কখনও কখনও আমরা সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। অথচ মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অসুখের প্রবণতাও বাড়তে পারে এতে। হৃদয় ভাল রাখতে মানসিক চাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন, স্ট্রেসমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।