স্মৃতি ফিরবে অ্যান্টিবডি থেরাপিতে? অ্যালঝাইমার্সের চিকিৎসায় নতুন পথের হদিশ

গুড হেলথ ডেস্ক

সামগ্রিক ভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ, ভাবনা চিন্তার অসুবিধা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা ইত্যাদি একাধিক সমস্যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ডিমেনশিয়া বলা হয়। সবচেয়ে বহুল ও দূরারোগ্য ডিমেনশিয়ার উদাহরণ হল অ্যালঝাইমার্স (Alzheimer’s disease)। শুধু ভারত বলেই নয়, গোটা বিশ্ব জুড়েই বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ। অ্য়ালঝাইমার্সের রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ওষুধ, কাউন্সেলিংয়ে রোগীর মানসিক স্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় মাত্র। স্মৃতি পুরোপুরি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। অ্যালজাইমার্সের চিকিৎসায় এখন একাধিক নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে ওষুধ, টিকার। এবার আরও একটি নতুন পথের হদিশ দিলেন হাউস্টনের ম্যাকগভার্ন মেডিক্যাল স্কুলের বিজ্ঞানীরা।

ম্যাকগভর্ন মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক বিজ্ঞানী রবার্ট এ তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন অ্য়ান্টিবডি থেরাপিকে এবার মানসিক রোগের চিকিৎসাতেও কাজে লাগানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শ্বাসযন্ত্রের যে কোনও রোগ সারাতে অ্য়ান্টিবডি থেরাপির প্রয়োগ করছেন বিজ্ঞানীরা। মানসিক রোগের ট্রিটমেন্টেও লিম্ফোসাইট কোষ নিয়ে নতুন নতুন থেরাপির উদ্ভাবন হচ্ছে। অ্য়ালজাইমার্স সারাতে পারবে এমন অ্যান্টিবডির খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

Antibody for Alzheimer's Disease

TREM2 TVD-lg নামে এই অ্যান্টিবডি থেরাপির ট্রায়াল শুরু হয়েছে। টেক্সাস থেরাপিউটিক ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্তিষ্কের কোথায় বাধা তৈরি হচ্ছে (Alzheimer’s disease), কোন অংশে স্মৃতিলোপ পাচ্ছে তার খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে এই অ্যান্টিবডি থেরাপির প্রয়োগ করা হবে।

মানুষের মস্তিষ্ক রাসায়নিক বা কেমিক্যালে ভরা। ধীরে ধীরে মস্তিস্কের সেলগুলি নষ্ট হতে থাকে। তখন কোনও মানুষ বা জায়গা চিনতে পারা যায় না। মস্তিস্কের সংরক্ষণ প্রণালী নষ্ট হয়ে যায়। তখন দৈনন্দিন জীবনে রোজকার ঘটনাগুলোও মানুষ ভুলতে শুরু করে। অতীত পুরোপুরি ঝাপসা হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক সময় মস্তিষ্কে অতিরিক্ত কিছু প্রোটিন জমাট বাঁধলে তার থেকে হয় অ্যালঝাইমার্স রোগ (Alzheimer’s disease)। এর জেরে বয়স বাড়ার সঙ্গে কমতে থাকে প্রতিরোধশক্তি। ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকে স্মৃতিশক্তি।

অ্যালঝাইমার্সের ঝুঁকি কমবে, কী কী অভ্যাস বদলাবেন? ডায়েট কেমন হবে?

Antibody-based Therapies

এর পেছনে অনেক কারণও আছে। রাতে কম ঘুম হলে, ইনসমনিয়া বা স্লিপিং ডিসঅর্ডার থাকলে মস্তিষ্কে তার প্রভাব পড়ে। সারাদিন কাজের পরে রাতে মস্তিষ্ক বিশ্রাম করে, নিজের মেরামতির কাজ সারে। সে সময় যদি মস্তিষ্ককে সজাগ করে রাখা হয় তাহলে সেই মেরামতির কাজ বাধা পায়। সারাদিনের টক্সিন পরিষ্কার করার বদলে মস্তিষ্কেই ময়লা জমতে থাকে। অনেকের রাতের দিকে রক্তচাপ বেড়ে যায়, একে ডাক্তারি ভাষায় বলে ‘রিভার্স ডিপিং’, তেমন হলে মস্তিষ্কে এর প্রভাব পড়ে। তখন স্মৃতিনাশের সমস্যা দেখা দেয়। যার পরিণাম অ্যালঝাইমার্স।

৬৫ বছরের বয়সি ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও সম্প্রতি পঞ্চাশের কোঠায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যেও বাড়ছে এই রোগের প্রবণতা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য সুস্থ জীবন যাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসই হতে পারে এই রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। কাজেই নিজের বা প্রিয়জনের মধ্যে এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে কোনওমতেই নিরুত্তাপ থাকা চলবে না। পরামর্শ নিতে হবে বিশেষজ্ঞদের।