ধূমপান না করেও হৃদরোগ হতে পারে! বায়ুদূষণ ছারখার করছে হার্ট, দাবি গবেষণায়

গুড হেলথ ডেস্ক

বায়ু দূষণ শুধু ফুসফুসকে ছাড়খাড় করে না, দফারফা করে দেয় হার্টেরও (Air Pollution)।  বিষবাষ্পে হৃদস্পন্দনের গতিই বদলে যেতে পারে, বাড়তে পারে হৃদরোগের ঝুঁকি। ধূমপান না করলেও হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ছে। এর একমাত্র কারণ বাতাসে বাড়তে থাকা বিষাক্ত গ্যাস। জার্মানির একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, যাঁরা ধূমপান করেন তাঁরা যতটা ঝুঁকিতে রয়েছেন, অধূমপায়ীরা অনেক বেশি হাই-রিস্কে রয়েছেন।

Exposure To Air Pollution Increases Heart Risk - Space Coast Dailyবার্লিন ব্র্যান্ডেনবার্গ মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্র্যাকশন রেজিস্ট্রির গবেষক ডা. ইনসা দে স্টকবার্গার তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, বেনজিন, সালফার ডাই অক্সাইড, ওজোন ও আরও কয়েকটি বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে এলে কার্ডিয়াক অ্য়ারেস্টের ঝুঁকি বাড়ে (Air Pollution)। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের গতি বেড়ে যায়। রক্তবাহী ধমনীতে চর্বি জমে এই রোগ হয়। দূষণ এই রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া হৃদস্পন্দনের ছন্দ বদলে দিতে পারে দূষণ। বাতাসে ভাসমান বিষাক্ত কণা শরীরে ঢুকতে থাকলে হার্টরেট বেড়ে যেতে পারে, ছন্দ হারাতে পারে হার্ট।

গবেষক বলছেন,অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা সম্প্রতি বেশ বেড়েছে। ইদানীং হার্টের সমস্যা নিয়ে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই কমবয়সি। জিনগত কারণে বা জন্মগত ভাবে হার্টের অসুখ রয়েছে এমন মানুষ ছাড়া যাঁদের পরে কোনও কারণে হার্টের অসুখ ধরছে, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে ২০-৪০-এর মধ্যের তরুণ-তরুণীরা।

গবেষণা বলছে, গাড়ি, কলকারখানার ধোঁয়া তো বটেই, রান্নার গ্যাস , উনুনের ধোঁয়াও হার্টের জন্য ক্ষতিকর। দূষিত পরিবেশে বেশিদিন থাকলে ১০০ জনের মধ্যে ৩ জনেরই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। বাতাসে ভাসমান পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম বা সূক্ষ্ম ভাসমান কণা) হার্টের সমস্যার (Air Pollution) অন্যতম কারণ। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে থাকে। দূষণ বাড়লে যে শ্বাসরোগ এবং ফুসফুসের দুরারোগ্য ব্যাধি বাড়তে পারে, এ কথা বহু দিন ধরেই বলা হচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বহু গবেষণায় উঠে এসেছে, শুধু ফুসফুস বা শ্বাসনালী নয়, বায়ুদূষণ শরীরের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপরেই প্রভাব ফেলে। তার ফলে ক্যানসার, হৃদরোগ এমনকি অবসাদও বাড়তে পারে।গবেষণা বলছে, বায়ুদূষণের মাত্রা যদি প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম কমানো যায়, তা হলে শ্বাসরোগ, হৃদরোগের মাত্রা তিন শতাংশ কমতে পারে।

 air pollution

পিএম ছাড়াও দূষিত (Air Pollution) বাতাসে থাকে নাইট্রোজেন, সালফার ও কার্বন মনোক্সাইড। এই রাসায়নিকগুলি মানুষের শরীরের রক্তবাহী ধমনীতে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের গতি বাড়িয়ে দেয়। ফলে হার্টের ধমনীতে প্লাক বা কোলেস্টরলের স্তর জমতে থাকে। হার্ট অ্যাটাকের এটিও বড় কারণ।

দূষণ থেকে হার্টকে বাঁচাতে 

দূষিত জায়গায় বেশি যাবেন না। প্রচণ্ড ধোঁয়া-ধুলো আছে এমন জায়গা এড়িয়ে চলুন।

গাড়ির ধোঁয়া থেকে বাঁচতে মাস্ক অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় শুধু ভাইরাস এড়ানোর জন্য নয়, দূষণ এড়াতেও মাস্ক পরা আবশ্যিক।

air quality

পুষ্টিকর ডায়েটে থাকতে হবে। দানাশস্য়, ফল, শাকসবজি, কম চর্বিযুক্ত খাবার, ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।

দুর্ভাগ্যবশত আমরা আমাদের বাড়ির ভিতরে নিজেরাই বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, ধূমিপান বা সিগারেট বায়ু দূষণের অন্য়তম কারণ। তাই ধূমপান এড়িয়ে চলুন।

নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস রাখুন। ভোরবেলা গাছপালা ঘেরা জায়গায় হাঁটুন। বিশুদ্ধ অক্সিজেন হার্ট ভাল রাখবে।