ডায়াবেটিস থাকলে ডেঙ্গি প্রাণঘাতী হতে পারে, মশাবাহিত রোগ কি রক্তে শর্করা বাড়াচ্ছে?

ডায়াবেটিস থাকলে ডেঙ্গির (Dengue) তীব্রতা আরও বাড়ছে, এমনটাই দাবি করছেন ডাক্তারবাবুরা। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, আগে থেকেই ডায়াবেটিস (Diabetes) আছে যাঁদের, তাঁদের যদি ডেঙ্গি হয় তাহলে রোগ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। শুধু তাই নয়, ডেঙ্গি ভাইরাসের সংক্রমণ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে বলেও দাবি করছেন ডাক্তাররা। কাজেই প্রি-ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রেও ডেঙ্গি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

ডেঙ্গি (Dengue) হল একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। এডিস ইজিপ্টাই মশার দ্বারা মানুষের শরীরে এর সংক্রমণ ঘটে। ডেঙ্গির কারণে যে সব লক্ষণ দেখা দেয় তার অন্যতম হল, সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা-সহ জ্বর, সঙ্গে বমি বমি ভাব, চোখের পিছনে ব্যথা এবং সারা শরীরে র‌্যাশ। বর্তমান সময় করোনার মতোই ডেঙ্গি ছড়াতে শুরু করেছে। এ রাজ্যে সংক্রমণের রেখচিত্রটা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, ডেঙ্গি তার চরিত্র বদলাচ্ছে। বদল আসছে ডেঙ্গু ভাইরাসে, ফলে আরও মারাত্মক হয়ে উঠছে সংক্রমণ।

ডায়াবেটিস থাকলে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে ডেঙ্গি

ডেঙ্গি (Dengue) ভাইরাস বহনকারী মশা মানুষের শরীরে কামড়ালে ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। ভাইরাস প্রথমে লালার মাধ্যমে ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে। পরে শ্বেত রক্তকোষে ঢোকে। সেই কোষ শরীরের সর্বত্র চলাচল করলে সেগুলির ভিতরে এই ভাইরাস প্রজনন চালিয়ে যায়। প্রবল সংক্রমণে শরীরের ভিতরে ভাইরাসের সংখ্যা বাড়ে। ফলে নানারকম সমস্যা শুরু হয়।

পুণের কার্ডিওমেট ক্লিনিকের ডায়াবেটোলজিস্ট ও জেনারেল ফিজিশিয়ান ডা. বৈশালী পাঠক বলছেন, মশা ডায়াবেটিক আর নন-ডায়াবেটিকের মধ্যে ফারাক করতে পারে না। কিন্তু দেখা গেছে, মশার কামড়ে যদি শরীরে ভাইরাসের সংখ্যা বাড়ে বা ভাইরাল লোড বেশি হয়, তাহলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। প্রি-ডায়াবেটিক রোগী বা যাদের রক্তে শর্করা বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে তাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গি মারাত্মক আকার নিতে পারে। আর যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস আছে তাদের ডেঙ্গি হলে এর প্রভাবে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া (প্লেটলেট কমে যাওয়া) হতে পারে। ফলে রক্তে প্লেটলেট সাঙ্ঘাতিক হারে কমতে থাকবে। সেই সঙ্গে হাইপারগ্লাইসেমিয়া (হাই ব্লাড সুগার) দেখা দেবে। রোগীর অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাবে। 

বয়সকালে হাঁটু প্রতিস্থাপনের ঝক্কি না চাইলে হাড়ের যত্ন নিন, অস্টিওপোরোসিস দিবসে সচেতনতা বাড়ুক

এখন ডেঙ্গি (Dengue) হলে ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার ও শক সিন্ড্রোম বেশি দেখা যাচ্ছে। হেমারেজিক ফিভারের ক্ষেত্রে  রক্তের মধ্যে প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার সংখ্যা কমতে থাকবে এবং রক্তের ঘনত্ব বাড়বে। যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকবে। আর ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে দেহে জল শূন্যতা তৈরি হবে। সঙ্গে সঙ্গে পাল্স রেট অনেকটা বেড়ে যাবে ও রক্তচাপ কমে যাবে। শরীর ঠান্ডা হতে শুরু করবে। এই দুটোই ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীদের ডেঙ্গির উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। দিনে অন্তত ৩ লিটার জল ও তরল পানীয় খেতে হবে।

তাছাড়া দেখা গেছে, ডেঙ্গি রোগীদের যে স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছে তার সাইড এফেক্টসে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ছে। ফলে ডায়াবেটিস নেই যাদের তাদেরও ঝুঁকি বাড়ছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য জটিলতাও দেখা দিচ্ছে।