
বর্ষাকাল এলেই সাপের আনাগোনা বেড়ে যায়। বিশেষ করে গ্রামবাংলায় এই সময় সাপের ছোবলে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ে। বিষধর সাপ কাটলে (Snake Bite) তার চিকিৎসা অতি দ্রুত হওয়া দরকার। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায়, সাপে কাটা রোগীকে দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখা হয়। নানারকম কুসংস্কারের বশে তার চিকিৎসা করার চেষ্টা হয়, ফলে রোগীর অবস্থা আরও বিগড়ে যায়। তাছাড়া গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো আছে ওঝা-গুনিনের পরামর্শ ও হরেক রকম আচার। এতে রোগী সুস্থ হওয়ার বদলে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে।
সর্পবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষধর হোক বা বিষ না থাকুক (Snake Bite), সাপের ছোবল খেলে ভয়েতেই রোগীর মরমর অবস্থা হয়। অতিরিক্ত আতঙ্কের কারণে রোগীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি হয়। সঠিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে ভুল পদক্ষেপ করে ফেলেন অনেকেই। হাসপাতালে যেতে দেরি হয়ে যায়, ফলে বিপদ ঘনিয়ে আসে অচিরেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপে কাটা রোগীকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হল দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। এখন প্রায় সব হাসপাতালেই সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার মতো পরিকাঠামো আছে। জেলাস্তরেও আছে। শুধু সঠিক সিদ্ধান্ত, সময়ের মধ্য়ে পদক্ষেপ নিলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। তার আগে রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু সেরে রাখলে বিপদের ঝুঁকি আরও কমে।
সাপে কাটলে আতঙ্ক না করে কী কী করতে হবে?
১) সাপে কাটা (Snake Bite) রোগীকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘এএসভি’ (অ্যান্টি স্নেক ভেনম) দিতে হবে। বেশি দেরি হলে রোগীর প্রাণ সংশয় হতে পারে।
২) গোখরো, শঙ্খচূর, কালাচের মতো সাপ কামড়ালে বেশি দেরি করা চলবে না। অ্যান্টি স্নেক ভেনম নিতে যত সময় লাগবে তার আগে ‘ভ্যারেসপ্লেডিব মিথাইল’ ট্যাবলেট খেয়ে নিলে ঝুঁকি এড়ানো যাবে।
৩) ডাক্তাররা বলছেন, বিষধর সাপে কামড়ানোর ১০০ মিনিটের মধ্যে পরিমাণ মতো ওষুধ দিলে রোগীকে বাঁচানো যেতে পারে। ওটাই প্রাইম টাইম। তাই একেবারেই দেরি করা চলবে না।
সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় তৈরি হবে ভিআরটি টিম, ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী আইসিএমআর
৪) সাপে কাটার পরে অনেক ক্ষেত্রে কুসংস্কারবশত ওঝা, গুণিনের কাছে নিয়ে সময় নষ্ট করেন রোগী বা তাঁর পরিবারের লোকেরা। এমন করলে বিপদ আরও বাড়বে।
৫) চন্দ্রবোড়ার মতো সাপের কামড়ে প্রতি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। ফলে, সময় নষ্ট হলে তা মারাত্মক হতে পারে। এক মিনিট নষ্ট হলে কিডনি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা এক শতাংশ বেড়ে যায়।
৬) যে জায়গায় সাপ ছোবল দেবে শরীরের সেই অংশটা বেশি নাড়াচাড়া করবেন না। ক্রেপ ব্যান্ডেজ বা হাল্কা কাপড় দিয়ে ভাল করে বাঁধা যেতে পারে। ঠিক যে ভাবে হাত-পা ভেঙে গেলে ব্যান্ডেজ করা হয়। বাঁধন এমনভাবে দিতে হবে, যেন তা খুব আঁটসাঁট বা ঢিলে কোনওটাই না হয়। খুব বেশি শক্ত করে বাঁধলে আক্রান্ত অঙ্গে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেহেতু মাংসপেশির সংকোচনে বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তাই সাপে কাটার জায়গা বেশি নড়াচড়া করা উচিত নয়।
পিঠে বা পায়ে সাপে কামড়ালে রোগীকে শুইয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বেশি হাঁটাচলা করা রোগীর পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।
৭) সাপের ছোবলের জায়গায় ক্ষতের মুখ ভাল করে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে মুছিয়ে দিতে হবে। ক্ষতের জায়গায় জরিবুটি, গোবর বা ওই জাতীয় জিনিস লাগালে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করবে।
বিষধর সাপে কাটলে কী কী লক্ষণ দেখা দেবে
রাতের বেলা চলতে ফিরতে গিয়ে বা ঘুমের মধ্যে সাপে ছোবল বসালে রোগী প্রথমটায় বুঝতে পারেন না। শরীরে জ্বালাপোড়া অনুভূতি হওয়ার পরে কেন এমন হচ্ছে তা বুঝতেই সময় পেরিয়ে যায়। তাই সাপে ছোবল বসিয়েছে কিনা তার কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখে সতর্ক হতেই হবে।
ক্ষতস্থানে দুটি দংশনের চিহ্ন থাকবে।
ক্ষতস্থান থেকে অনবরত রক্তপাত হবে।
ক্ষতের জায়গাটা ফুলে উঠবে।
ঠোঁক গিলতে, খাবার খেতে সমস্যা হবে।
মাথা ঘোরা, দৃষ্টি ঝাপসা, শ্বাসকষ্ট শুরু হবে।
ঘুম ঘুম ভাব আসবে। হাত-পা অবশ হওয়া, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেবে।