
চুলের সমস্যায় আমরা অনেকেই জেরবার। চিরুনি চালালেই প্রতিদিন গোছা গোছা চুল উঠছে (Hair Fall)? এই বর্ষায় তো চুল পড়ার সমস্যা আরও বেড়েছে। মাথায় চিরুনি চালালেই চুল ঝরছে। চুল ‘হাইগ্রস্কপিক’ নেচারের, তাই বর্ষায় বাতাসের আর্দ্রতা শুষে নিয়ে নেতিয়ে পড়ে। ফলে বাজে গন্ধ, নানান সংক্রমণ, স্ক্যাল্পে লাল দানার মতো র্যাশ, খুশকি। সব মিলিয়ে চুল ওঠার চূড়ান্ত সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই।
সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও আছে। তবে প্রথমেই ‘চুল উঠছে’ (Hair Fall) এই দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে। তারপর চুলের যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে। বাজারচলতি বেশি কেমিক্যাল দেওয়া হেয়ার জেল বা ক্রিমের বদলে ঘরোয়া উপায়েই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
চুল কেন পড়ে (Hair Fall)?
চুল পড়ার অজস্র কারণ আছে। হরমোনের সমস্যা, প্রোটিনের ক্ষয়, স্ট্রেস, ভিটামিনের অভাব, শারীরিক ব্যাধি, সংক্রমণজনিত কারণ, বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি। তাছাড়া এখনকার লাইফস্টাইল, জাঙ্ক ফুড সবই রয়েছে চুল ওঠার পেছনে। মেয়েদের পিরিয়ডের সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ট্রোম বা হরমোনের সমস্যা দেখা দিলে তার থেকে চুল পড়তে পারে। রক্তে হিমোগ্লোবিন আর ফেরিটিনের মাত্রা কমে গেলে বা থাইরয়েডের গোলমাল থেকে চুল উঠতে পারে। আবার বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও চুল ঝরতে পারে, যেমন ক্যানসারের ওষুধ খেলে বা কেমোথেরাপি চললে চুল উঠে যায়।
ছেলে ও মেয়েদের চুল পড়ার (Hair Fall) কারণ আলাদা। মেয়েদের মেনোপজের পরে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে। আবার পিরিয়ডের সমস্যা থাকলেও চুল ঝরতে পারে। অ্যানিমিয়া থাকলে চুল পড়া বেড়ে যায়। আবার থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য হলেও চুল ওঠে। সেক্ষেত্রে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট করানো দরকার।
চুলের যত্ন নেবেন কী করে?
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের গোড়ার কথা
১) সপ্তাহ তিন দিন গরম তেল দিয়ে চুলের ভিতর ও মাথার তালু মাসাজ করুন৷ তেল হল চুলের খাবার৷ তাই চুল শুধু বাড়তেই নয় চুল পড়া বন্ধ করতে, চুলকে ভাল রাখতেও তেল দরকার।
২) ভিজে চুল না বাঁধার চেষ্টা করুন। চিরুনির দাঁড়া হবে মসৃণ। চিরুনি ৩-৪ দিন অন্তর পরিষ্কার করাটাও বাধ্যতামূলক।
৩) চুলের উপযুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা খুবই দরকার। যা হাতের সামনে পেলাম তাই ব্যবহার করে নিলাম, এই মানসিকতা বদলানো দরকার (Hair Fall)।
৪) নিয়ম করে চুল ট্রিম করুন৷
৫) চুলের ডগা ফেটে গেলে চুল রুক্ষ হয় এবং চুল বাড়তে সমস্যা হয়৷ ফলে চুলের ওই অংশ কেটে বাদ দিলে চুলের বৃদ্ধিতে কোনও বাধা থাকবে না৷
৬) ভিজে চুল তোয়ালে দিয়ে যতটা সম্ভব শুকিয়ে নিয়ে তবেই চুল আঁচড়াতে হবে।
৭) মাসে ২ টো ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট অত্যন্ত জরুরি। ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ অন্তর ‘এন্ডস্ লক্’ এই বিশেষ কাট্টি করতেই হবে। এতে চুলের লেন্থ ছোটো হয় না, কিন্তু চুল ওঠার সমস্যা ৪০-৫০% কমে যায়।
স্ক্যাল্পে গন্ধ, খুশকি দূর করতে কী করবেন
প্রতিদিন ‘অ্যান্টি ফাঙ্গাল’ বা ‘ড্যানড্রাফ অয়েন্টমেন্ট’ (হার্বাল) ১:১ উষ্ণ জলের সাথে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে সারা রাত লাগিয়ে সকালে ‘অ্যান্টি ড্যানড্রাফ বা হেয়ার লস্’ শ্যাম্পু দিয়ে ওয়াশ করে একই গ্রুপের কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
ডিমের কুসুমও আপনার চুলকে বাড়তে সাহায্য করে৷ ডিমের কুসুমে থাকে ভিটামিন ই৷ ফলে চুলকে গোড়া থেকে শক্ত করে ডিমের কুসুম৷
বাড়িতে তৈরি করা ফ্রুট প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভাল করে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে শোওয়া দরকার৷ এতে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ভাল হয়৷
রুক্ষ চুলের যত্ন নিতে
দুধের সর, ফ্রেশ ক্রিম আর মধু সমপরিমাণে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। পুরো চুলে লাগিয়ে আধঘণ্টা পরে ড্রাই হেয়ারের শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। চুলের পুষ্টির জন্য কী ধরনের হেয়ার সিরাম ব্যবহার করবেন সেটা বিশেষজ্ঞের থেকে জেনে নেবেন।