Heart Failure: বাথরুমে বেশি হার্ট অ্যাটাক হয় কেন? স্নানের সময়েই থেমে যায় হৃদস্পন্দন

গুড হেলথ ডেস্ক

বুকের বাঁ দিকে চিনচিনে ব্যথা। সারা গায়ে বিজবিজে ঘাম। আচমকা বুক ধড়ফড়, অজ্ঞান। তারপর সব শেষ। হার্ট অ্যাটাক (Heart Failure) জানান দিয়ে আসে না। শুধু এর কিছু লক্ষণ আগে থেকে চিনতে হয়। বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায়, ভোরে ঘুমের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে। বয়স্ক হোক বা কমবয়সী এই প্রবণতা ভারতীয়দের মধ্যেই বেশি। আরও একটা ব্যাপার দেখা যায় যে বাথরুমে গিয়ে হঠাৎই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু। বাথরুমে স্নান করতে গিয়ে অজ্ঞান, ডাকাডাকিতেও সাড়া নেই। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা গেল নিথর শরীর পড়ে রয়েছে বাথরুমের মেঝেতে। এমন ঘটনা আকছাড়ই ঘটে।

বাথরুমে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক কেন বেশি হয় তার কিছু ব্য়াখ্যা দিয়েছেন কার্ডিওলজিস্টরা। ফর্টিস হাসপাতালের কার্ডিওলজি ও ইলেকট্রোসাইকোলজি বিভাগের ডিরেক্টর ও ইউনিট হেড ডক্টর নিত্যানন্দ ত্রিপাঠী বলছেন, হার্ট অ্যাটাক বলে কেয় আসে না। হার্ট হল শরীরের পাম্পিং মেশিন। নির্দিষ্ট ছন্দে সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হয়ে সারা শরীরে রক্ত পৌঁছে দেয়। যদি হার্টেই অক্সিজেনযুক্ত রক্ত না পৌঁছয় বা রক্তজালকগুলিতে ব্লাড ক্লট করতে থাকে তাহলে হৃদস্পন্দনের ক্রিয়াই বিগড়ে যায়। তখন বলা হয় হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ভারতীয়দের মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় বাথরুমেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছে রোগী। অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গিয়েই অ্যাটাক এসেছে।

cardiac arrests in bathroom

কেন এমন হয়? ডাক্তারবাবু বলছেন, দিনে অন্তত ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা বাথরুমে কাটান লোকজন। বাথরুমে গিয়েই বেশি চিন্তাভাবনা করেন লোকজন। দুশ্চিন্তা বা টেনশন করার ওটাই মোক্ষম জায়গা। এর ফলেও মনের ওপর চাপ বাড়ে। তাছাড়া আরও কারণ আছে। ডাক্তারবাবু বলছেন, বয়স্করা অনেক সময় ঘুম থেকে উঠেই তড়িঘড়ি বাথরুমে ছোটেন। বিছানা ছাড়ার পরে শরীরের তাপমাত্রা সহনশীল মাত্রায় না আসার আগেই বাথরুমে গিয়ে আচমকা গায়ে বা মাথায় জল ঢাললে সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে জোরে চাপ দিয়ে মলত্যাগ করার অভ্যাস থাকে অনেকের। ভারতীয় টয়লেট ব্যবহার করার সময়, এই অতিরিক্ত চাপ হার্টে গিয়ে প্রভাব ফেলে। যদি আগে থেকেই হার্ট দুর্বল হয় তাহলে আচমকাই কার্ডিয়াক অ্য়ারেস্ট আসতে পারে।

অনেকেই আছে যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তাঁদের স্নানের সময় জলের তাপমাত্রা মেপে স্নান করা উচিত। স্নানের সময় হঠাৎ ঠান্ডা মাথায় ঢালতে শুরু করলে সিম্পেথেটিক টোন বেড়ে যায় ফলে ত্বকের তাপমাত্রা কমে যায়। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তখন হার্ট অ্যাটাক আসতে পারে।

Heart Attack In Bathrooms

সাবধান থাকুন

হার্ট দুর্বল হলে বা অন্যান্য কোমর্বিডিটি থাকলে একটু সতর্ক হতে হবে।

স্নান করার সময় প্রথমেই মাথায় হুড়হুড় করে জল ঢালবেন না। আগে পায়ের পাতা, হাত ভেজান।

গায়ে জল দিন, তারপর ধীরে ধীরে মাথায় জল ঢালুন।

স্নানের প্রক্রিয়া হবে নীচ থেকে ওপরে, আগে পা ভেজান তারপর সবা শেষে মাথা।

হাইপারটেনশন, হাই কোলেস্টেরল ও মাইগ্রেন থাকলে অবশ্যই এই পদ্ধতি মেনে চলুন।

বিছানা ছাড়ার পরেই সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমে ছুটে যাবেন না। আগে ৩০ সেকেন্ড বিছানায় বসুন, পা যেন মাটিতে ঠেকে থাকে। শরীরকে ধাতস্থ হতে দিন। এতে মাটি ও শরীরের মধ্যে সংযোগ তৈরি হবে, রক্ত সঞ্চালন ভাল হবে। তারপর টয়লেটে যাবেন।

সারা রাত ঘুমের পরে শরীরের তাপমাত্রা ও মানসিক স্থিরতায় বদল আসে। সবকিছুকেই আগে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে যেতে হবে। তারপর দৈনন্দিন কাজ শুরু করবেন।

Heatwave Eye Care: চড়া রোদে ক্ষতি হচ্ছে চোখেরও! রোজ রাস্তায় বেরলে নিয়ম মানুন

heart attack in bathroom

আপনি যদি স্নানের সময় দীর্ঘক্ষণ বাথটাবে থাকেন তাহলেও ধমনীতে চাপ পড়তে পারে।  আপনি যদি ভারতীয় টয়লেট ব্যবহার করেন, তবে একই জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। পেট পরিষ্কার করার জন্য বেশি চাপ দেবেন না। কোষ্ঠকাঠিন্য় থাকলে অনেকেই জোর করে চাপ দেন, এর প্রভাব পড়ে হার্টে।

বাথরুমে স্নানের সময় জলের তাপমাত্রা খেয়াল রাখুন। হার্টের রোগী, ডায়াবেটিস বা কিডনির রোগ থাকলে ডাক্তাররা বলেন খুব গরম জল বা কনকনে ঠান্ডা জলে স্নান না করতে। বরং সবসময় উষ্ণ জলে স্নান করা ভাল।

মনে রাখবেন, কোনওভাবেই বিছানা থেকে উঠে তাড়াহুড়ো করবেন না। বয়স্করা বিছানার পাশে জল রাখুন। ঘুম থেকে উঠে আগে জল খান, তারপর ধীরে সুস্থে হেঁটে বাথরুমে যান। দেখবেন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কমে গেছে।