
বেশি চিনি কী কী ক্ষতি করে বাচ্চাদের? বাজারচলতি হেলথ ড্রিঙ্কগুলো কতটা বিপজ্জনক
গুড হেলথ ডেস্ক
মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসেন কি? রান্নাবান্নায় মুঠো মুঠো চিনি ঢালেন। প্রসেসড খাবারেও মিষ্টির (Sugar) বাড়বাড়ন্ত। শিশুরাও খাচ্ছে এই খাবার। আর চরম ক্ষতিটা হচ্ছে এখানেই। এমনিতেই বাঙালি মিষ্টিবিলাসী। পুজো-পার্বণে মিষ্টি ছাড়া চলেই না। এই অতিরিক্ত মিষ্টিপ্রেমই সর্বনাশের কারণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের। বাবা-মায়েরা বাজার থেকে কিনে এনে হেলথ ড্রিঙ্ক খাওয়াচ্ছেন বাচ্চাদের। এটা না জেনেই যে, হেলথ ড্রিঙ্কগুলোতে (Health Drinks) কী সাঙ্ঘাতিক পরিমানে চিনি থাকে। আর চরম ক্ষতিটা হচ্ছে এখানেই। বিজ্ঞাপনী চমকে ভুলে বাচ্চার পুষ্টি-বৃদ্ধির কথা ভেবে হেলথ ড্রিঙ্ক খাইয়ে আরও সর্বনাশ হচ্ছে। কম বয়স থেকেই ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ সহ নানা ধরনের অসুখ ধরে যাচ্ছে বাচ্চাদের।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বর্নভিটা নিয়ে সতর্ক করেছে। হু-র শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন বলেছেন, বর্নভিটায় যে পরিমাণ চিনি থাকে তা বাচ্চার শরীরের জন্য চরম ক্ষতিকর। প্রতি দু’চামচ বর্নভিটায় ২৪ গ্রামের বেশি চিনি থাকে, প্রতি ১০০ গ্রামে শর্করার পরিমাণ ৭৩.১ গ্রাম। রোজ রোজ এই হেলথ ড্রিঙ্ক খাওয়ালে চরম ক্ষতি হতে পারে আপনার ছোট্ট সোনার।
চিনি কতটা ক্ষতিকর বাচ্চাদের জন্য?
চিকিৎসকরা বলছেন, দু’বছরের কম বয়সি শিশুদের খাদ্য তালিকায় কোনও রকম চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার রাখা একেবারই উচিত নয়। এই বয়সে বেশি চিনি খেলে পরবর্তী কালে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং টাইপ-টু ডায়াবিটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই বয়সি শিশুদের শর্করা যুক্ত খাবার খাওয়ালে তা তাদের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
বাজারের প্যাকেটজাত সিরাপ এবং ফলের রসে অতিরিক্ত শর্করা থাকে। থাকে কেক, পেস্ট্রি, চকলেট, বিস্কুটেও। এ সব শিশুদের খাদ্যতালিকায় একেবারেই থাকা উচিত নয় বলে মনে করছেন পুষ্টিবিদরা। জন্মের পর প্রথম চব্বিশ মাসে শিশুদের সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পুষ্টি ও ক্যালোরি প্রয়োজন হয়। যদিও অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবারগুলি ক্যালোরি সমৃদ্ধ, তবে তাতে পুষ্টির অভাব রয়েছে।
বর্নভিটা নিয়ে সতর্ক করছে হু, প্রতি চামচে বাচ্চার শরীরে কতটা চিনি ঢুকে বিপদ ঘটাচ্ছে জানুন মায়েরা
যে সব শিশুর প্রাথমিক বছরগুলিতে উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ানো হয়, তাদের অল্প বয়সে স্থূলতা, কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং দাঁতের ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মস্তিষ্ক বা ব্রেনে দু’রকমের প্রভাব ফেলছে চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার। প্রথমত, মস্তিষ্কে এক বিশেষ রকমের প্রোটিনের কার্যকারিতা বন্ধ করে দিচ্ছে। এই প্রোটিন ব্রেনে ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ রুখতে সাহায্য করে, পাশাপাশি স্মৃতিনাশের ঝুঁকি কমায়। এই প্রোটিনের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে চিনি উল্টে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। নানারকম নিউরোলজিক্যাল ডিজিজ বা স্নায়বিক রোগের সম্ভাবনা বাড়ছে।
অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেলে অন্ত্রে প্যারাব্যাকটেরয়েডের জন্ম হয়। এরা সংখ্যায় বাড়ে। আর এই ব্যাকটেরিয়াদের সংখ্যা বাড়লে তার প্রভাব পড়ে খাদ্যনালিতে। প্যারাব্যাকটেরয়েডরা চিনি হজম করতে পারে না। কিন্তু রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়লে এদের বাড়বাড়ন্ত হয়। এই ব্যাকটেরিয়ারা মস্তিষ্কের প্রদাহের কারণ। শিশুদের মস্তিষ্কের বৃদ্ধি-গঠন, বুদ্ধির বিকাশে বাধা তৈরি করে।
বর্নভিটা নিয়ে সতর্ক করছে হু, প্রতি চামচে বাচ্চার শরীরে কতটা চিনি ঢুকে বিপদ ঘটাচ্ছে জানুন মায়েরা
চিনি ক্যানসারের কারণ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কাজেই বেশি মিষ্টি, চিনি বা শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ানো বন্ধ করুন বাচ্চাদের।