
মাঝ বয়সে মনের জ্বালা, রোগ-ব্যাধি, সম্পর্কের ভুল সমীকরণ, মিডলাইফ ক্রাইসিস সামলাবেন কী করে?
গুড হেলথ ডেস্ক
মাঝ বয়স (Midlife Crisis) হলেই নাকি মনের উসখুসুনি বাড়ে। চাওয়া-পাওয়ার তালিকা নিয়ে নাড়াঘাঁটা করে তৃপ্তির চেয়ে অতৃপ্তিই আসে বেশি। বার বার ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে যায় মন। ঘন ঘন সিগারেটে টান দিয়ে চল্লিশ-পঞ্চাশের পুরুষ ভাবে ‘জীবনটাই বৃথা গেল।’ যা চেয়েছিলাম, কিস্যু পাইনি। শরীরের চাকচিক্য উধাও হচ্ছে, গলায়-হাতে বলিরেখা ফেটে বেরতে চাইছে, একমাথা চুলের ফাঁক দিয়ে টাকটা উঁকি দিচ্ছে, চোখের কোলে সাদা বুড়োটে মাংসল পিণ্ড জানান দিচ্ছে কোলেস্টেরলও এখন বশে নেই। ওদিকে সংসারে খিটখিট, পুরনো দাম্পত্য, একঘেয়েমি অবসাদ-একাকীত্ব।
মধ্যবয়সে (Midlife Crisis) মন-শরীরের এই টানাপড়েনের নামই মিডলাইফ ক্রাইসিস (Midlife Crisis)। পুরুষ ও মহিলা উভয়েই ভোগে। তবে পুরুষদের মাঝবয়সের সংকট কিছু বেশি। ছিমছাম চাকরিতে তখন আর মন নেই। স্ত্রী ঘোর সংসারি, প্রেম-প্রেম গন্ধটা মনে-বিছানায় কোথাও নেই। যৌন অতৃপ্তি থেকে একরাশ হতাশায় ডুবে থাকা পুরুষ তখন পরকীয়ার জন্য ছোঁক ছোঁক করে। কেউ মাঝবয়সের বিড়ম্বনা মেনে ঘরের এক কোণে নিজেকে আড়াল করে একাকীত্বে ডুবে যায়, আবার কারও মধ্যবয়সে নতুন করে উন্মাদনা চাগাড় দেয়। প্রচুর মদ খাব, নিষিদ্ধ কাজ করব, প্রেমিকাকে নিয়ে সাজগোজ–ক্লাব–পার্টি-নেশা। এক চূড়ান্ত অস্থির সময়। মনের খাঁজভাঁজগুলোতে বিন্দু বিন্দু অবসাদ। মনের মধ্যে চাপা দুঃখ, সব হারিয়ে ফেলছি ভাব, ছাইচাপা হাসফাঁস যেন আর্তনাদ করতে বলতে চাইছে ‘আমি মিডলাইফে’।
মধ্যগগনে ‘মেল মেনোপজের’ ধাক্কা সামলে অবসাদের তোয়াক্কা না করেই স্বাভাবিক জীবন ছন্দে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে পারেন কম জনই। যিনি পারেন তিনি ‘ক্রাইসিস’-এ ভোগেন না, আর যিনি না পােন তাঁরই মিডলাইফে বিড়ম্বনা। তবে কমবেশি হতাশা, মুড সুয়িং, কিছুই ভাল না লাগার মতো অনুভূতি সকলেরই হয় (Midlife Crisis) । সেটা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যাবে, সে পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
মাইগ্রেনের ব্যথার ওষুধ খেলে ওজন কমবে? নতুন গবেষণায় দাবি মার্কিন বিজ্ঞানীদের
মাঝ বয়সে মন আনচান
মনের মধ্যে যেন ছাইচাপা আগুন জ্বলছে ধিকিধিকি করে, কী কী অনুভূতি হয় এই সময়ে–
সংসার, কেরিয়ার, স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিজন সবেতেই অতৃপ্তি
স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা, শরীরের জোর কমে যাওয়া
চরম যৌন অতৃপ্তি, ৪০-৫০ বছরে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমতে থাকে, এই সময়টা পুরুষদের মেনোপজ বা অ্যান্ড্রোপজ পর্ব। কাজেই সম্পর্ক নিয়ে খুঁতখুঁতানি বাড়ে।
সবেতেই উৎসাহ কমে যায় (Midlife Crisis) ।
ক্লান্তি, দুর্বলতা। শরীরের চেয়ে মনের ক্লান্তিই বেশি।
সন্দেহপ্রবণতা, অবিশ্বাস, হতাশা, অবসাদ।
ডিপ্রেশন মারাত্মক
ঘন ঘন মুডের বদল, মেজাজ খিটখিটে।
কেউ পাত্তা দিচ্ছে না, আমি আর আগের মতো নেই–এমন মনোভাব।
নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, সামাজিক বিষয়গুলো থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
পরিবার-পরিজন পাশে থাকলেও একাকীত্বের অনুভূতি।
নিজের পছন্দের কাজগুলো ভুলে আজেবাজে কাজে মন দেওয়া। টিভি-সিরিয়াল, সিনেমা দেখে সেসব নিয়ে আলোচনা, নেগেটিভ চিন্তা।
অবসাদ থেকে নেশার প্রবণতা, ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে মানসিক ভাবে স্ট্রেস নেওয়া।
মধ্যগগনেও (Midlife Crisis) ভাল থাকুন, কীভাবে সামলাবেন মিডলাইফ ক্রাইসিস
অস্থির হবেন না৷ ভেবে দেখুন, কম বয়সের চাহিদায় কিন্তু অনেক সময়ই অবাস্তবতা থাকে৷ যুক্তিহীন চাহিদা যে মেটে না তা বোঝার ক্ষমতা আপনার আছে৷ অতএব বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিন৷
নতুন কিছু শুরু করুন৷ ভাললাগার কাজ৷ এই বয়সে এসে এখন আপনার চাহিদা অনেক বাস্তবসম্মত, অভিজ্ঞতা আছে৷ কাজেই সাফল্যের আশা খুব বেশি৷
নিজের সম্পর্কগুলোকে নতুন করে সাজিয়ে নিন। ভুল সম্পর্কের সমীকরণ মানসিক স্থিতি নষ্ট করে, এতে অবসাদ আরও বাড়ে।
স্বামী/স্ত্রী–ও কিন্তু একে অপরের সাপোর্ট সিস্টেমের অঙ্গ৷ তাঁকে শ্বাস ছাড়ার অবকাশ দিয়ে, তাঁর সমস্যা বুঝে চললে একাকিত্বের হাত থেকে মুক্তি পাবেন৷ তাঁর সমস্যাও আপনারই মতো৷ একই ক্রাইসিসে ভোগার সম্ভাবনা তাঁরও৷
বয়ঃসন্ধির মতো মাঝবয়সের টালমাটালও একদিন কেটে যাবে। ততদিন শান্ত হয়ে ধৈর্য ধরে থাকা ছাড়া উপায় নেই। নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন, মাথা ঠান্ডা রাখুন।
জীবনে একঘেয়েমি এলেও ঘাবড়াবেন না। জীবনের দ্বিতীয় ইনিংটা চ্যালেঞ্জের মতো নিন। পছন্দের জায়গায় ঘুরতে যান, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে প্রাণ ভরে আড্ডা দিন, সপরিবারে ডিনার বা লাঞ্চে যান। পারলে সপ্তাহে একদিন গেট টুগেদার করুন। এতেই মন অনেক সতেড থাকবে।
নিজের অনুভূতি, সংশয় বা কষ্টগুলো ভেতরে চেপে রাখবেন না। পার্টনারের সঙ্গে শেয়ার করুন। যে কাজগুলো একসময় করতে ভালো লাগত, সে সব নতুন করে শুরু করুন। বাগান করা বা জিমে যাওয়ার মতো কাজ কিন্তু শরীর ভালো রাখার পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতে অনেকটাই সাহায্য করে।