‘মাঙ্কি’পক্স কেন? নামকরণেই তো বর্ণবৈষম্যের ছাপ স্পষ্ট, হু-কে পদক্ষেপ নিতে বললেন বিজ্ঞানীরা

গুড হেলথ ডেস্ক

বাঁদরের থেকে ছড়ায় কি এই ভাইরাস (Monkeypox)? রডেন্ট বা ইঁদুর জাতীয় প্রাণীরাই এই ভাইরাসের বাহক বলে জানিয়েছেন ভাইরোলজিস্টরা। তাহলে ‘মাঙ্কি’ নামটা কোথা থেকে এল? একটা নির্দিষ্ট দেশকেই নিশানা করা হচ্ছে নাকি? নামকরণের মধ্যেই বর্ণবৈষম্যের ছাপ স্পষ্ট, এমনটাই অভিযোগ বিশ্বের তাবড় ভাইরোলজিস্ট, জীববিজ্ঞানীদের। এই রোগের নাম দ্রুত বদল করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-কে অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও লিখেছেন বিজ্ঞানীরা।

মাঙ্কিপক্স (Monkeypox) প্রথম ছড়ায় আফ্রিকা থেকে। তাই এই ভাইরাসজনিত রোগের নাম কীভাবে যেন মাঙ্কিপক্স হয়ে যায়। আফ্রিকার অধিবাসীদের বিশেষভাবে চিহ্নিত করেই এই ভাইরাসের এমন নাম দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলেন বিজ্ঞানীরা। ৩০ জন বিজ্ঞানীর একটি দল চিঠি লিখে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আঙুল তোলার পরেই শোরগোল পড়ে যায়। হু, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের টনক নড়ে। বিজ্ঞানীমহলেও আলোচনার আসর বসে। কেন নাম মাঙ্কিপক্স হল সে নিয়ে আওয়াজ তোলেন বিজ্ঞানীমহলের একাংশ। নাইজেরিয়ার আফ্রিকান সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ফর জিনোমিক্স অব ইনফেকশিয়াস ডিজিজের ডিরেক্টর ক্রিস্টিয়ান হ্যাপ্পি বলেছেন, “বর্ণবৈষম্যের চূড়ান্ত নিদর্শন। আফ্রিকান মানুষজনকেই নিশানা করে এমন নাম দেওয়া হয়েছে। একটা নির্দিষ্ট দেশকেই টার্গেট করা হয়েছে। রোগের নামকরণেও এমন শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্য খুবই দুঃখজনক।”

Monkeypox

১৯৫৮ সালে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে প্রথম মাঙ্কিপক্স ভাইরাস ছড়ায়। মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়ায় ১৯৭০ সালে। মূলত কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও মধ্য আফ্রিকাতেই প্রথম সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। তাই এই ভাইরাসের প্রজাতিদের নামও আফ্রিকার সেইসব অঞ্চলের নামেই রাখা হয়েছিল। আফ্রিকান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জানাচ্ছে,  আমেরিকাতেও সংক্রমণের খোঁজ মিলেছিল অনেক আগেই। ধীরে ধীরে ইজরায়েল, সিঙ্গাপুর, ব্রিটেন, পর্তুগাল, স্পেন, নরওয়েতে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীদের দাবি, বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। সংক্রমিতের সংখ্যা প্রায় হাজারের কাছাকাছি। এতগুলো দেশে যখন সংক্রমণ ছড়িয়েছে তাহলে এখনও কেন ভাইরাসের নাম এমন থাকবে। দ্রুত নাম বদলানোর আর্জি জানিয়ে হু-কে চিঠি দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

 monkeypox

হু প্রধান টেড্রস অ্য়াডহানাম ঘেব্রেইসাস বলছেন, কোনওরকম বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণ বরদাস্ত করা হবে না। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস ও তার উপপ্রজাতিদের নাম বদলানো হবে খুব দ্রুত। নামকরণে বদলের জন্য পদক্ষেপ করবে হু।

মাঙ্কিপক্স (Monkeypox) কীভাবে ছড়ায়?

মাঙ্কিপক্স ভাইরাস Orthopoxvirus genus পরিবারের। গুটিবসন্ত যে গোত্রের ভাইরাস থেকে হয় মাঙ্কিপক্সও সেই গোত্রেরই। এই ভাইরাসের সংক্রমণেও জ্বর, সারা গায়ে বড় বড় ফোস্কার মতো র‍্যাশ বের হবে (Monkeypox)। ত্বক শুকিয়ে খসখসে হয়ে যাবে, প্রচণ্ড চুলকানি, জ্বালা হবে র‍্যাশের জায়গায়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মৃত প্রাণীর মাংস, মলমূত্র থেকে ছড়ায় ভাইরাস। আফ্রিকার রডেন্ট বা ইঁদুর জাতীয় প্রাণীই এই ভাইরাসের বাহক। ১৯৫৮ সালে আফ্রিকার এক প্রজাতির বাঁদরের মধ্য়ে এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, তখনও মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেনি। সেই থেকেই নাম মাঙ্কি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে বাঁদরের থেকেই ভাইরাস ছড়িয়েছিল কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ১৯৭০ সালে কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও নাইজেরিয়াতে এই ভাইরাস প্রথম খুঁজে পাওয়া যায় মানুষের শরীরে। সেই সময় রডেন্ট জাতীয় প্রাণীর মাংস থেকেই ছড়িয়েছিল সংক্রমণ। ভাইরাসের বেঁচে থাকার জন্য বাহক বা reservoir এর দরকার হয়। এই ভাইরাসের বাহক রডেন্ট জাতীয় প্রাণী, এমনটাই পরীক্ষা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাই পুরনো নাম জিইয়ে রাখার মানেই হয় না বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।