
করোনা থেকে বাঁচুন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ুক কয়েকগুণ, উপায় বললেন বিশেষজ্ঞ
সঞ্জীব আচার্য
কর্ণধার সিরাম অ্যানালিসিস
মারণরোগের ফাঁদ মানেই মৃত্যুর দিকে আরও কিছুটা এগিয়ে যাওয়া। বর্তমান জীবনযাত্রায় যে সব মারণ অসুখ নিয়ত আমাদের ভাবনায় রাখে, তার অন্যতম করোনা সংক্রমণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া মানেই মারণ ভাইরাসের শরীরে ঢুকে পড়ার রাস্তাটা আরও সহজ হয়ে যাওয়া। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে দরকার লাইফস্টাইল মডিফিকেশন। সভ্যতা যত আধুনিক হচ্ছে, ব্যস্ততা যত বাড়ছে, ততই যেন বদলে যাচ্ছে জীবনযাপনের ধরন। আর তা মোটেই সুবিধের হচ্ছে না শরীরের জন্য। শরীরচর্চা থেকে ডায়েটপ্ল্যান– সবটাই শুরু করতে হবে আজই। ছাড়তে হবে সিগারেটের মতো বদভ্যাস। নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে কোলেস্টেরল, সুগারের মতো শত্রুকে।
জোর দিন পুষ্টিকর ডায়েটে
সুস্থ শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান হল ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেলস, ফাইবার। অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, তেল-মশলার খাবার, রেড মিট, ডিপ ফ্রায়েড স্ন্যাক্স, অতিরিক্ত ময়দা ও চিনি খেলে ওজন বাড়ে আর তা থেকে নানারকম জটিলতা শুরু হয় যে শরীর থেকে অসুখ সরানো মুশকিল হয়ে পড়ে। পুষ্টিকর ডায়েট হিসেবে টাটকা শাক-সব্জির কোনও তুলনাই নেই। গাজর, বিনস, ক্যাপসিকাম, ব্রোকোলি ফ্রিজে রাখাই যায়। তাছাড়া পালং শাক, লেটুসের মতো সব্জি রোজকার ডায়েটে রাখলে ভাল। সবুজ শাক-সব্জিতে ক্যালোরির পরিমাণ কম, ফাইবার বেশি থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পালং শাকেই থাকে ভিটামিন এ, কে ও ম্যাঙ্গানীজ। এর ফোলেট লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে।
বর্তমান প্রজন্মের ঝোঁক রেড মিট এবং প্রসেসড মিটের দিকেই। রেড মিট মানেই হাই কোলেস্টেরল। মেপে না খেলেই কোলেস্টেরল–ট্রাইগ্লিসারাইড, ফ্যাটি লিভার বাড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে। প্রসেসড মিট বেশি খেলে পাকস্থলিতে কিছু ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করে৷ সেদিক থেকে লিন মিট অনেক বেশি সুরক্ষিত। প্রায় সব ধরনের হোয়াইট মিট পড়ে লিন মিটের পর্যায়ে। এর মধ্যে রয়েছে পোলট্রি ও মাছও। চিকেন ছাড়াও লিন প্রোটিনের অন্যতম উৎস মাছ। প্রোটিনের পাশাপাশি মাছে রয়েছে ভিটামিন ডি ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা মস্তিষ্ককে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। লিন মিটে কোলেস্টেরল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণও অনেক কম। শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত মাছ খুবই উপকারী। তা ছাড়া এতে ভিটামিন ডি থাকায় তা ত্বকের ক্যানসার রুখতেও খুবই কার্যকর।
নিয়মিত শরীরচর্চা দরকার
এক্সারসাইজ তিন রকমের হয়। কার্ডিও, স্ট্রেংথ অ্যান্ড পাওয়ার, স্ট্রেচিং। তা হাঁটা বা দৌড়নো হতে পারে, কেউ ব্যাডমিন্টন খেলতে পারেন, সাইকেল চালাতে পারেন, সাঁতার কাটতে পারেন। চেষ্টা করা উচিত রোজ অন্তত আধ ঘণ্টা এক্সারসাইজ করা উচিত। এর বেশিও করতে পারেন কেউ ভাল লাগলে। সময়ের অভাব হলে সকাল ও বিকেল দু’বেলা মিলিয়েও করা যেতে পারে। প্রতিদিনই করা ভাল, না হলে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন করা উচিত শরীরচর্চা।
স্ট্রেস নয়, টানা ঘুম দরকার
শরীর ভাল রাখার জন্য, হার্ট সুস্থ রাখার জন্য ঘুম অবশ্যই জরুরি। সেখানে খেয়াল রাখতে হবে, স্লিপ প্যাটার্ন মেনটেন করা যাচ্ছে কিনা। মানুষের ঘুম দু’রকম হয়। গভীর আর অগভীর। যাঁদের ঘুম গভীর নয়, তাঁদের রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি থাকে, হরমোনের গন্ডগোলও হয়। যাঁদের ঘুম গভীর, তাঁরা ৬ ঘণ্টা ঘুমোলেও সমস্যা মিটে যায়। চিকিৎসকরা সাধারণত বলেন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা নিয়মিত ঘুম শরীরের জন্য সবচেয়ে ভাল। আবার ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমোলে আবার অনেক সময় অন্য নানা সমস্যা হয়। তা খুব স্বাভাবিক নয়। আর যখন ঘুমোচ্ছেন, তার ২-৩ ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে নেওয়াই ভাল।
স্ট্রেস ফ্রি থাকুন
স্ট্রেস-ফ্রি জীবন হয় না। অসম্ভব একটা ব্যাপার। স্ট্রেস থাকবেই। সময় যত এগোবে, স্ট্রেস তত বাড়বে। স্ট্রেস কখনও কমানো যায় না। কেউ স্ট্রেসের মুখে খাওয়া বন্ধ করে দেন, সিগারেট খেয়ে ফেলেন, এক্সারসাইজ বন্ধ করে দেন– এগুলো কিন্তু স্ট্রেস কমানোর বদলে উল্টে বাড়ায়, বরং আরও ক্ষতিও করে।
জল খান মেপে, চনমনে থাকবে হার্ট-কিডনি-লিভার
হার্ট, লিভার, কিডনি যাদের একদম তরতাজা রয়েছে তারা দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার জল খেতেই পারেন। তবে এখানেও একটা ব্যাপার আছে। ওজন, শারীরিক গঠন সবকিছু দেখেই জলের পরিমাণ বাতলে দেন বিশেষজ্ঞরা। ধরা যাক, যিনি নিয়মিত শরীরচর্চা করে বা যাঁকে ছুটোছুটি করে কাজ করতে হয় তাঁর শরীরে জলের চাহিদা একরকম, আবার যিনি দীর্ঘ সময় বসে কাজ করছেন তাঁর শরীরে জলের চাহিদা আবার অন্যরকম। আবার কিডনি বা হার্টের রোগ রয়েছে যঁদের, অথবা প্রেগন্যান্সির সময় শরীরে জলের চাহিদার তারতম্য হয়। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দিনে ৩.৭ লিটার (১২৫ আউন্স) ফ্লুইড (Fluid) দরকার হয়। একজন মহিলার সেখানে দরকার হয় ২.৭ (৯১ আউন্স) লিটার ফ্লুইড।
করোনা থেকে বাঁচুন, নিয়ম মানুন
• ফেস-মাস্ক ও পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলুন।
• বারে বারে সাবান বা জল দিয়ে ভাল করে হাত ধোওয়া উচিত। অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত কচলে ধুতে হবে। ভাল হয় যদি এমন হ্যান্ড-স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যায় যাতে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে।
• হাত না ধুয়ে চোখে, মুখে, নাকে ও কানে হাত দেওয়া উচিত হবে না। যে কোনও সারফেসে থাকা ভাইরাস এইভাবেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
• সর্দি-হাঁচি-কাশি বা জ্বর এমন উপসর্গ দেখা দিয়েছে সেইসব মানুষের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকাই ভাল। কারও শরীরে সংক্রমণ দেখা দিলে তার ধারেকাছে না যাওয়াই ভাল।
• নিজের মধ্যে কোনও রকম উপসর্গ দেখা গেলে বা অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকাই ভাল। স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে গেলে বাকিদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়বে।
• হাঁচি বা কাশি আটকাতে টিস্যু ব্যবহার করা একান্ত দরকার। তারপর সেই টিস্যু এদিক ওদিকে না ছড়িয়ে ফেলে দিতে ডাস্টবিনে।