Norovirus: কেরলের মারাত্মক ভাইরাস শরীরে কী কী ক্ষতি করে? কেন একে বলা হয় ভমিটিং ভাইরাস?

গুড হেলথ ডেস্ক

করোনার মতোই ছোঁয়াচে। শরীরে একবার ঢুকলে বেরোবার নাম করে না। বমি-পেট খারাপ, ডিহাইড্রেশন–ঝাঁঝরা করে দেয় শরীর। আক্রান্তের সংস্পর্শ থেকে দ্রুত ছড়াতেও পারে। একেই করোনাভাইরাস আর মাঙ্কিপক্স নিয়ে নাজেহাল হচ্ছে বিশ্ব, তার মধ্যেই নোরোভাইরাস (Norovirus) হানা দিয়েছে কেরলে। দুই শিশু সংক্রমিত।

ভমিটিং-ভাইরাস? স্টমাক-বাগ (Norovirus) বলেন অনেকে

নোরোভাইরাস হল অনেকটা ডায়েরিয়ার রোটাভাইরাসের মতো। তবে এদের প্রজাতি (Norovirus) আলাদা। আরও বেশি সংক্রামক। ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে ১২-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। অনেকের আবার ২-৩ দিন পরেও উপসর্গ ধরা পড়ে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আগে ভেঙেচুরে দেয় এই ভাইরাস। রোগীর শরীরকে জনশূন্য করতে শুরু করে। ডিহাইড্রেশনের সঙ্গেই মারাত্মক বমি ও পেট খারাপ শুরু হয়। বমি ও পেটের সমস্যা হল নোরোভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ। অনেকেই ডায়েরিয়া ভেবে ভুল করেন, ফলে চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়, ভাইরাস বিভাজিত হতে সংখ্যায় বাড়তে থাকে। নোরোভাইরাসকে Vomiting Virus বলা হয়, ভাইরোলজিস্টরা একে স্টমাক-বাগ বা স্টমাক-ফ্লু ভাইরাস বলেন। তবে ফ্লু ভাইরাস বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের থেকে নোরোভাইরাস অনেকটাই আলাদা।

Norovirus

অন্ত্রে মারাত্মক ইনফেকশন, অপুষ্টিও দেখা দেয় 

অসহ্য পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। তারপরেই বমি হতে থাকে। সঙ্গে ঘন ঘন পেট খারাপ। এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে বমি থামতে চাইবে না। জ্বর আসবে, মাথা ব্যথা বাড়বে, মোচড় দেবে পেট। প্রচণ্ড ক্লান্তি ও ঝিমুনি হবে রোগীর।

সংক্রমণ বাড়লে পেশির ব্যথা শুরু হবে। অন্ত্রে প্রদাহ হবে। ডিহাইড্রেশন বেড়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘন ঘন হলে অপুষ্টির শিকার হবে রোগী। সঠিক ট্রিটমেন্ট না হলে মৃত্য়ুও হতে পারে।

শিশুদের ভয় বেশি?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে বিশ্বে ২০ কোটির বেশি শিশু আক্রান্ত হয় এই ভাইরাসে (Norovirus)। বেশিরভাগেরই বয়স ৫ বছরের নীচে। কেরলে দুটি বাচ্চা মেয়ের শরীরে শরীরে পাওয়া গেছে ভাইরাস। মনে করা হচ্ছে স্কুলের মিড-ডে মিল থেকে ভাইরাস ছড়িয়েছে।

Norovirus

মূলত দূষিত জল, খাবার, রাস্তার শরবত-স্ট্রিট ফুড থেকে ভাইরাস ছড়ায়। আক্রান্তের সংস্পর্শে থাকলে বা আক্রান্তের থেকে একই থালায় খাবার খেলে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। কঠিন সারফেসের ওপরেও ভাইরাস জমে থাকতে পারে। সেখান থেকে শরীরে ঢুকতে পারে।

বাচ্চাদের এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে বমি, পেট খারাপ তো হবেই সেই সঙ্গে মূত্রনালীর সংক্রমণ হতে পারে। প্রস্রাব কমে যেতে পারে। মুখমণ্ডলের ভেতর ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাচ্চা পেট ব্যথায় কাঁদবে কিন্তু চোখ দিয়ে বেশি জল বের হবে না। ক্লান্তি ও ঝিমুনিতে ঘুমিয়ে পড়বে।

Norovirus

উচ্চ তাপমাত্রাতেও মরে না: ভাইরোলজিস্টরা বলছেন অন্যান্য ভাইরাস (Norovirus) খুব বেশি তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে না। তাদেরও সহনশীলতার একটা মাত্রা আছে। অদ্ভুত ব্যাপার হল নোরোভাইরাস কিন্তু বেশি তাপেও মরে না। ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে ও বংশবিস্তার করতে পারে এই ভাইরাস (Norovirus)। তাই বাজার থেকে কেনা কাঁচা সব্জি, মাছ বা মাংস খুব ভাল করে ধুয়ে, বেশি তাপে রান্না করে খেতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

কী করে সাবধান হবেন: বাজার থেকে কেনা কাঁচা সব্জি, মাঠ-মাংস বা ফল ভাল করে ধুয়ে তবে খান।

খাবার আগে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। নোংরা হাতে খেলে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে।

কিছু স্য়ানিটাইজারের মধ্যেও এই ভাইরাস পাওয়া গেছে, তাই রাসায়নিক মিশ্রণ নয়, বরং পরিষ্কার জলে ভাল করে হাত ধুয়ে নেবেন।

বাইরে থেকে এলে জামাকাপড় আগে বদলে তারপর বাচ্চার কাছে যান। হাত না ধুয়ে বাচ্চাকে আদর করবেন না।

রাস্তার খাবার, কাটা ফল-শরবত এখন এড়িয়ে চলুন।

বাড়িতে কেউ আক্রান্ত হলে তার বমি বা মলমূত্র যে ভাল করে পরিষ্কার করা হয়। আক্রান্তের মল বা বমি থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক এই ভাইরাসের অসুখ সারাতে পারে না। তাই ডাক্তারকে জিজ্ঞেস না করে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে বিপদ বাড়াবেন না।