
Singer K K Death: মঞ্চে দরদর করে ঘাম, বার বার জল খাওয়া, কেকে-র শরীর জানান দিয়েছিল তখনই
গুড হেলথ ডেস্ক
বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠান শুরুর পর থেকেই শারীরিক অস্বস্তি শুরু হয় কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে-র। ভিড়ে ঠাসা নজরুল মঞ্চ। মঙ্গলবার গরমও ছিল ভালই। গানের মাঝে বার বার রুমালে মুখ মুছছিলেন কেকে। মাথাতেও রুমাল বুলিয়ে নিচ্ছিলেন। গানের শেষে বার বার গলায় জল ঢালতে দেখা যাচ্ছিল তাঁকে। একটু অস্বাভাবিক ঘামই কি হচ্ছিল শিল্পীর? গতকাল মঞ্চের ভিডিও ফুটেজ দেখে সেটাই বার বার মনে হচ্ছে সকলের। তার মানে কি শুরু থেকেই শারীরিক অস্বস্তি হচ্ছিল ৫৩ বছরের সঙ্গীতশিল্পীর? শরীর কি জানান দিচ্ছিল, বিপদ আসছে, একটু বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন আছে!
রাত সাড়ে ১০টা। এসপ্ল্যানেডের হোটেলে ফেরার পরই উপসর্গগুলো বড় হয়ে দেখা দেয়। কলকাতা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিএমআরআই)-তে নিয়ে যাওয়ার পরেই সব শেষ। চিকিৎসা শুরু হওয়ার সময়টুকু পাওয়া যায়নি। কেকে-র মৃত্যু নিয়ে তদন্ত হবে। তবে ডাক্তারবাবুরা লক্ষণ দেখে বলে দিচ্ছেন, হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু হয়েছে কেকে-র। হার্ট অ্যাটাক আসার আগে জানান দেয় শরীরই। এমন কিছু লক্ষণ দেখা দিতে থাকে যা আমরা সাধারণ বলে এড়িয়ে যাই বেশিরভাগ সময়েই। কেকে-র শারীরিক অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল তাঁর কোথাও একটা অস্বস্তি হচ্ছে। মঞ্চে সেদিন যে দর্শকেরা ছিলেন তাঁরাও বলছিলেন দরদর করে ঘেমে যাচ্ছিলেন শিল্পী। বার বার মুখ মুছছিলেন, জল খাচ্ছিলেন। শরীর সঙ্গ দিচ্ছে না এটা কেন বুঝলেন না কেকে? তাহলে হয়ত বিপদ এড়ানো যেত।
প্রতি দিন কত মানুষের যে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে প্রাণ চলে যায়, তার কোনও হিসেব নেই। কিছুদিন আগেই ক্রিকেট জগতের অন্যতম কিংবদন্তি শেন ওয়ার্নের মৃত্যু ঘনিয়ে এল এই একই কারণে। মাত্র ৫২ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে থেমে গেল তাঁর হৃদস্পন্দন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হার্ট অ্যাটাক হঠাৎ করে হলেও হওয়ার আগে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। এগুলো সম্পর্কে অবগত থাকলে ও সময়মতো সতর্ক হলে কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু ঠেকানো যায়।
আচমকাই বন্ধ হৃদস্পন্দন
হার্টের আর্টারি বা ধমনীতে প্লাঙ্ক বা চর্বি জমে সরু হয়ে গেলে সেখানে রক্ত সঞ্চালন আর স্বাভাবিক থাকে না, রক্ত জমাট বাঁধে বা রক্তের ক্লট তৈরি হয়। এর ফলে আর্টারিতে রক্ত সঞ্চালন পুরোপুরি বা বেশিরভাগটাই বন্ধ হয়ে যায়। আর তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়।
কী কী লক্ষণ দেখে সতর্ক হতে হবে?
অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্টরা বলছেন, তিনটি প্রধান লক্ষণ দেখে সতর্ক হতে হবে। শরীর আগেই বুঝিয়ে দেয় এবার সাবধান হতে হবে। সামলে রাখতে হবে হার্টকে।
১) বুকে চাপ চাপ ব্য়থা। মনে হবে বুকে ভারী পাথর বসে আছে।
২) বুকের ব্য়থা যদি ঠেলে ওপরের দিকে মানে গলার কাছে উঠতে থাকে। সেই সঙ্গে ব্যথা কাঁধ ছাড়িয়ে হাতে নেমে আসে।
৩) দরদর করে ঘাম হচ্ছে। রাতবিরেতে উঠে দেখলেন সারা শরীরে ঘাম, বুকে চাপের মতো ব্যথা ধরে আছে।
৪) বাইরে কোথাও রয়েছেন দেখলেন প্রচণ্ড ঘাম হচ্ছে, মুখ-গলা মাথা ঘেমে যাচ্ছে, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে, তখন সতর্ক হতে হবে।
৫) হঠাৎ করে শ্বাসকষ্টও হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম উপসর্গ। যদি দেখেন আচমকাই বুখে ব্যথার সঙ্গে শ্বাসের সমস্যা হচ্ছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, দম আটকে আসছে, তাহলে দেরি করবেন না।
৬) পালস রেট ওঠানামা করা বা উচ্চরক্তচাপের সমস্যাও দেখা যায় হার্ট অ্যাটাকের নোটিফিকেশন হতে পারে। এমনটা খেয়াল করলে অবহেলা করবেন না, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৭) হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) আগে শরীরের নানা স্থানে বিভিন্ন রকম ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় মনে হয় ব্যথা শরীরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে চলে যাচ্ছে, এমনটা কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ হতেই পারে।
৮) র্ট অ্যাটাক (Heart Attack) হওয়ার আগে অনেকের বুক ধরফর করে। শরীরের সঙ্গে মানসিক অস্থিরতাও প্রায়শই দেখা যায়। বার বার যদি এমন হয়, তা হলে হৃদরোগের সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়।
কেকে ডায়েট মেনে চলতেন, তাও কেন?
নিয়মিত এক্সারসাইজ করতেন, পুষ্টিকর খেতেন, তাহলেও কেন আচমকা হার্ট অ্যাটাক সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেই যাচ্ছে। কেকে-র দিন শুরু হচ তিন গ্লাস উষ্ণ গরম জল দিয়ে। নিয়মিত ট্রেডমিল, কার্ডিও, বাইসেপ ও পায়ের ব্যায়াম করতেন। শরীরচর্চার পরে খেতেন সেদ্ধ ডিম, ফল। ব্রেকফাস্টে–নানারকম সিরিয়াল ও ওটসমিল, লাঞ্চে–সব্জি দিয়ে তরকারি ও সবুজ স্যালাড। রাতে বেশিরভাগ দিনই ভাত খেতেন না। মাঝেসাঝে খেলেও শুধু ডাল আর অল্প ভাত খেতেন।
কার্ডিওলজিস্টরা বলছেন, এর অনেকগুলো কারণ হতে পারে। প্রথমত প্রচণ্ড গরমেও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দেয়। কোলেস্টেরল খুব বেড়ে গেলে, ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বা রক্তচাপ আচমকা বেড়ে গেলে এমন হতেই পারে। তাছাড়া আরও কারণ রয়েছে, যেমন স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি।