
হঠাৎ করে স্ট্রোক বড় বিপদ ডেকে আনে, শরীর কী কী ইঙ্গিত দেয় বললেন ডাক্তারবাবু
গুড হেলথ ডেস্ক
দিব্যি সুস্থ মানুষ। আচমকাই হাত-পা অবশ, আটকে যাচ্ছে কথা, বেঁকে যাচ্ছে মুখ। এটাই অ্যালার্মিং। তখনই বুঝতে হবে স্ট্রোক হয়েছে। আচমকা স্ট্রোক (Stroke) বড় বিপদ ডেকে আনে। তবে শরীর কিন্তু জানান দেয় অনেক আগেই। এমনও দেখা গেছে, স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর আগেও একাধিকবার মিনি স্ট্রোক হয়ে গেছে। তার মানে শরীর সিগন্যাল দিয়েছে বারে বারেই, কিন্তু রোগী তা বুঝতে পারেননি। অথচ একটু সচেতন হলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। কী এই স্ট্রোক, কীভাবে বুঝবেন স্ট্রোক হয়েছে, শরীর কী কী জানান দেবে বিস্তারিত বুঝিয়ে বললেন নারায়ণ মেমোরিয়াল হসপিটালের কনসালট্যান্ট নিউরোলজিস্ট ও স্ট্রোক স্পেশালিস্ট ডক্টর মনোজ কুমার মাহাতা।
স্ট্রোক (Stroke) হলে শরীরে কী হয়?
মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন হলেই স্ট্রোক হয়। কোনও কারণে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর পথ সংকীর্ণ হয়ে বা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, তখন অক্সিজেনের অভাবে ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তখন যে শারীরিক অবস্থা তৈরি হয় তাকে স্ট্রোক বলে।
স্ট্রোক সাধারণত দুই রকমের হয়। হেমারেজিক ও ইস্কিমিক স্ট্রোক। হেমারেজিক স্ট্রোকে ব্রেনের শিরা ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত হয়। ইস্কিমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কাদের বেশি?
আগে বয়স্ক লোকেদেরই বেশি হত। এখন লাইফস্টাইলে বদল, অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে কমবয়সীরাই বেশি আক্রান্ত। এখন বয়স বাছবিচার করে স্ট্রোক (Stroke) হয় না। বরং ডাক্তাররা আগে স্ট্রোকের কারণ খুঁজে বের করেন।
স্ট্রোক হলে শরীর জানান দেয় আগেই, কী কী উপসর্গ দেখে বোঝা যাবে?
পাঁচ রকমের উপসর্গ দেখলে বোঝা যাবে স্ট্রোক হয়েছে।
১) বডি ব্যালান্স। যে লোকটা কিছুদিন আগে অবধিও সুস্থ-সচল ছিল, সে যদি আচমকা চলতে ফিরতে গেলে ব্যালান্স হারিয়ে ফেলে, শরীর বারে বারে টাল খায়, তাহলে বুঝতে হবে স্ট্রোক হয়েছে।
২) চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলেও সতর্ক হতে হবে। যদি দৃষ্টি ক্ষীণ হতে শুরু করে, ডবল ভিশন হয় তাহলে সেটা অ্যালার্মিং।
৩) মুখটা একদিকে বেঁকে গেলে সতর্ক হতে হবে।
৪) হাত-পা দুর্বল হয়ে যায়, শক্তি হারিয়ে ফেলাও স্ট্রোকের লক্ষণ।
৫) কথা বলতে অসুবিধে হয় অথবা ঢোক গিলতে সমস্যা হয় তখন সাবধান হতে হবে।
যদি সবকটা উপসর্গ দেখা দিতে থাকে তাহলে স্ট্রোক (Stroke) হওয়ার সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ। আর যদি যে কোনও একটা লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহলে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ।
টাইম ইজ ব্রেন
স্ট্রোক হয়েছে বুঝতে পারলে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে রোগীকে। স্ট্রোকের কারণে ব্রেনে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। যদি এই অবস্থা ৮ মিনিট বা তার বেশি স্থায়ী হয় তাহলে ব্রেন পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সময়ের গুরুত্ব অনেক। স্ট্রোকের যে সমস্ত ট্রিটমেন্ট হয় সেগুলো বাড়িতে করা সম্ভব নয়। তাই কোনওভাবেই সময় নষ্ট করা চলবে না। বিশেষ করে হেমারেজিক স্ট্রোকে ব্রেনের শিরা ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। সেখানে সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গেলে এবং রোগীর সঠিক চিকিৎসা শুরু না হলে বড় বিপদ হতে পারে।
স্ট্রোকের কারণে কতটা ড্যামেজ হয়েছে সেটা বোঝা যাবে কী করে?
স্ট্রোকের স্কোরিং ক্রাইটেরিয়া আছে। একে ডাক্তারি ভাষায় বলে, এনআইএইচ স্ট্রোক স্কেল (NIH Stroke Scale)। যদি দেখা যায় এনআইএইচ স্কোর ৫-২৫, তাহলে ধরে নেওয়া হয় মডারেট স্ট্রোক। সেক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক অবস্থা ও কতক্ষণ আগে স্ট্রোক হয়েছে সেই সময় দেখে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করার কথা বলা হয়। সিটি স্ক্যান করলে ব্রেনে হেমারেজ হয়েছে কিনা বোঝা যায়। যদি হেমারেজ না হয় তাহলে বুঝতে হয় ইস্কিমিক স্ট্রোক হয়েছে। সেক্ষেত্রে রোগীকে এমআরআই করিয়ে নিতে বলা হয়। সেই সঙ্গে ব্রেনের অ্য়াঞ্জিওগ্রাফি করিয়ে নিতে বলা হয়।
স্ট্রোকের চিকিৎসা কী?
ইস্কিমিক স্ট্রোকের দু’রকম চিকিৎসাপদ্ধতি আছে। এই দুটো পদ্ধতিই আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসারেই করা হয়। ইস্কিমিক স্ট্রোকে ব্রেনের যে শিরায় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় সেখানে ব্লক খুলে দেওয়া হয়। সেটা ওষুধ দিয়েও হয়, আবার সার্জারি করেও হয়। ওষুধ দিয়ে যখন ব্লক ছাড়ানো হয় তাকে বলে থ্রম্বোলিসিস আর অস্ত্রোপচারে যেটা হয় তার নাম থ্রম্বেকটমি। যদি কোনও রোগী সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে এসে পৌঁছয় তাহলে পরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে ট্রিটমেন্ট করা হয়। যদি দেখা যায় ওষুধ দিয়ে কাজ হবে না, তাহলে স্ট্রোকের সবথেকে আধুনিক পদ্ধতি মেকানিক্যাল থ্রম্বেকটমিতে ব্লক ছাড়ানো হয়। এই পদ্ধতিতে সাফল্যের হার খুব বেশি।
নারায়ণ মেমোরিয়াল হসপিটালে ক্যাথ ল্যাব ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। এখানে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা করা হয়।