
ধূমপান বন্ধ্যত্বেরও কারণ! পুরুষ ও মহিলাদের যৌন স্বাস্থ্যে কী কী প্রভাব ফেলে
গুড হেলথ ডেস্ক
হাতে দামি সিগারেট (Smoking)। সুখটানেই বাজার কাঁপাচ্ছে বয়ঃসন্ধি। বারোর কিশোরী হোক বা আঠেরোর টিনএজ ধোঁয়ার রিঙেই বন্দি স্টাইল স্টেটমেন্ট। ত্রিশ থেকে চল্লিশের কোঠায় যাঁদের বয়স তাঁদের আসক্তি আরও বেশি। চল্লিশোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে আর স্টাইলের ব্যাপার নেই, নেশাই তাঁদের কাছে স্ট্রেস ফ্রি থাকার টোটকা। কারণটা যাই হোক, বিশেষজ্ঞরা বলছেন সিগারেটে আসক্তি শুধু ক্যানসারের কারণ নয়, বন্ধ্যত্ব বা ইনফার্লিটিরও কারণ। পুরুষ হোক বা মহিলা, ধূমপানের নেশা যৌন স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। শরীরে কী কী বদল নিয়ে আসছে জেনে নিন।
নেট সার্ফিংয়ে যাঁরা অভ্যস্ত তাঁদের কাছে এই তথ্যগুলো নতুন নয়। তবুও মাঝে মাঝে আর একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া দরকার, একটা টান দেওয়ার পরে ঠিক কী কী ঢুকছে শরীরে (Smoking)। সিগারেটের উপাদানে আছে আর্সেনিক, টয়লেট ক্লিনারে ব্যবহৃত অ্যামোনিয়া, কীটনাশক ডিডিটি, নেলপলিশ রিমুভার অ্যাসিটোন, ব্যাটারিতে ব্যবহৃত ক্যাডমিয়াম, নিকোটিন-সহ আরও প্রায় ৭০০০ রকমের বিষ!
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষ ও নারী উভয়ের শরীরেই ধূমপান এমন কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যা সন্তানধারণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।
পুরুষদের শরীরে কী কী প্রভাব ফেলে?
পুরুষ বন্ধ্যত্বের (Male Infertility) অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে মানসিক চাপ ও টেনশন অন্যতম কারণ। এর সঙ্গেই আছে অতিরিক্ত ধূমপানের অভ্যাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইনফার্টিলিটি বা ইরেকটাইল ডিসফাংশনে যাঁরা ভোগেন তাঁদের বেশিরভাগকেই দেখা গেছে, লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট ঠিকমতো নেই। দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন। বাড়ি ফিরেও ডেডলাইন নিয়ে কাজ করেন। সঠিক সময় খাওয়া নেই, পর্যাপ্ত ঘুম নেই, দিনভর শরীরে ক্লান্তি থাকে। ডেডলাইনের চক্করে তাঁদের মাথায় কাজ ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তার ওপর আছে সিগারেটের নেশা। অনেকেই আবার চেন স্মোকার। এই অভ্যাস শুক্রাণু তৈরির ক্ষেত্রে নানা সমস্যা তৈরি করে।
নিয়মিত ধূমপানের (Smoking) প্রভাব পড়ে শুক্রাশয়ে। শুক্রাণু দুর্বল হয়।
ধূমপানের ফলে শরীরে ক্যাডমিয়াম ও জিঙ্কের মতো ক্ষতিকর ধাতু ঢোকে, এই ধাতুগুলো শুক্রাশয়ের ওপর প্রভাব ফেলে।
ধূমপান করলে স্পার্ম কাউন্ট কমে যেতে পারে।
চেন স্মোকারদের পরবর্তী সময়ে ইরেকটাইল ডিসফাংশন, সহবাসে অক্ষমতা আসতে পারে।
রিটার্ডেড ইজাকুলেশন, রেট্রোগ্রেড ইজাকুলেশন, শুক্রাণু বা স্পার্মের সংখ্যা কম, মানও খারাপ–এইসবের কারণ হতে পারে মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান।
মহিলাদের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা হয়?
ঋতুস্রাব হয় অনিয়মিত, অকালেই মেনোপজ এবং নানা স্ত্রীরোগের সমস্যা দেখা দেয়।
গর্ভপাত থেকে বন্ধ্যাত্ব ধূমপানের মারাত্মক ক্ষতিকর দিক। Pelvic Inflammatory Disease (PID) হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দেয়।
সিগারেটের নিকোটিন সহ অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ইস্ট্রোজেন হরমোন তৈরিতে বাধা দেয়। এই হরমোন ডিম্বাশয়ের ফলিকল তৈরি করে।
গর্ভাবস্থায় ধূমপান করলে ভ্রূণের ক্ষতি হয়।
গবেষণা বলছে, নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান মহিলাদের বন্ধ্যত্বের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।
ধূমপান এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকি বাড়ায়। সাধারণ গর্ভাবস্থায় নিষিক্ত ডিম্বানু ডিম্বনালীর (ফ্যালোপিয়ান টিউব)-এর মাধ্যমে জরায়ুর ভেতরে প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে নিষিক্ত ডিম্বানু জরায়ু গহ্বরের বাইরে স্থাপিত হয়। একেই বলে এক্টোপিক গর্ভাবস্থা। ভ্রূণ যত বাড়তে থাকে তত বেশি রক্তক্ষরণ শুরু হয়, ক্ষতি হয় ফ্যালোপিয়ান টিউবেরও। সঠিক চিকিৎসা না হলে অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু অবধি হতে পারে।