শুধু করোনা নয়, মাস্ক রুখছে ফুসফুসের নানা অসুখ! হু হু করে কমছে যক্ষ্মা, হাঁপানি

দ্য ওয়াল ব্যুরো: এক বছরের ওপর হয়ে গেল করোনার থাবায় আটকে রয়েছে মানবসভ্যতা। সংক্রমণের প্রথম ধাক্কা পার করে দ্বিতীয় ধাক্কাতেও কাবু হয়েছে বিশ্বের বহু মানুষ। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক দিকে গেলেও, করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের মতো হতে এখনও ঢের দেরি। আদৌ হবে কিনা তাই বা কে জানে! স্যানিটাইজেশন, সোশ্যাল ডিসটেন্স, মাস্ক—এগুলো সম্ভবত পাকাপাকি ভাবে থেকেই যাবে সাধারণের নিউ নর্মাল জীবনযাপনে।

এই নিউ নর্মালই আবার অন্য এক দিক দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারছে। যেমন মাস্ক। করোনার ভাইরাস রোখার কারণে যে মাস্ক পরা আবশ্যক, সেই মাস্কই কিন্তু রুখে দিচ্ছে ফুসফুসের একাধিক অসুখ। যার জেরে, পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন মাসে কলকাতা শহরের পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও রোগী আসেননি যক্ষ্মা ও হাঁপানি নিয়ে।

NC Coronavirus: North Carolina legislators repost debunked claim that face masks spread lung infection - ABC11 Raleigh-Durham

এর কারণ কী?

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মাস্ক পরার জন্য নাক আর মাস্কের মাঝে আটকে থাকছে বাতাসের আর্দ্রতা। ফলে প্রশ্বাস নেওয়ার সময়ে সেই আর্দ্রতাভরা হাওয়াই ঢুকছে শরীরের ভেতরে। এই অতিরিক্ত আর্দ্রতার ফলে সবসময় ভেজা ভেজা থাকছে শ্বাসনালী। এই ভেজা ভাবই জোগাচ্ছে সুরক্ষা।

এমনিতে সবসময়েই বাতাসে কিলবিল করছে নানারকম ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া। এখন মানুষের শ্বাসনালি বা রেসপিরেটরি ট্র‌্যাক শুকনো হলেই সেই জীবাণুগুলি দ্রুত গলার ভিতরে ঢুকে মিউকাস মেমব্রেন পেরিয়ে সেখানকার কোষে হানা দেয়। তখনই মিউকাস মেমব্রেনের কফ ঘন হয়ে যায়। কিন্তু শ্বাসনালি ভেজা থাকলে, সেই ‘হাইড্রেশন’ প্রক্রিয়া জীবাণুর আক্রমণকে আটকে দিচ্ছে। কার্যত, শ্বাসনালি থেকে ফুসফুসে যাওয়ার আগেই জীবাণুগুলিকে ধুয়ে সাফ করে দিচ্ছে ভেজা বাতাস। তাই সুরক্ষিত থাকছে ফুসফুসও।

Visual Guide to Legionnaires' Disease in Pictures

চিকিৎসকদের মতে, ফুসফুসের অসুখ ঠেকাতে শরীরের একটি নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয়, ‘মিউকোসিলিয়ারি ক্লিয়ারেন্স।’ এই পদ্ধতিতে ক্ষতিকর ধূলিকণা, ব্যাকটেরিয়াদের মিউকাস থেকে বার করে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াকেই আরও দ্রুত ও সহজ করছে মাস্কের কারণে তৈরি হওয়া আর্দ্রতাপূর্ণ বাতাস।
সাধারণত বাতাসে ভাসমান কণাগুলি মূলত ০.০১ মাইক্রন থেকে ১০০ মাইক্রন পর্যন্ত মাপের হয়ে থাকে। ভাসমান এই উপাদানগুলির মধ্যে থাকে ডাস্ট, ফ্লাই অ্যাশ, সিমেন্ট, কয়লার কণা, ইত্যাদি। এই সমস্ত ধোঁয়া ও ধুলো ফুসফুসে প্রবেশ করে নানারকম সংক্রমণ ঘটায়। ফলে ধীরে ধীরে ফুসফুসের কোষগুলো অকেজো হতে থাকে।

Can you beat air pollution with masks

তথ্য বলছে, শেষ তিন বছরে এ শহরে ডিজেল ইঞ্জিনের গাড়ি বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। বেড়েছে নির্মাণকাজও। এর ফলে দূষণ ও সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ বাড়ছে কলকাতার বাতাসে। সেই কারণেই শহরের বাতাস অল্প ঠান্ডা হতেই সেই সূক্ষ্ম ধূলিকণার স্তর নেমে আসে নীচে, প্রতি নিশ্বাসে তা প্রবেশ করে ফুসফুসে। কিন্তু মাস্ক পরে থাকলে সে বিপদ অনেকটাই কমছে।

একথা বলছে পরিসংখ্যানও। গত ন-দশ মাসে যা দেখা যাচ্ছে, তা থেকে পরিষ্কার, যে করোনা রুখতে তো বটেই, তা ছাড়াও মাস্ক পরার অভ্যেস বজায় রাখলে ফুসফুসের অন্যান্য অসুখ থেকেও অনেক সুরক্ষিত থাকবেন মানুষ।