ভাইরাল জ্বরের লক্ষণ চিনুন, কোভিড ভেবে মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না

গুড হেলথ ডেস্ক

বর্ষা আসতেই ঘরে ঘরে ভাইরাল জ্বর (Viral Fever)। গা গরম, মাথাব্যথা, নাক দিয়ে ক্রমাগত জল পড়া, সেই সঙ্গে হাঁচি-কাশি তো রয়েছেই। এখন জ্বর হলেই অনেকে কোভিড ভেবে ভয় পাচ্ছেন। গাদা গাদা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলছেন নিজে থেকেই। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, ভাইরাল জ্বরের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে যা কোভিড, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার থেকে কিছুটা আলাদা। সেই উপসর্গগুলো চিনে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে তবে ওষুধ খান।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এখন একটু গা-গরম হলেই টেনশন। সঙ্গে কাশি ও গলাব্যথা থাকলে তো কথাই নেই। কোভিডের আতঙ্কে মানুষ ভুলেই গিয়েছেন সাধারন ইনফ্লুয়েঞ্জার কথা। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে নিয়ম করে প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা থাবা বসায় (Viral Fever)। কিছু দিন আগে পর্যন্ত জ্বর হলেই ধরে নেওয়া হচ্ছিল, কোভিড হয়েছে। আরটি-পিসিআর পরীক্ষাতেও পজিটিভ রিপোর্ট আসছিল। কিন্তু এখন করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল। সংক্রমণ কিছুটা বাড়লেও আগের তিন ওয়েভের মতো অতটাও ভয়ের কারণ নেই বলেই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বরং এই বর্ষায় মশাবাহিত রোগ ও ভাইরাল জ্বর থেকে সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে। ডেঙ্গির প্রকোপ ইতিমধ্যেই বেড়েছে, রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যুও হয়েছে। পাশাপাশি ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। সেই সঙ্গেই ভাইরাল জ্বর (Viral Fever), ডায়ারিয়া হানা দিয়েছে জেলায় জেলায়।

Viral fever

ভাইরাল জ্বরের (Viral Fever) কী কী লক্ষণ চিনবেন

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে হালকা থেকে মাঝারি জ্বরের সঙ্গে গা ম্যাজম্যাজে ভাব থাকবে।

সর্দি-কাশি থাকতে পারে। গলায় কফ জমে যাবে।

নাক দিয়ে অনবরত জল পড়বে। নাক বন্ধ হয়ে যাবে।

জ্বরের সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, দুর্বল লাগা, স্বাদে অরুচি।

গায়ে-হাত পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা থাকবে। পেশিতে টান লাগতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জার জ্বর মোটামুটি ২-৩ দিন থাকে। তার পর কমে যায়। বা কমতে শুরু করে। কিন্তু যদি তা না হয়, ৪-৫ দিন পরও জ্বর থাকে ও জ্বর বাড়তে শুরু করে, রোগী দুর্বল হয়ে পড়েন কিংবা ডায়ারিয়া, সর্দি কমে গিয়ে শ্বাসকষ্ট বা শুকনো কাশি ভোগায়, তখন ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে।

Viral Fever

জ্বর হলে কী কী সতর্কতা নেবেন

হাল্কা গা ম্যাজম্যাজে ভাব থাকলে চিন্তার কিছু নেই। ঘরেতেই ক’দিন বিশ্রামে থাকুন। গরম জলের ভাপ নিন। হালকা খাবার খান। পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে হবে। বেশি করে জল খান। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল খান। মাস্ক পরে বাড়ির অন্যদের থেকে দূরে থাকুন। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের (Viral Fever) সংক্রমণ থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে পরিবারের অন্য কারও সূত্রে করোনা ঘরে এলে সবার প্রথমে তা রোগীর শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

জ্বর তিনদিনের বেশি থাকলে নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। ডাক্তার দেখিয়ে টেস্ট করে নিন। করোনার সময়েও অনেকে নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে বিপত্তি বাঁধিয়েছিলেন। ভিটামিন বা জিঙ্ক ট্যাবলেটও নিজে থেকে খাবেন না। শরীর বুঝে ডাক্তারই প্রেসক্রাইব করে দেবেন।

প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো শিশুদের ক্ষেত্রেও কিছু উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের জ্বরের তাপমাত্রা থাকছে ১০৪ ফারেনহাইট মতো। এ ছাড়া পেট খারাপ, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, ৬-৮ বার মতো পাতলা পায়খানা, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথার মতো কিছু উপসর্গ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। বাচ্চাদের জ্বর হলে ভয় পাবেন না। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ওষুধ খাওয়াবেন। বাচ্চাদের বাইরের খাবার খেতে দেবেন না। বাড়িতেই হাল্কা, কম তেলে রান্না করা খাবার খাওয়ান। বাচ্চার নাক বন্ধ থাকলে বা নাক দিয়ে জল পড়লে, গরম জলের ভাপ দিন। এ ক্ষেত্রে গরম জলের পাত্রে ইউক্যালিপটাস তেল বা মেন্থল তেল দিয়ে দিনে তিন থেকে চার বার ভাপ নিতে হবে। এতেই সংক্রমণ কমবে। ২-৩ দিনে জ্বর না কমলে রক্ত পরীক্ষা করানো দরকার।