
সপ্তাহে কতদিন মদ খাচ্ছেন? উইকএন্ড হলেই মদ আর জাঙ্ক ফুডে মত্ত থাকেন? বাড়ি বসেও রাতভর চলে আড্ডা আর মদ্যপান (Alcohol Heart Disease)?
আপনি যদি এমন লাইস্টাইলে অভ্যস্ত হন তাহলে সাবধান হয়ে যান। এখন সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে এমনিতেও স্ট্রেস, অ্য়াংজাইটি বেশি। ডায়েট মানি না আমরা অনেকেই। শরীরচর্চা কখনও হয়, আবার কখনও একেবারেই হয় না। শারীরিকভাবে কমবেশি সকলেই দুর্বল। তারপর পেশাগত কারণেও মনে পাহাড়প্রমাণ চাপ। রাত জাগতেও হয় অনেককে। সব মিলিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে অনেকটাই। তারপর করোনাকালে এসে নানা অসুখবিসুখ বেড়েছে। রোগের সঙ্গে বেড়েছে দুর্ভোগও। তাই এমন শরীরের অবস্থায় যদি স্ট্রেস ফ্রি হওয়ার জন্য মদ্যপানকেই (Alcohol Heart Disease) উপায় হিসেবে বেছে নেওয়া হয় তাহলে কিন্তু মুশকিল।
মনের চাপ কমাতে ঘন ঘন মদ খেলে ক্ষতিই হবে বেশি। শরীরের বারোটা বাজবে। বিদ্রোহ করবে হার্ট (Alcohol Heart Disease)।
আগে মেডিটেরানিয়ান ডায়েট বলত, নিয়মিত শরীরচর্চা ও সুষম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি, এক গ্লাস করে রেড ওয়াইন খেলে হৃদযন্ত্র ভাল থাকে৷ কিন্তু পরে জানা যায়, এটি যত না রেড ওয়াইনের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি পর্যাপ্ত ফল ও শাকসব্জি খাওয়ার জন্য। মদ্যপান কখনওই শরীরের জন্য উপকারি হতে পারে না। ডাক্তার নির্ধারিত পরিমিত মাত্রায় খেলে ঠিক আছে, কিন্তু কতটা খেতে হবে সেই সীমাটাই বুঝি না আমরা। নেশা এমন বিষম বস্তু যা নিয়মের তোয়াক্কা করে না। ফলে লিমিট ছাড়িয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। আর এর পরিণতিই হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর।
মদ্যপান রিল্যাক্সেশন থেরাপি হতে পারে না
হালকা মদ্যপানে মানসিক চাপ কমে অনেকের৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মদ কখনওই রিল্যাক্সেশন থেরাপি হতে পারে না। এর জন্য নানারকম মেডিটেশন, মুড ডিসঅর্ডার সারানোর থেরাপি আছে। মেডিক্যাল কাউন্সেলাররাই সেটা ঠিক করে দিতে পারবেন। তাই মদ খেলে মন ভাল থাকবে, স্ট্রেস কমবে এমনটা মনে করা বোকামো।
অ্য়ালকোহলের মাত্রা বাড়ালে তার প্রভাব পড়বেই হার্টে। উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং স্থূলতা দেখা দিতে পারে। এগুলি সবই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পুরুষদের জন্য দিনে দু’বার ও মহিলাদের জন্য দিনে এক বারের বেশি মদ্যপান হার্টের স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। হার্টের স্পন্দন বিগড়ে গেলে তা হৃদরোগের কারণ হবে। হার্ট হল শরীরের পাম্পিং মেশিন। নির্দিষ্ট ছন্দে লাবডুব করে হার্ট সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখে। হার্টের ছন্দ অনিয়মিত হয়ে গেলে তাকে বলে অ্যারিদমিয়া। বেশি মদ খেলে অ্য়ারিদমিয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। হার্ট তার স্বাভাবিক ছন্দ হারায়। দ্রুত হাটলে বা দৌড়লেও হার্ট বিট বেড়ে যায়। কিন্তু তা সাময়িক ও স্বাভাবিক। মদ্যপানের ফলে হার্ট রেট বদলে যাওয়ার সঙ্গে এর তফাৎ আছে। মদ্যপান করলে যে অ্যারিদমিয়া হয় তা চট করে কমতে চায় না। ফলে আচমকাই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
হাই ব্লাড প্রেশারের রোগীদের জন্যে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান যেমন ৬০ মিলিলিটারের থেকে বেশি হলে তা অত্যন্ত ক্ষতিকর। আচমকা রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে। তাছাড়া মদের সঙ্গে তেল মশলাদার খাবার তো চলেই। ফলে কোলেস্টেরল বাড়তে থাকে যা হৃদরোগের কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশি মদ খেলে রক্তচাপ ও রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বাড়তে পারে৷ ফলে ক্যালোরি বেড়ে যায়৷ ওজন বাড়ে৷ ডায়াবেটিসের শঙ্কা বাড়ে। এইসব কিছুই একসঙ্গে ইস্কিমিক হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
ওজন বেশি থাকলে বা ওবেসিটি থাকলে যদি তার মধ্য়েও ঘন ঘন মদ খান কেউ, তাহলে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না। লিভার তো যাবেই, ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিস হতে পারে এবং এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে হার্টে। আচমকাই বেড়ে যাবে রক্তচাপ, বাড়বে হার্ট রেট, কিছু বোঝার আগেই হার্ট অ্যাটাক নিস্তেজ করে দেবে শরীর। কাজেই সাবধান থাকুন। গ্লাস গ্লাস মদ খাওয়া মানেই নিজেকে স্মার্ট দেখানো নয়, এতে মন ভাল থাকার ধারণাটাও সম্পূর্ণ ভুল। বরং পুষ্টিকর খাবার, শরীরচর্চায় শরীর ও মন অনেক বেশি ভাল থাকে।