Heart Attack: বুকে ব্যথা মানেই হার্ট অ্যাটাক নয়, কখন বিপদ বুঝবেন

গুড হেলথ ডেস্ক

চৈতালী চক্রবর্তী

বুকে ব্যথা মানেই হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack) ভেবে নেন অনেকেই। বুকে ব্যথা ছাড়াও নীরবে আসতে পারে হার্ট অ্যাটাক। বুকে ব্যথা ছাড়াও আরও নানারকম উপসর্গ হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। তাই সেই সব লক্ষণ সঠিকভাবে চেনা জরুরি। জানা জরুরি, কী কী নিয়ম মানলে সুস্থ ও সবল থাকবে হার্ট। এই নিয়েই বিস্তারিত আলোচনায় মেডিকা সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ডিরেক্টর অফ ক্যাথল্যাব, ডক্টর দিলীপ কুমার।

 

হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) ব্যথা বোঝা যাবে কী করে?

বুকের ব্যথা মানেই কার্ডিয়াক পেইন নয়। গ্যাস-অম্বলের ব্যথার সঙ্গে অনেকে হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) ব্যথা গুলিয়ে ফেলেন। আগে কার্ডিয়াক পেইনের লক্ষণ চিনতে হবে। ধরুন, বসে আছেন। হঠাৎ করে বুকে ব্যথা শুরু হল। মনে হবে বুকে চাপ ধরছে। এই ব্যথা যদি বুক থেকে ঠেলে গলার দিকে উঠতে শুরু করে, সেই সঙ্গে হাতেও ব্যথা শুরু হয় তাহলে সাবধান হতে হবে। ব্যথার সঙ্গেই সারা শরীরে বিজবিজে ঘাম শুরু হয় অনেকের। মনে হবে বুকে পাথর চেপে বসেছে। এটাই অ্যালার্মিং। হার্টে অ্যাটাক আসার আগে বড় লক্ষণ।

Heart Attack

কখন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে রোগীকে?

ব্যথা শুরু হলে এবং হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) লক্ষণ দেখলে, কখন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে রোগীকে, কখন অ্যাম্বুল্যান্স ডাকতে হবে, সেটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। এই সময় প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য দেরিতেই বড় বিপদ হতে পারে। কাছাকাছির মধ্যে যে হাসপাতাল আছে সেখানে নিয়ে যাওয়াই ভাল। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

ওয়ার্ল্ড হার্ট অ্যাসোসিয়েশন, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন, ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস কার্ডিওলজি-র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যে গাইডলাইন তৈরি করেছে, তাতে বলা হয়েছে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলেই ৫ মিনিটের মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

Heart attack

গোল্ডেন আওয়ার কী? কেন বলা হয়?

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় সামান্য দেরি মানেই চিকিৎসাকে অবহেলা করা। হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) লক্ষণ দেওয়ার পর থেকে ১ ঘণ্টা অবধি সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাকেই বলে ‘গোল্ডেন আওয়ার’। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে রোগীকে পরীক্ষা করা হয়, ইসিজি, ইকো-কার্ডিয়াম শুরু করেন ডাক্তাররা। কিন্তু শুরুর ওই এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই যদি রোগীর চিকিৎসা না শুরু হয়, তাহলে হার্টের ক্ষতি বাড়তে থাকে। ৪০ শতাংশ রোগীকে দেখা গেছে বুকে ব্যথা ও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছেছেন। আবার অনেকে এই সময়টা পার করে হাসপাতালে আসেন। ততক্ষণে হার্টের ক্ষতি আরও বেড়ে যায়। তাই যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে, রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনাও বাড়বে।

Bottlemouth Syndrome: বাচ্চা অনেকক্ষণ বোতল মুখে রাখে? ছোট্ট সোনার ওরাল হেলথের যত্ন নিন

Heart Attacks

বিভ্রান্ত হবেন না

হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) রোগীর পরিবারের লোকজন অনেক সময়েই বিভ্রান্ত হয়ে যান। রোগীর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা থ্রম্বোলাইসিস করতে হবে শুনে ভয় পেয়ে যান। নানা জনকে ফোন করতে শুরু করেন, সেকেন্ড অপিনিয়ন নেওয়ার চেষ্টা করেন। এই বিভ্রান্তির কারণে রোগীর চিকিৎসা শুরু হতেও দেরি হয়। মনে রাখতে হবে, এই জটিল সময়ে ডাক্তারই সবচেয়ে বড় বন্ধু। ভরসা রাখলে ও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে লাভই হবে।

হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে দ্রুত সুস্থ করতে সবচেয়ে ভাল ও কার্যকরি চিকিৎসা হল প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করে হার্টের আর্টারির কোথায়, কতটা ব্লক আছে সেটা দেখার পর প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয়।  করোনারিতে জমা রক্তের ক্লট গলানোর জন্য সরাসরি ভেন–এ ইঞ্জেকশন (থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি) দেওয়া হয়। ডাক্তার রোগীকে পরীক্ষা করে সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।

 

হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পরে রোগীর যত্ন জরুরি

হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরবর্তী সময়ে রোগীর যত্ন জরুরি। যদি হার্টের অবস্থা খুব খারাপ না হয়, তাহলে প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন দেখতে হবে রোগী ঠিকমতো ওষুধ খাচ্ছেন কিনা, জরুরি পথ্য নিচ্ছেন কিনা। রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার প্রথম এক থেকে দুই সপ্তাহ ডাক্তারের দেওয়া গাইডলাইন মানতেই হবে। রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে পরিবারের লোকজনকে। সঠিক সময় চেকআপও জরুরি।

golden hour in heart attack

হার্ট অ্যাটাকের রোগী যদি দেরি করে ডাক্তারের কাছে যান, হার্টের অবস্থা বেশি খারাপ থাকে, তাহলে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে কিছুটা হার্ট-ফাংশন ঠিক করা হয়। তবে তখনও রোগীর হার্ট দুর্বলই থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনটাই দেখা যায়। যদি দেখা যায় সার্জারির পরে হার্ট ৪০-৪৫ শতাংশ কাজ করছে, তাহলে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরে সেইমতো ওষুধপত্র, এক্সারসাইজ দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ে রোগীকে পরীক্ষা করারও দরকার পড়ে।

তৃতীয় ক্ষেত্রে যদি হার্ট ফাংশন অনেকটাই বিগড়ে গিয়ে থাকে, ডাক্তারবাবুর তেমন কিছু করার থাকে না, দেখা যায় হার্ট ৩০% কাজ করছে, তাহলে সার্জারির পরে রোগীকে সেইমতো গাইডলাইন দিয়ে দেওয়া হয়। কম কাজ করতে বলা হয়, কম জল খেতে হবে, রক্তচাপ কম থাকায় সেইমতো ওষুধপত্র দেওয়া হয়, কিছু নির্দিষ্ট এক্সারসাইজ দেওয়া হয়। এগুলো অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে রোগীকে।

 

কোভিডের সময় হার্ট অ্যাটাক বেড়েছিল, কীভাবে হার্টকে সামলে রাখব

করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের সময় অনেক কমবয়সীদের মধ্যেও কার্ডিওভাস্কুলার রোগ দেখা গিয়েছিল। এক্ষেত্রে লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট দরকার। ধূমপান কমাতে হবে। ডায়েটের দিকে নজর দিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, জাঙ্ক ফুড, বেশি কার্ব খাওয়া কমাতে হবে। এখন বেশিরভাগ সময়েই বসে কাজ করতে হয়। শরীর নাড়াচাড়া তেমনভাবে হয় না। তাই প্রতিদিনে কিছুটা সময় হলেও শরীরচর্চা দরকার।

সেডেন্টারি লাইস্টাইলে হার্টের রোগের অন্যতম বড় কারণ ধূমপান। তাই ধূমপান না ছাড়লে বা না কমালে হার্ট ভাল রাখা মুশকিল। প্রতিদিনিরে জীবনে নিয়ম মানলে তবেই হৃদরোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।