
Heart Attack: কমবয়সে কেন বাড়ছে হার্টের রোগ? ঠিক কোন বয়স থেকে চেকআপ করানো জরুরি
জীবনযাত্রার অনিয়ম নাকি জন্মগত ত্রুটি, কমবয়সে হার্টের সমস্যা (Heart Attack) কেন বাড়ছে? বিশেষ করে ৪০ বছর বা তার কমবয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়েছে। হৃদরোগ এত দ্রুত ও এমনভাবে আসছে যে বাঁচানোর সময়টুকু পাওয়া যাচ্ছে না। কেন কমবয়সীদের মধ্যে হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়ছে, কী কারণ, এর সমাধানই বা কী, সে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় নারায়ণ মেমোরিয়াল হসপিটালের কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট ডক্টর সুদেব মুখার্জি।
কমবয়সীদের মধ্যেই কি হার্টের অসুখ বাড়ছে?
ডাক্তারবাবু বলছেন, গত কয়েক মাস বা কয়েক বছরের পরিসংখ্যাণ দেখলে বোঝা যাবে ৪০ বছর বা কমবয়সীদের মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বা ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজের প্রকোপ (Heart Attack) বেড়েছে। অনেকক্ষেত্রেই হার্টের অসুখ এমন মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে যে বাঁচানোর সময়টাও পাওয়া যাচ্ছে না। এখনকার সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, জীবনযাপনে অসংযম-অনিয়মই এর অন্যতম কারণ।
আগে বেশি বয়সীদের মধ্যে এমন হার্টের রোগের চিকিৎসা করা হত, এখন কমবয়সীদের মধ্যে অসুখ ধরা পড়ছে। রোগের সূত্রপাত হচ্ছে অনেকটাই আগে। এমন নয় যে ৪০ বছরে রোগের সূত্রপাত হয়ে ৬০ বছরে গিয়ে তার লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। বরং অনেক আগে অসুখ বাসা বাঁধছে শরীরে।
রোগের সূত্রপাত হচ্ছে অনেক আগে থেকেই, ছোটদের কতটা সাবধান হওয়া দরকার?
ডাক্তারি ভাষায় একটা কথা আছে, প্রাইমর্ডিয়াল প্রিভেনশন। মানে হল, রোগ যখন তৈরিই হয়নি, তখন থেকে সাবধান হওয়া। একটা পর্যায় থাকে যখন হার্টের রোগ ধরে যায়, তখন ডাক্তারবাবুরা বলেন কী খাবেন, কী খাবেন না, কেমন ভাবে থাকবেন ইত্যাদি। এর আগের পর্যায়টা হল প্রাইমারি প্রিভেনশন, যখন শরীরে লক্ষণ জানান দেয়নি তখন থেকে সাবধান হওয়া। এরও আগের পর্যায় হল প্রাইমর্ডিয়াল প্রিভেনশন। মানে একটা ছোট বাচ্চা যে ধূমপান করতে শেখেনি তাকে সেই সময় থেকে বোঝানো যে ধূমপান কতটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। একদম ছোট থেকেই সাবধান করা।
আরেকটা ব্যাপার হয় য়ে বাচ্চাদের প্রচুর জাঙ্ক ফুড খাওয়ান বাবা-মা। অথবা বেশি করে বারে বারে খাওয়াতে চেষ্টা করেন। অনেক অভিভাবকই ভাবেন, বাচ্চা খাচ্ছে না বা কম খাচ্ছে। ফলে তার যতটা খিদে তার থেকেও বেশি জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে। ছোট থেকে এই অভ্যাস বাচ্চাদের মধ্যে ওবেসিটি বাড়াচ্ছে। শুধু যে নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ফ্যাট বাড়াচ্ছে তা নয়, রক্তনালীতেও চর্বির স্তর জমা হচ্ছে ধীরে ধীরে। পরবর্তী সময়ে গিয়েই এটাই হয়ত করোনারি হার্ট ডিজিজের কারণ হয়ে উঠছে।
পেশার কারণে স্ট্রেস বাড়ছে, নাইট ডিউটি করতে হচ্ছে অনেককে, সেক্ষেত্রে লাইস্টাইল মডিফিকেশন হবে কী করে?
স্ট্রেস হার্টের রোগের অন্যতম বড় রিস্ক ফ্যাক্টর (Heart Attack)। এর সূত্রপাত বুকে ব্য়থা দিয়ে। অনেক সময় হার্টের অ্য়াঞ্জিওগ্রাম করে দেখা যায় করোনারিতে কোনও ব্লক নেই, অথচ হার্টের অসুখ ধরে গেছে। এর কারণই হল স্ট্রেস। সময়ে ঘুমটাও ততটাই জরুরি। কারণ বডি মেকানিজম একটা সময় ধরে চলে, সেখানে নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া-ঘুম জরুরি। যদি পেশার কারণে বা অন্য কারণে ঘুম কম হয় তাহলে সমস্যা শুরু হতে থাকে। করোনারি হার্ট ডিজিজের এটাও একটা কারণ।
ঠিক সময় খাওয়াটাও জরুরি। অনেকেই নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করেন না। মিল স্কিপ করলেন, তারপর অনেকটা খেয়ে পেললেন। এইভাবে গোটা সিস্টেমটাই অনিয়মে চলতে থাকে। এটাও এক ধরনের রিস্ক ফ্যাক্টর যার প্রভাব ভবিষ্যতে গিয়ে দেখা যায়।
লাইস্টাইলে যদি অনিয়ম হতে থাকে তাহলে চেষ্টা করুন নিয়মিত এক্সারসাইজ করার। ট্রেডমিল করতে পারলে ভাল, না হলে হাঁটাহাঁটি করুন। বাড়ির ছাদেই নিয়ম করে হাঁটুন। দৌড়োবার দরকার নেই, স্বাভাবিক গতিতেই রোজ হাঁটুন, এতে শরীর অনেক ভাল থাকবে।
খেলতে খেলতে বা জিম করতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক আকছার করছে? এর কারণ কী?
গত কয়েক বছরে এমন রিপোর্ট অনেকগুলোই পাওয়া গেছে (Heart Attack)। সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে খবর বাইরে আসে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন খবর প্রকাশ্যে আসে না। এর কারণ অনেক হতে পারে। আগে থেকে হার্ট দুর্বল থাকলে বা জেনেটিক কারণ থাকতে পারে। তাছাড়া আরও একটা কারণ হল হাইপারট্রফিক অবস্ট্রাকটিভ কার্ডিওমায়োপ্যাথি। তাছাড়া হৃদস্পন্দন বা হার্টের ছন্দ বা রিদমের গণ্ডগোল হলেও এমনটা হতে পারে। আগে থেকে লক্ষণ বোঝা যায় না, আচমকাই রোগীর অ্যাটাক আসতে পারে।
যদি পরিবারে কারও হার্টের রোগের ইতিহাস থাকে বা পরিবারে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যু হয়েছে এমন ঘটনা থাকে, তাহলে ১২ বছর বয়স থেকেই সতর্ক হতে হবে। বাচ্চার একটা ইকোকার্ডিওগ্রাফি করিয়ে রাখলে ভাল হয়। হার্টের ধমনীতে কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা তা আগে থেকে জানতে পারলে বিপদ কমানো যায়। সেক্ষেত্রে ছোট বয়স থেকেই চেক আপ করিয়ে রাখলে বড় বিপদ এড়ানো যেতে পারে।
ছোটবেলায় পরীক্ষা করাতে গিয়ে যদি হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে তাহলে?
চিন্তার কিছু নেই। আধুনিক থেরাপিতে রোগ নির্ণয় ও তার ট্রিটমেন্ট অনেক সহজ। সে স্ট্রাকচারাল হার্ট ডিজিজ হোক বা ভালভুলার হার্ট ডিজিজ বা ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ হোক, বা হার্টে ছিদ্র বা হার্ট ফেলিওর হোক, রোগ ধরা পড়লে তার ট্রিটমেন্টও আছে। এমন মনে করার কারণ নেই যে, হার্টের রোগ মানেই জীবন শেষ। হয়ত কিছু বিধিনিষেধ বাড়বে, কিন্তু এর পরেও সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন কাটানো সম্ভব। তার জন্য সঠিক ডায়াগনসিস ও অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্টের অধীনে থেকে ট্রিটমেন্ট দরকার।
কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজে হার্টে ফুটো ধরা পড়লে, তার ট্রিটমেন্টের জন্যও কিন্তু আধুনিক ডিভাইস রয়েছে। সঠিক সময় রোগ নির্ণয় হলে তার চিকিৎসা সম্ভব। তাই হার্টের অসুখ মানেই অহেতুক চিন্তা বা টেনশনের দরকার নেই। বরং নিয়ম মানুন, ডাক্তারের পরামর্শে চলুন, তাহলেই আর ভয়ের কোনও কারণ থাকবে না।