
সংসার-পেশা-স্ট্রেস, হৃদয় ভাল নেই মেয়েদের, এই জিনই বলে দেবে হার্টের রোগ হচ্ছে কিনা
‘নারীচরিত্র বেজায় জটিল, কিছুই বুঝতে পারবে না…’ সত্যিই তাই। হৃদয়ের (Heart Disease) গভীরে মেয়েরা কত কিছু যে লুকিয়ে রাখে তার ইয়ত্তা নেই। হার্টের যতই হানি হোক, সবটা চেপে মুখ বুঝে কর্তব্যটুকু পালন করতে গিয়ে বিপদটা ঘটে। যুগ যুগ ধরে ধারণা ছিল হার্টের রোগ বুঝি পুরুষদেরই হয়। হার্ট অ্যাটাকে বেশি মৃত্যু হয় ছেলেদেরই। একচোখা সমীক্ষার ফল যে কতটা ভুল তার প্রমাণ দিয়েছে আধুনিক গবেষণা। দেশের ৪১ শতাংশের বেশি মহিলার হার্টের অসুখের ঝুঁকি রয়েছে।
প্রজননক্ষম সময়ে মেয়েদের ‘করোনারি হার্ট ডিজিজ’-এর আশঙ্কা কমে। কারণ ওই সময়ে হার্টের ঢাল হয়ে কাজ করে ইস্ট্রোজেন হরমোন। এই ‘হার্ট-প্রোটেক্টিভ’ হরমোনই সবরকম জটিলতা থেকে হার্টকে (Heart Disease) আগলে রাখে। কিন্তু ইদানীংকালে পরিবর্তিত জীবনযাত্রায় ইস্ট্রোজেনের সেই ঝাঁঝ কমছে। ফলে হার্টে ছ্যাঁদা হচ্ছে মেয়েদেরও। কার্ডিওলজিস্টরা বলছেন, পুরুষদের হৃদয়ে গোলমাল ধরা পড়লে তার চিকিৎসা যতটা কাজে দেয়, মেয়েদের ক্ষেত্রে ততটা দেয় না। কারণ, রোগ ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। মেয়েদের হার্টের রোগের সবচেয়ে বড় কারণই হল অবহেলা।
সংসার-পেশা-স্ট্রেস–হার্টের ওপর চাপ অনেক
একদণ্ড বিশ্রামের সময়ও হয়ত নেই। সকালে উঠে রান্নাবান্না সেরে, ঘরকন্না সামলে অটো-বাস-মেট্রো ঠেঙিয়ে ছুটতে হয় কর্মস্থলে। সেখানে গিয়েও মাথায় একরাশ চিন্তা। ‘প্রফেশনাল হ্যাজার্ডস’ এর সঙ্গে লড়তে হয়। আবার বাড়ি ফিরেই সংসারের হাজারো কাজ। একই সঙ্গে আছে মানসিক চাপ। সবকিছুর সঙ্গে যুঝতে গিয়ে হার্টের খেয়াল রাখতেই ভুলে যান মেয়েরা। তার ওপর খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম তো আছেই। ঘরকন্না সামলাতে গিয়ে ঠিকমতো প্রাতরাশ খান না অনেকেই। দিনভর পেস্ট্রি, রোল, চাউমিন যখন যা হাতের কাছে পাওয়া যায়। ধূমপান করেন যাঁরা, তাঁদের সমস্যা আরও। সরাসরি হার্টে ছুরি চলে। এফোঁড় ওঁফোড় হতে থাকে নিজের অজান্তেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাইফস্টাইলে অনিয়ম এবং স্ট্রেস–হার্টের সবচয়ে বড় শত্রু এই দুটোই।
মধ্য চল্লিশে দুর্বল হয় হার্টের বর্ম
স্ত্রী যৌন হরমোন ইস্ট্রোজেন রক্তনালীর নমনীয়তা ধরে রাখে। মেদ বা ক্যালসিয়ামের স্তর জমতে দেয় না। ইস্ট্রোজেন হরমোন যতদিন স্বাভাবিকভাবে ক্ষরিত হয় হৃদপেশীকে (Heart Disease) শক্ত হতে দেয় না। ফলে হৃদপিণ্ডে রক্ত ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহে বাধা তৈরি হয় না। কিন্তু মেনোপজের পরে ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ কমতে শুরু করে। মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল বন্ধ হয়ে যায়। ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় রক্তনালীর মধ্যে প্লাক জমার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই সময় যদি পেট-কোমরে মেদ জমতে থাকে বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গে মেদের পরিমাণ বাড়ে, কোলেস্টেরল বেড়ে যায় তাহলেই বিপদ। খারাপ কোলেস্টেরল ফাইব্রোলোজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যা ব্লাড ক্লটের অন্যতম কারণ। তখন আচমকা হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায় মহিলাদের।
স্তন ক্যানসার হচ্ছে না তো? নিজেই পরখ করে দেখুন
মেনোপজের সময় তাই বেশি সাবধান থাকা উচিত। নিয়ম মেনে শরীরচর্চা, সঠিক ডায়েট, পরিমাণ মতো জল খাওয়া জরুরি। নিয়মিত যোগব্যায়াম খুব কাজে দেয় এই সময়।
হৃদয় কি বিপদে? বলে দেবে জিন
ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির কার্ডিওলজিস্টরা বলছেন, মেয়েদের হার্টের রোগের ঝুঁকি পুরুষদের থেকে বেশি। মেয়েদের হৃদরোগের লক্ষণও পুরুষদের থেকে আলাদা। এই লক্ষণ চিনতে দেরি হয় বলেই মেয়েদের চিকিৎসা অনেক দেরিতে শুরু হয়। বিপদ এমন জাঁকিয়ে বসে যে তখন আর কিছু করার থাকে না।
‘আমেরিকান হার্ট জার্নাল প্লাস’-এ এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, মেয়েদের হার্টের সঙ্গে যোগসূত্র আছে RAP1GAP2 এই জিনের। মেয়েদের হার্টের রোগ (Heart Disease) হবে কিনা বা লক্ষণ কী কী প্রকাশ পাবে সেসবই বলে দেবে এই জিন। মেনোপজ হয়ে গেছে এমন ১৭ হাজার মহিলাকে নিয়ে পরীক্ষা করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ। তাতেই এই জিন মার্কারের সঙ্গে হার্টের রোগের সম্পর্ক খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা।
গবেষকরা বলছেন, বংশে এই রোগের ইতিহাস, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ধাত, ধূমপানের অভ্যেস, বেশি কোলেস্টেরল, অত্যধিক স্ট্রেস থাকলেই ডাক্তার দেখান। বছরে অন্তত এক বার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা কিন্তু জরুরি। ফল, আনাজপাতি, চিনি, তেল, ঘি, মাখন ছাড়া বাড়ির খাবার খান। রেডমিট পারলে এড়িয়ে চলুন। ডায়েটে মাংসের বদলে মাছ বেশি রাখুন। টেকনোলজি যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন।
মানসিক চাপ বাড়লে অনেকের মধ্যেই বেশি খাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। যা থেকে ওজন বাড়ে। তাই এই সময় সমস্ত মানসিক উত্তেজনা, চাপ, স্ট্রেস দূরে রাখাই ভাল। রাতে টানা আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি। নিয়ম করে হেলথ চেকআপ দরকার। শুধু পরিবারের খেয়াল না রেখে মেয়েরা একটু নিজেদের যত্নও নিন, তাহলেই যে কোনও বিপদ সহজেই পার করা যাবে।