
মাত্র তিন ইঞ্চি ছিদ্র দিয়ে হয় হার্টে সার্জারি, যন্ত্রণা নেই, মিনিম্যাল ইনভ্যাসিভের সুবিধা কী কী
গুড হেলথ ডেস্ক
হৃদরোগ এবং হার্ট সার্জারি অতি পরিচিত দুটি শব্দ। আতঙ্কের নাম যদি হয় হৃদরোগ, তাহলে চরম আতঙ্ক বলা যায় হার্ট সার্জারিকে। হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচারের নামেই থরহরি কম্প মানুষজন। হার্ট সার্জারি মানেই বুকের হাড়ে কাটাছেঁড়া করে অতিদীর্ঘ এবং জটিল এক অস্ত্রোপচার, প্রাণের ঝুঁকি থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে, এমন বদ্ধমূল ধারণা আছে অনেকেরই মনে। হার্ট সার্জারি নিয়ে তাই ট্রমাও বেশি।
ইদানীংকালে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতিতে হার্ট সার্জারি আর জটিল এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া নয়। আধুনিক পদ্ধতিতে অনেক দ্রুত হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচার সম্ভব। বেশি যন্ত্রণাও সইতে হয় না। পোস্ট সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের পরে খুব কমদিনে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাও সম্ভব। ‘মিনিমাল ইনভ্যাসিভ হার্ট সার্জারি’ (minimally invasive surgery) এমনই এক উন্নত পদ্ধতি।
মিনিমাল ইনভ্য়াসিভ হার্ট সার্জারি কী?
বাইপাস সার্জারিতে যেমন বুকের হাড় কাটতে হয়, এই পদ্ধতিতে তেমন নয়। খুব ছোট ছিদ্র দিয়েই হার্টে অস্ত্রোপচার করে ফেলতে পারেন কার্ডিওলজিস্টরা। একে মাইক্রোসার্জারি বা স্মল কাট সার্জারিও (minimally invasive surgery) বলা হয়।
বস্তুত, মিনিমাল ইনভ্যাসিভ সার্জারিতে ব্রেস্টবোন ব্রেক করার প্রয়োজন পড়ে না। হৃদপিণ্ড অবধি পৌঁছতে যতটুকু ছিদ্র করার দরকার ঠিক ততটাই করা হয়, অর্থাৎ ডাক্তারি ভাষায় বলতে গেলে ‘মিনি থোরাকোটমি ইনশিসন’ করা হয়। একে ‘কি-হোল সার্জারি’ও বলে।
দু’ভাবে করা যায় এই সার্জারি–
রাইট অ্যান্টিরিয়র মিনি-থোরাকোটোমি ইনশিসন (RAMT)-–এই পদ্ধতিতে আড়াই থেকে তিন ইঞ্চি ইনশিসন করা হয়। সাধারণ এই অস্ত্রোপচারে ভালভ অপারেশন হয়, কার্ডিয়াক হোলস মেরামতি হয়, কার্ডিয়াক টিউমার এবং ফরেন বডি বের করে আনা হয়।
লেফ্ট অ্যান্টিরিয়র মিনি-থোরাকোটমি ইনশিসন (LAMT)–এই পদ্ধতি হল সবচেয়ে পরিচিত, সাধারণত বাইপাস সার্জারি, ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজের অস্ত্রোপচারে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করি আমরা। বুকের বাঁ দিকে ২ ইঞ্চির মতো ছিদ্র করা হয়। পাঁজরের মধ্যে দিয়ে হৃদপিণ্ড অবধি পৌঁছে সার্জারি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় বুকের হাড় চেড়ার প্রয়োজন পড়ে না এবং পোস্ট সার্জারি পর্যায়ে রোগীর যন্ত্রণাও কম হয়।
রোবট দিয়েও করা যায় মাইক্রোসার্জারি (minimally invasive surgery)
মিনিমাল ইনভ্যাসিভ সার্জারির সুবিধা হল এটি রোবোটিক আর্ম ব্যবহার করেও করা যায়। ছোট ভিডিও ক্যামেরা পাঁজরের মধ্যে দিয়ে হার্টের কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়া যায়। এই ভিডিও ক্যামেরায় হার্টের অবস্থা ভালভাবে দেখেশুনে অস্ত্রোপচার করা হয়।
হার্টে সার্জারি আর আতঙ্ক নয়, ১০০% নিরাপদ, সহজ করে বললেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
রোবোটিক আর্মের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে। সুবিধা হল, রোবোটিক টুলের ভিডিও ক্যামেরায় হার্টের থ্রি-ডি ইমেজ ভিডিও মনিটর করা যায়। আধুনিক হার্ট সার্জারির এটা একটা বিশেষ দিক। তবে অসুবিধা হল, রোবোটিক সার্জারির প্রয়োগ এখনও সেভাবে শুরু হয়নি আমাদের দেশে। আর এই প্রক্রিয়ায় সময়ও অনেক বেশি লাগে। সেই সঙ্গে কার্ডিওলজিস্টদের অভিজ্ঞতাও দরকার। রোবোটিক সার্জারি ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। দেশে সেইভাবে এর প্রয়োগ শুরু হলে হার্টে অস্ত্রোপচার অনেক সহজ হয়ে যাবে।
এই সার্জারির সুবিধা কী কী?
১) ওপেন হার্ট মানেই ‘ব্রেস্টবোন ক্র্যাকিং’ অর্থাৎ বুকের হাড় মাঝখান থেকে কাটতে হয়। এই প্রক্রিয়া যেমন সময়সাপেক্ষ তেমনি পোস্ট সার্জরি পর্যায়ে রোগীর সেরে উঠতেও অনেক বেশিদিন সময় লাগে। মিনিমাল ইনভ্যাসিভ সার্জারিতে (minimally invasive surgery) ব্রেস্টবোন ব্রেক করার দরকার পড়ে না।
২) বুকে কোনও ক্ষতচিহ্ন থাকে না। সার্জারির দাগ সহজেই মিলিয়ে যায়।
৩) যেহেতু খুব ছোট ছিদ্র বা ইনশিসন করা হয় তাই ক্ষত তাড়াতাড়ি সেরে যায়। কোনওরকম রক্তক্ষরণ হয় না।
৪) খুব তাড়াতাড়ি রোগী সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে পারে। পোস্ট-সার্জারি পর্বে জটিলতা যেমন কম, তেমনই খুব দ্রুত রোগী তার স্বাভাবিক কাজকর্মও শুরু করতে পারে।
৫) এই পদ্ধতিতে যন্ত্রণা কম। প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকিও কম।
৬) অন্যান্য হার্ট সার্জারিতে যেখানে প্রায় তিন মাস সাগে সুস্থ হয়ে উঠতে মিনিমাল ইনভ্যাসিভে সাত দিনের মধ্যেই চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে রোগী।
৭) সার্জারির (minimally invasive surgery) এক থেকে দুই দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে। যন্ত্রণা কম এবং স্পিডি রিকভারির জন্যই এই সার্জারির প্রয়োগ এখন সবচেয়ে বেশি।