
Chronic Kidney Disease: ক্রনিক কিডনির অসুখে বেশি ভোগেন মেয়েরা, অযত্ন আর অবহেলাই কারণ
গুড হেলথ ডেস্ক
কথায় বলে মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না। কিডনির (Chronic Kidney Disease) ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা তেমনই। শরীরের ছোট এই দুটি অঙ্গের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা শরীরের দূষিত রেচন পদার্থ টেনে বের করে দিয়ে সাফসুতরো রাখার দায়িত্ব কিডনিরই। যদি দূষিত পদার্থ শরীর থেকে না বের হয়, তাহলে শরীর তার জবাব দেবেই। হচ্ছেও তাই। শরীরকে সার্বিক ভাবে সুস্থ রাখার জন্য কিডনি ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা গুরুত্ব রয়েছে মস্তিষ্ক, হার্টের মতো অঙ্গগুলির। আর সমীক্ষায় দেখা গেছে, পুরুষদের থেকে মহিলাদের কিডনির অসুখ অনেক বেশি হয়। বিশেষ করে ভারতীয় মহিলাদের ক্রনিক কিডনির রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি।
২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ভারতীয় পুরুষদের ক্রনিক কিডনির রোগ বা সিকেডি (Chronic Kidney Disease)-তে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা যেখানে ৯ শতাংশের কাছাকাছি, মহিলাদের সংখ্যা সেখানে ১১ শতাংশের বেশি। নিজের শরীরের প্রতি অযত্ন, রোগ লুকিয়ে রাখার প্রবণতা, লজ্জা-সঙ্কোচে মুখ না খোলার কারণে এ দেশেই মহিলাদের মধ্যে কিডনির রোগ, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের মতো অসুখ বেড়ে চলেছে।
কিডনির (Chronic Kidney Disease) অসুখ মেয়েদের কেন বেশি?
মহিলাদের কিডনির অসুখ (Chronic Kidney Disease) বেশি হওয়ার কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস। আমাদের দেশে ব্লাড প্রেসার ও সুগারের সমস্যাই সবচেয়ে বেশি। ঘরে ঘরেই ডায়াবেটিস ও সুগারে আক্রান্ত মহিলারা। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, অনেক সময় সুগার ও প্রেশার থাকা সত্ত্বেও রোগীরা জানতে পারেন না তাঁরা আক্রান্ত। তাই সঠিক সময় এর চিকিৎসাও হয় না।
কারণ আরও আছে। আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত পরিবারে অধিকাংশ মহিলাই অসুখ লুকিয়ে যান। বিশেষ করে প্রস্রাবের জায়গায় সংক্রমণ হলে বেশিরভাগ সময়েই লজ্জার কারণে লুকিয়ে রাখেন মহিলারা। নেফ্রাইটিসের মতো সমস্যা, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন মেয়েদেরই বেশি হয়। আর সেই থেকেই ক্রনিক কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়ে। মেয়েরা গর্ভবতী হওয়ার পরে যদি ইউরিনারি ইনফেকশন বা নেফ্রাইটিসের মতো অটোইমিউন ডিজিজ হানা দিতে থাকে, তাহলে কিডনির অসুখের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মাথা ঘোড়া, খিদে কমে যাওয়া, সবসময় বমি ভাব, ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে থাকলে দেরি করা ঠিক হবে না।
Anemia: রক্তাল্পতা থাবা বসাবে না, রোজকার জীবনে অভ্যাস বদলান
মেয়েরা কীভাবে সতর্ক হবেন?
প্রেশার ও সুগার নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকবে। তাই বছরে অন্তত একবার রুটিন ইউরিন টেস্ট, ইউরিয়া ক্রিয়েটিনিন ও অ্যালবুমিন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
বেশি করে জল খেতে হবে। ফলের রস খান।
শুধু জল খেলেই হবে না, ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সুষম খাবারও খেতে হবে। বেশি নুন বা জলীয় খাবার খেলেও কিডনির ওপর চাপ বাড়ে। খাবার পাতে একগাদা কাঁচা নুন খেলেও বিপত্তি বাড়বে। মেয়েদের এই প্রবণতা বেশি থাকে। তাই চেষ্টা করবেন কম নুন নিয়ে রান্না করে খেতে।
মাছ, ডিম, মাংস সবই খান তবে সঠিক পরিমাণে। কিডনির সমস্যা থাকলে বেশি প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া ঠিক হবে না। পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে শরীর বুঝে প্রোটিন জাতীয় খাবার খান।
ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়াদাওয়া, ধূমপান, অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তি, কায়িক শ্রমের অভাব, অতিরিক্ত ওজন—প্রতিটি ফ্যাক্টর কিডনির অসুখের জন্য দায়ী। সুষম খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চাও করতে হবে। কিডনি একবার অকেজো হতে শুরু করলে ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া চিকিৎসার পথ থাকে না। কিন্তু নিয়ম মেনে চললে, রোগী দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।
রোগ লুকিয়ে যাবেন না। ডায়াবেটিসের রোগী হলে নিয়মিত চেকআপ জরুরি। প্রস্রাবের সমস্যা, বা সংক্রমণজনিত সমস্যা থাকলেও ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া দরকার।