
ক্রনিক কিডনির রোগে (CKD) বেশি ভুছে মেয়েরাই। ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা বলছে, বিশ্বের জনসংখ্যার ১০ শতাংশই ক্রনিক কিডনির অসুখে আক্রান্ত। প্রতি বছরে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয় কিডনির অসুখে। এর দুটি কারণ– সঠিক সময় রোগের ডায়াগনসিস হচ্ছে না এবং কিডনির অসুখের খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা করানো অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। চিন্তার কারণ হল, মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন এবং ক্রনিক কিডনির রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। লজ্জা ও সঙ্কোচের কারণে রোগ লুকিয়ে যাচ্ছে অনেকেই। আবার অনেক পরিবারেই মেয়েদের অসুখ হলে তার সঠিক চিকিৎসা করানো হচ্ছে না।
ক্রনিক কিডনির অসুখে (CKD) মেয়েদেরই কেন বেশি হচ্ছে?
সমীক্ষায় দেখা গেছে, পুরুষদের থেকে মহিলাদের কিডনির অসুখ অনেক বেশি হয়। বিশেষ করে ভারতীয় মহিলাদের ক্রনিক কিডনির রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি। ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ভারতীয় পুরুষদের ক্রনিক কিডনির রোগ বা সিকেডি (Chronic Kidney Disease)-তে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা যেখানে ৯ শতাংশের কাছাকাছি, মহিলাদের সংখ্যা সেখানে ১১ শতাংশের বেশি।
মেয়েদের কিডনির রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ অনেক–
১) ডায়াবেটিস অন্যতম প্রধান কারণ। ৫৫ বছরের কমবয়সি মহিলাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এবং এই ডায়াবেটিসই ক্রনিক কিডনির অসুখ বা সিকেডি-র (CKD) অন্যতম কারণ।
২) আজকের এই গতিময় জীবনে কর্মক্ষেত্রের টেনশন, বাতানুকূল পরিবেশে বসে কাজ করার অভ্যাস, কম পরিশ্রম, অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া এবং ধূমপান, পুরুষ ও মহিলা নির্বিশেষে সকলকেই ঠেলে দিচ্ছে বিপদের মুখে। তা ছাড়াও রয়েছে ওবেসিটি।
৩) হাইপারটেনশন সিকেডি-র (CKD) অন্যতম কারণ।
Tomato Flu: টমেটো জ্বর ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে কেরলে, আক্রান্ত ৮০ জন শিশু
৪) প্রেগন্যান্সির সময় অনেক রকম শারীরিক জটিলতা হতে দেখা যায়। গর্ভবতী মা বেশি হাইপারটেনশনে ভুগলে তাঁর সিকেডি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাছাড়া বিভিন্ন রকম ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো রয়েছেই।
পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, কম ঘুম, অতিরিক্ত স্ট্রেস, বিশ্রামের অভাব এবং রোগ লুকিয়ে রাখার প্রবণতা মেয়েদের মধ্যে মারাত্মক সব অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কিডনির অসুখ হবে না, মেয়েরা শরীরে যত্ন নিন, নিয়ম মানুন
দিনে পর্যাপ্ত জল খেতে হবে। পারলে গ্লাস মেপে জল খান। কতটা আপনার সারাদিনে জরুরি তা বিশেষজ্ঞের থেকে জেনে নিলে ভাল হয়।
নিয়মত শরীরচর্চা করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে কিডনির অসুখ থাবা বসাবে না।
ব্লাড প্রেসার ও সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রুটিন চেক আপ করাতে ভুলবেন না।
ধূমপান ও অ্যালকোহলের নেশা ছাড়তে হবে।
নিজে থেকে ডাক্তারি করে একগাদা ওষুধ খাবেন না। বিশেষ করে আইবুপ্রোফেন ও ন্যাপ্রোক্সেন জাতীয় ওষুধ ডাক্তারকে জিজ্ঞেস না করে খাবেন না।
মাছ, ডিম, মাংস সবই খান তবে সঠিক পরিমাণে। কিডনির সমস্যা থাকলে বেশি প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া ঠিক হবে না। পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে শরীর বুঝে প্রোটিন জাতীয় খাবার খান।
রোগ লুকিয়ে যাবেন না। ডায়াবেটিসের রোগী হলে নিয়মিত চেকআপ জরুরি। প্রস্রাবের সমস্যা, বা সংক্রমণজনিত সমস্যা থাকলেও ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া দরকার।