
ভাইরাল হেপাটাইটিস: কারও জন্য অপেক্ষা করে না, বাড়িয়ে চলে প্রাণের ঝুঁকি! তবে ধরা পড়লে সহজে সারে
তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
ভাইরাল হেপাটাইটিস নিয়ে সামগ্রিক ধারণা সকলের জন্যই খুব জরুরি মনে করছেন চিকিৎসকরা। সেই উপলক্ষেই প্রতি বছর ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়। কয়েক দিন আগেই পেরিয়েছে সেই দিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিসের সংক্রমণ শেষের শুরু করতে পারলে, তবেই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের সার্থকতা। ১৯২৫ সালের ২৮ জুলাই মার্কিন বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লামবার্গ জন্মেছিলেন। তিনিই হেপাটাইটিস বি ভাইরাসটি আবিষ্কার করেছিলেন প্রথম, এ জন্য নোবেল পুরস্কারও পেয়েছিলেন। তাঁরই জন্মদিন উপলক্ষে এই দিবস নির্ধারিত। প্রতি বছর একটি করে থিম ঠিক হয় এই দিবসকে উপলক্ষ করে।
হেপাটাইটিস ভাইরাস কী, কেন হয় এর সংক্রমণ, সংক্রমণের ফলে কী কী অসুখ হয়, কী করেই বা এই ভাইরাস দূর করা সম্ভব, কোভিড আবহে এ অসুখের পরিস্থিতি কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে,– এই সমস্তটা নিয়ে সহজ ও বিস্তারিত আলোচনায় রয়েছেন কনসালট্যান্ট গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডক্টর সঞ্জয় ব্যানার্জী।
হেপাটাইটিস বি কী?
এটি এক ধরনের ডিএনএ ভাইরাস, যা লিভারকে আক্রমণ করে। এমনিতে এই ভাইরাসটি খুব সাধারণ। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে অনেকটাই বেশি পরিমাণে দেখা যায়। এই ভাইরাসটি সংক্রমণের অন্যতম একটি প্রধান কারণ হল, জন্মের সময়ে মায়ের শরীর থেকে সদ্যোজাত সন্তানের শরীরে সংক্রমণ ঘটা। বেশির ভাগ দেশে এই সংক্রমণই দেখা যায়। এছাড়াও কোনও এক সংক্রামিত বাচ্চা থেকে অন্য বাচ্চার শরীরেও ভাইরাসটি ছড়ায়। একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া খেলাধুলো করা, এসবের মধ্যেই সম্ভাবনা থাকে সংক্রমণের।
হেপাটাইটিস কীভাবে ছড়ায়
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ছড়ানোর মাধ্যম কিন্তু শরীরের ফ্লুইড। রক্ত, থুতু, বীর্য– এসবের মাধ্যমে এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ভাইরাসটি। তাই যে কোনও কারও ব্যবহারের ছুঁচ, ক্ষুর, টুথব্রাশ, শারীরিক সংসর্গ– এসব বিষয়গুলি সংক্রমণের মুখ্য কারণ হয়ে উঠতে পারে। তবে ভাইরাসটি হাওয়ায় না ছড়ালেও শরীরের বাইরে বেঁচে থাকে সাত দিন পর্যন্ত।
ধরা যাক কেউ কোথাও থুতু ফেলেছে, কোনও ভাবে শরীরে কোথাও কেটে গিয়ে রক্ত লেগে গেছে– এসব ক্ষেত্রে যদি হেপাটাইটিস বি শরীরে থাকে, তবে তা শরীরের বাইরেও বাঁচবে সাত দিন পর্যন্ত। তাই অনেক সময়ে রোগীর অজান্তেই অন্য ব্যক্তির সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।
আর কোনও ভাবে যদি শরীরে একবার এই ভাইরাস প্রবেশ করে, তাহলে লিভার আক্রান্ত হয়। সংক্রমণ হয় সেখানে। শরীরে তারই নানা উপসর্গ দেখা দেয়, অসুস্থতা হিসেবে।
হেপাটাইটিস বি দু’রকম হয়, অ্যাকিউট এবং ক্রনিক, তফাত কী?
অ্যাকিউট হেপাটাইটিস হয় সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের। তাঁদের শরীরে কোনও ভাবে ভাইরাসটি ঢুকলে জ্বর, জনডিস, খিদে কমে যাওয়া, সাদা মল, গা-বমি ভাব, হলুদ প্রস্রাব– এই সব উপসর্গ দেখা দেয় রোগীর শরীরে। শরীরে ভাইরাস ঢোকার ৬ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পরেও আসতে পারে উপসর্গ। সংক্রমণের প্রথম ১ মাস থেকে ৩ মাস উপসর্গের তীব্রতা থাকবে বেশি। আর ৬ মাসের মধ্যে সাধারণত নির্মূল হয়ে যায় ভাইরাস। তার পরে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়।
দ্বিতীয় ধরনের হেপাটাইটিস অর্থাৎ ক্রনিক হেপাটাইটিস হয়, মায়ের থেকে বাচ্চা সংক্রামিত হলে। ৫-১০ বছরের বাচ্চাদের কোনও ভাবে সংক্রমণ হলেও এমনটা হতে পারে। কারণ এই কম বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি ভাবে তৈরি হয় না শরীরে। তাই হেপাটাইটিস বি ভাইরাসটি শরীরে ঢুকলে শরীর তা চিনতে বা প্রতিরোধ করতে পারে না। ফলে ভাইরাসটি শরীরে থেকে যায়। আর শরীর যেহেতু চিনতে পারছে না, তাই কোনও উপসর্গও প্রকাশ করছে না।
উপসর্গ আসলে শরীরের প্রতিক্রিয়া ছাড়া আর কিছু নয়। ফলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শরীরের কোষের ডিএনএ-র ভিতরে এই ভাইরাসটি থেকে যায় সারা জীবন। কারও কারও হয়তো কখনও কখনও উপসর্গ দেখা যায়, লিভারে সংক্রমণ ঘটায়। ফলে জ্বর, বমি আরও নানা সমস্যা হতে থাকে। রক্তপরীক্ষা করালে হয়তো দেখা যায় সেই ভাইরাসের অস্তিত্ব। আবার কারও ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয় না। পুরোপুরি উপসর্গহীন ভাবে থেকে যান হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সঙ্গে নিয়ে।
উপসর্গহীন কেরিয়ার কারা?
যাঁদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ ঘটাচ্ছে ভাইরাসটি, তিনি চিকিৎসার পরিভাষায় ক্রনিক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। আর যাঁর সংক্রমণ বা কোনও অসুখের প্রকাশ নেই, তিনি উপসর্গহীন কেরিয়ার। সারা জীবন ভাইরাস সঙ্গে নিয়ে থেকে যাবেন তিনি। এতে করে তিনি নিজে আক্রান্ত না হলেও, তাঁর থেকে অন্যের শরীরে সংক্রমণ ঘটতে পারে নিজের অজান্তেই। তা রক্তের মাধ্যমে হোক বা যৌন সংসর্গের মাধ্যমে। নিজের এবং সকলের অজান্তেই সারা জীবন ধরে রোগ ছড়িয়ে যান তিনি।
তাই পরীক্ষা করা ভীষণ জরুরি। পরীক্ষায় হেপাটাইটিস ধরা পড়লে ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং নিয়মিত ফলো আপ করতে হবে। তা নইলে এমন হতে পারে, যিনি কেরিয়ার, তিনি কয়েক বছর পরে ক্রনিক অসুখে আক্রান্ত হলেন। কারণ একটি ভাইরাস কখন, কার শরীরে, কীভাবে আচরণ করবে, তার কোনও ঠিক নেই।
তবে কারও একবার অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বি হয়ে সেরে গেলে, শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। আর সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লড়াই করে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। তবে ক্রনিকের ক্ষেত্রে কিন্তু ভাইরাস থেকে যায়। অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না। তাই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই থেকে যান সংক্রামিত ব্যক্তি।
অবাধ সংক্রমণে ভয় কেন এত বেশি?
হেপাটাইটিস ভাইরাসের পাঁচটি স্ট্রেন আছে। এ, বি, সি, ডি, ই। হেপাটাইটিস এ এবং ই অ্যাকিউট ইনফেকশন করে, ক্রনিক করে না। বি এবং সি অ্যাকিউট ও ক্রনিক দুটোই ঘটায়। তবে সি কেবল ক্রনিক সংক্রমণই ঘটায়। এই স্ট্রেনের অ্যাকিউট প্রায় হয়ই না।
অ্যাকিউট হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে তো প্রভাব পড়েই। তাঁর শারীরিক অসুবিধা সামাল দিতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, খাওয়া, ওষুধ এ সব প্রয়োজন। তবে মনে রাখতে হবে, এই অসুস্থতার চেয়েও বেশি ঝুঁকি বাড়ায়, সংক্রমণের আশঙ্কা। আবার অ্যাকিউট সংক্রমণে অসুখ ছড়ায় কম, কিন্তু ক্রনিক হেপাটাইটিসে এই ছড়িয়ে পড়াটা সাংঘাতিক সমস্যা।
২০১৫ সালে হু একটি সার্ভে করে দেখে মোট হেপাটাইটিস সংক্রামিত জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ জীবনে অন্তত একবার হেপাটাইটিস পরীক্ষা করিয়েছেন। বাকি ৯০ শতাংশ করানইনি। অর্থাৎ তাঁরা জানেনই না, আদৌ হেপাটাইটিস বহন করছেন কিনা। সাধারণত রক্তদান করতে গেলে, বা মহিলাদের অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় পরীক্ষাটি নিশ্চিত ভাবে হয়। বা বড় কোনও অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও রুটিন ব্লাডটেস্টে এটা থাকে। কিন্তু ধরা যাক কোনও ব্যক্তি জীবনে রক্ত দেননি বা অস্ত্রোপচার হয়নি তাঁর, তাহলে তিনি হয়তো না জেনেই কেরিয়ার হয়ে থেকে গেলেন।
সময়ে ধরা না পড়লে লিভারের কতটা ক্ষতি?
হেপাটাইটিস বি বা সি দুটো অসুখই নির্দিষ্ট সময়ে ধরা না পড়লে, চিকিৎসা না হলে, উভয়ের ক্ষেত্রেই ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ সিরোসিস অফ লিভারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে আবার বছরে দুই থেকে পাঁচ শতাংশ রোগীর লিভার ক্যানসার হয়। লিভার ক্যানসার একবার হলে তা নিরাময় কার্যত অসম্ভব একটা ব্যাপার।
ফলে ক্রনিক হেপাটাইটিসটা ধরা পড়া জরুরি। কারণ কেরিয়ারও বুঝতে পারবেন না, কখন তিনি ক্রনিক হয়ে উঠবেন। এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখ যায়, লিভার সামান্য জানান দেয়, সমস্যা হয় শরীরে। তখন টুকটাক ওষুধ খান রোগী। সেই সময়ের মতো সেরেও যান হয়তো। ফলে ক্রনিক হেপাটাইটিস ধরাই পড়ে না। এক্ষেত্রে খুবই মুশকিল হয় পরবর্তী কালে লিভারকে বাঁচানো। কিন্তু সময়ে ধরা পড়লে, হয়তো চিকিৎসায় থাকতে হবে সারাজীবন, তবে প্রাণসংকট হবে না।
পাশাপাশি, এই ক্রনিক সংক্রমণের উপরে কারও যদি মদ্যপানের অভ্যেস থাকে, ডায়াবেটিস থাকে, ফ্যাটি লিভার থাকে, তাহলে তা রোগীর অজান্তেই মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। সিরোসিস অফ লিভারের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং এর ফলে লিভার ক্যানসার পর্যন্ত হয়। এই দু’ক্ষেত্রেই মর্বিডিটি অতি উচ্চ।
হেপাটাইটিস বি ও সি-এর তফাত কী?
হেপাটাইটিস সি-এর উপসর্গ সব বি-এর মতো হলেও, বি বেশি ক্ষতিকর। কারণ সি হল আরএনএ ভাইরাস। এটি লিভারের ভিতরে কোষের নিউক্লিয়াসে বাসা বাঁধে না। একে সারানো বা চিরতরে দূর করা অপেক্ষাকৃত সহজ। এটি অন্যের শরীরে সংক্রামিতও হয় কম পরিমাণে।
হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি-এর মধ্যে তুলনা করলে, আমি বলব বি অনেক বেশি মারাত্মক। কারণ বি বেশি মাত্রায় সংক্রমণ হয় অন্যের শরীরে। সি-এর চেয়ে বি দশ গুণ বেশি সংখ্যায় ছড়ায়। ধরা যাক, হেপাটাইটিস বি পজিটিভ রক্ত ও সি পজিটিভ রক্ত ইচ্ছে করে আলাদা আলাদা ১০০ জনের দেহে প্রবেশ করানো হল। সেক্ষেত্রে সি ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন ৩ জন। কিন্তু বি ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন ৩০ জন।
তাই সাধারণত দেখা যায়, বাড়িতে কারও হেপাটাইটিস বি হলে তা পরিবারের অন্য সদস্যদেরও হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অথবা যে সব জায়গায় মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে থাকেন, কোনও সংশোধনাগারে বা হস্টেলে– সেখানে হেপাটাইটিস বি অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে গিয়ে ভাইরাসটি মানুষের কোষের ডিএনএ-তে জাঁকিয়ে বসে। বংশবিস্তার করে। তাকে দূর করা কার্যত অসম্ভব হয়।
করোনাভাইরাস ও হেপাটাইটিস বি
করোনার সময়ে হেপাটাইটিসের আশঙ্কা আলাদা কিছু নয়। তবে কারও হেপাটাইটিস-জনিত লিভারের রোগ থাকলে তাঁর ইমিউনিটি এমনিতেই দুর্বল থাকে। ফলে সেটা করোনার জন্য সহজ আক্রমণের জায়গা হয়ে ওঠে। আর পাঁচটা ক্রনিক অসুখ থাকলে তা যেমন করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি ও মর্বিডিটি বাড়িয়ে দেয়, হেপাটাইটিসও তাই। মুশকিল হল, যদি জানাই না থাকে হেপাটাইটিসের অস্তিত্ব, তাহলে সহজেই করোনাভাইরাসের গ্রাহক হয়ে উঠবে শরীর।
আর একটা বিষয় খুব জরুরি, করোনাভাইরাস আবহে যেন কেউ হেপাটাইটিসকে অবহেলা না করেন। সেটা কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলেও, বিপুল পরিমাণে ঘটছে। আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি, বাইরে থেকে আসা বহু ক্রনিক রোগী আসতে পারছেন না ফলোআপ করানোর জন্য। বাইরে থেকে যাঁরা ওষুধ আনাতেন, তাঁরাও তা আনাতে পারছেন না। ফলে করোনা মহামারীর ক্ষতির থেকে কিছু কম ক্ষতি হচ্ছে না হেপাটাইটিস রোগীদেরও।
চিকিৎসা: টেস্টিং অ্যান্ড ভ্যাকসিন
এ দেশে ২০০৭ সাল থেকে হেপাটাইটিস বি টিকা চালু হয়েছে ইউনিভার্সাল ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রামের আওতায়। জন্মের সময়ে একটা, তার পরে আরও তিনটে ডোজ় দেওয়া হয়। এই ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে জন্মের সময়ে টিকা না নেওয়া থাকলে, ১৮ বছরের আগে পরীক্ষা করিয়ে টিকা নেওয়া উচিত যে কোনও সময়।
সমস্যার বিষয় হল, এই ভ্যাকসিন নিয়ে সচেতনতা প্রচার খুব অ্যাগ্রেসিভ নয় এখনও। পোলিও বা টিবি নিয়ে যতটা সচেতনতা আছে, এটায় নেই। এর কারণ হয়তো, হেপাটাইটিস অসুখের ক্ষতি তাৎক্ষণিক ও মারাত্মক নয়। সব মিলিয়ে সচেতনতা আরও অনেক বেশি দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৬ সালে বলেছে, ২০৩০-এর মধ্যে হেপাটাইটিস অসুখটি চলে যাবে পৃথিবী থেকে। সে জন্য টিকাকরণ জরুরি। টিকা নিতে থাকলে নতুন করে সংক্রমণ আর হবে না।
করোনাভাইরাসের সময়ে কারও যদি সেই টিকা নেওয়ার থাকে, তাহলেও হেপাটাইটিস ও কোভিড ভ্যাকসিনের মধ্যে দ্বন্দ্বের কোনও কারণ নেই। ১৪ দিন গ্যাপ দিয়ে দুটি টিকাই নেওয়া যাবে। কোনওটির জন্য অন্যটিকে অবহেলা করার বা এড়িয়ে যাওয়ার কোনও দরকার নেই।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস: হেপাটাইটিস-মুক্ত ভবিষ্যতের ডাক
এ জন্য দুটোই মাত্র উপায় রয়েছে, টেস্টিং এবং ভ্যাকসিনেশন। সমস্ত স্কুল, কলেজ, অফিস, হোস্টেল, জেল– সর্বত্র আরও বড় মাত্রায় টেস্ট এবং টিকাকরণ যতটা করা যাবে, তত দ্রুত এই অসুখ দূর হবে পৃথিবী থেকে।
আরও একটি বিষয় হল, হেপাটাইটিস অপেক্ষা করে থাকবে না কোনও কিছুর জন্য। কোভিডের ঢেউ আসবে, যাবে। দ্বিতীয়র পরে তৃতীয় ঢেউ আসবে কিনা কেউ জানে না। অন্য কোনও মহামারী হবে কিনা তাও অনিশ্চিত। এসবের মাঝে হেপাটাইটিসের প্রতি গুরুত্ব যেন না কে।
কখনও টেস্ট না হয়ে থাকলে, টেস্ট করাতে হবে। যে কোনও বয়সে টেস্ট করানো যেতে পারে। ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়লে চিকিৎসা করাতে হবে, ফলো আপ করাতে হবে। সংস্পর্শে থাকা মানুষদের সতর্ক করতে হবে। কারণ হেপাটাইটিস বি নিরাময়যোগ্য হলেও, তা সময়ে ধরা না পড়লে লিভারকে যে পর্যায়ে নিয়ে চলে যায়, সেখান থেকে জীবনে ফেরার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ হয়ে যায়। লিভার ক্যানসার একবার হয়ে গেলে তা থেকে সেরে ওঠা কার্যত অসম্ভব। এই ঝুঁকিটা মাথায় রাখতে হবে।