
ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে যত না আতঙ্ক, তার চেয়ে ঢের বেশি শঙ্কার কারণ ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’। বর্তমান পৃথিবীতে লাইফস্টাইল দ্রুত বদলাচ্ছে (liver Disease)। মানুষজনের জীবনযাপনের অভ্যাসে পরিবর্তন হচ্ছে। শারীরিক পরিশ্রম কমছে। ডায়াবেটিস বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হার্টের রোগ। এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে শরীরের যে অঙ্গটি সবথেকে বেশি ধাক্কা খাচ্ছে, তা হল লিভার। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া শরীরে ঢুকলে লড়াইয়ের মূল সুরটা বাঁধে লিভার। তাই লিভার কমজোরি হলে তার প্রভাব মারাত্মক হয়েই দেখা দেয়। তছনছ হয় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। লিভারের অসুখ নিয়ে চিন্তা সবচেয়ে বেশি।
ভয় ধরাচ্ছে লিভার (Liver Disease) সিরোসিস
মধ্যবিত্ত পরিবারে ফ্যাটি লিভার বা লিভার সিরোসিস (liver Disease) রোগের নামগুলি আর অচেনা নয়। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা ঘরে ঘরে। এই রোগই যখন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যাচ্ছে তখন তা সিরোসিস বা জটিল ক্ষতের চেহারা নিচ্ছে। লিভারের ফাইব্রোসিস (fibrosis) বা দগদগে ক্ষতের ফাইনাল স্টেজ হল সিরোসিস (Advanced Cirrhosis )। এই সিরোসিস যদি ক্রনিক হয়ে যায়, তাহলে বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। লিভার ক্যানসারের কারণও হতে পারে।
World Liver Day 2022: ডায়াবেটিস থেকে হতে পারে মারাত্মক লিভারের অসুখ, লক্ষণ চিনুন আগেই
কেন ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে লিভার
লিভার ফ্যাট তৈরি করে। রক্তের মধ্যে দিয়ে তা পেশিতে পৌঁছয়। লিভার যতটা ফ্যাট তৈরি করছে, আর যতটা খরচ করছে তার মধ্যে যদি ভারসাম্য না থাকে, অর্থাৎ ফ্যাট উদ্বৃত্ত হয়ে যায়, তা হলে সেটা লিভারে জমে। এটাই ফ্যাটি লিভার। সঠিক ডায়েট ও শরীরচর্চা করে ফ্যাটি লিভারকে (liver Disease) বশে রাখা যায়। কিন্তু অতিরিক্ত তেলমশলাদার খাবার, অ্যালকোহল থেকে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। ট্রাইগ্লিসারাইড ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সমস্যা দেখা দেয় যাকে বলে ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’। এই সিনড্রোম একটু একটু করে সিরোসিসের জন্ম দেয়।
জন্মগত কোনও ত্রুটি ও কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য লিভারের অসুখ হতে পারে। মদ্যপানে রাশ টানতে এবং পেটের ব্যথা কমাতে অনেকে নানারকম ওষুধ খেয়ে থাকেন। এই সব ওষুধ সাময়িক ভাবে যন্ত্রণা কমালেও, পাকাপাকিভাবে লিভারের কার্যক্ষমতা (liver Disease) নষ্ট করে দেয়। বাসা বাঁধে অসুখ।
Hepatitis: নীরবে শরীরে ছড়ায় হেপাটাইটিস, গোড়ায় ধরা পড়লে রোগ সারে সহজেই
কোন কোন উপসর্গ দেখলে লিভারের অসুখ হয়েছে বুঝে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত
লিভারের অসুখ অনেকটা ছড়িয়ে পড়ার পরে ধরা পড়ে। তবে এখন অনেক ধরনের চিকিৎসা বেরিয়েছে। তাই দেরিতে ধরা পড়লেও ঠিকঠাক চিকিৎসায় সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
লিভার দ্রুত রিজেনারেট করে, কিন্তু সিরোসিস হলে ক্ষতের পরিমাণ বেড়ে যায়। লিভারের অনেক কোষ নষ্ট হয়ে যায়। তখন অস্ত্রোপচারের দরকার হতে পারে। তবে লিভার সঙ্কেত দেয় আগে থেকেই। সেই লক্ষণগুলো দেখে আগেভাগে সতর্ক হলে বিপদের ঝুঁকি কমে।
কী কী সেই লক্ষণ–
লিভার থেকে নিঃসৃত হওয়া হলুদ-কমলা রঙের পিত্ত বিলিরুবিনের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে জন্ডিস হয়। লিভারে ক্ষত তৈরি হলে লিভার শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। বারে বারে জন্ডিস হলে সাবধান হতে হবে।
যদি দেখেন সারা শরীরে ঘন ঘন কালশিটে পড়ছে, তাহলে সতর্ক হতে হবে। লিভার যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে এটি প্রয়োজনমতো প্রোটিন তৈরি করতে পারে না। ফলে সহজেই কালশিটে পড়তে থাকে।
লিভারে ক্ষয় হতে থাকলে অ্যালবুমিন প্রোটিনের পরিমাণ কমে যায়, তখন পা ও গোড়ালিতে জ্বালাভাব হয়। এটিও একটি লক্ষণ।
দীর্ঘ দিনের লিভারের অসুখ থাকলে পেটের তলদেশে তরল জমা হয়ে পেট ফাঁপার সমস্যার দেখা দিতে পারে। দেখে মনে হবে পেট ফুলে আছে। খিদে কমে যাবে, ওজন কমতে পারে। তখন সাবধান হতে হবে।