
World Hypertension Day 2022: বিশ্বজুড়ে ক্রনিক কিডনির অসুখের কারণ হাইপারটেনশন! দাবি ল্যানসেটের গবেষণায়
ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা বলছে, বিশ্বের জনসংখ্যার ১০ শতাংশই ক্রনিক কিডনির অসুখে আক্রান্ত (World Hypertension Day 2022)। প্রতি বছরে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয় কিডনির অসুখে। কিডনির রোগের কারণ অনেক। এর মধ্যে অন্যতম বড় কারণ হল হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ। বিশ্বের সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ দাবি করেছে, ক্রনিক কিডনির অসুখ বা সিকেডি (CKD)-র কারণ হতে পারে হাইপারটেনশন।
হাইপারটেনশন (World Hypertension Day 2022) নীরব ঘাতক। নিঃশব্দে হানা দেয় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্য়গুলিকে বিকল করতে থাকে। মস্তিষ্ক, হার্ট, ফুসফুস, কিডনি সবকিছুরই কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে হাইপারটেনশন। এটি লাইফস্টাইল ডিজিজ, রোজকার জীবনে অভ্যাসগত সমস্যা এই রোগ ডেকে আনে। তাছাড়া জিনগত কারণও আছে। কারও পরিবারে হয়তো বংশপরম্পরায় উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। তা অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চারাও বহন করে। আবার কেউ স্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে জাঙ্ক ফুড খান। কিংবা হাঁটাচলা কম করেন, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা টিভির সামনে বসে থাকেন, দুশ্চিন্তা করেন। তাঁদেরও এই সমস্যা হয়। দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপের সমস্যা বাড়তে থাকলে এবং সঠিক ডায়াগনসিস না হলে তার থেকে আরও মারাত্মক সব অসুখ হতে পারে। ক্রনিক কিডনির রোগও তার মধ্যে একটি।
কী বলছে ল্যানসেটের গবেষণা?
দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইপারটেনশনের (World Hypertension Day 2022) নিরিখে ভারত অনেকটাই এগিয়ে। এ দেশের ২০ কোটির বেশি মানুষ ভোগেন হাইপারটেনশনে। বিশ্বের ১৬৪টি দেশের মধ্যে হাইপারটেনশনে ভোগা রোগীর সংখ্যায় ভারতের স্থান ১৫৬ নম্বরে। গবেষণা আরও বলছে, এ দেশে হাইপারটেনশনে ভোগা ৪০-৬০ শতাংশ রোগীরই কিডনির অসুখে ভুগছেন। চিন্তার ব্যাপার হল, উচ্চ রক্তচাপে ভোগা বেশিরভাগ রোগই জানেন না তাঁদের শরীরে চুপিসাড়ে বাসা বেঁধেছে কিডনির রোগ। অসুখ বাড়াবাড়ি হলে তবে গিয়ে টেস্ট করিয়ে ধরা পড়ে, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। চিকিৎসা শুরু হতেও দেরি হয়।
কিডনি শুধু শরীর থেকে রেচন পদার্থই বার করে না, তার ভূমিকা আরও বেশি। যেমন–রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে কিডনি। অ্যাসিডোসিস হয়ে রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা যাতে লাগামছাড়া না হয়ে যায় সেদিকেও তার কড়া নজর। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতেও এর ভূমিকা আছে। তা ছাড়া, শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করা, হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখা, কিডনির দায়িত্ব অনেক। বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাইপারটেনশনের বাড়াবাড়ি হলে কিডনিতে থাকা রক্তজালকগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে রেচন পদার্থ বের করে দেওয়ার সময় বাধা তৈরি হয়। তাছাড়া রক্ত সঞ্চালনও ঠিকমতো হতে পারে না কিডনিতে। ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে।
গবেষকরা বলছেন, হাইপারটেনশন হলে এমন কিছু হরমোন বের হয় যা রক্তচাপের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিতে এর প্রভাব পড়তে থাকে।
নেফ্রোলজিস্টরা বলছেন, কিডনির সমস্যা হলে সবচেয়ে আগে প্রভাব পড়ে মূত্রে। কোমরে বা তলপেটে ব্যথা, মূত্রে জ্বালা, রঙের বদল হলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া উচিত। প্রায়ই যদি মূত্রথলি ও প্রস্রাবে সংক্রমণ হয় তাহলেও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার। তখন রক্তচাপও পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। ব্লাড ইউরিয়া, সেরাম ক্রিয়েটিনিন ও জিএফআর (GFR) টেস্টও করিয়ে নিতে হবে সময় মতো।
আগে থেকেই ডায়াবেটিস বা কোনও ক্রনিক রোগ আছে য়াঁদের, তাঁদের প্রতি ছ’মাস অন্তর নিয়ম করে ব্লাড প্রেসার ও সুগার টেস্ট করাতে হবে। সেই সঙ্গেই ইউরিক অ্যাসিড, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাডের মাত্রাবেশি আছে কিনা তাও পরীক্ষা করাতে হবে।