
World Liver Day 2022: ডায়াবেটিস থেকে হতে পারে মারাত্মক লিভারের অসুখ, লক্ষণ চিনুন আগেই
গুড হেলথ ডেস্ক
চুপিসাড়ে আসে। নীরবে বাড়ে। তারপর একেবারে ফণা তুলে ছোবল বসায়। ডায়াবেটিস অতি ভয়ঙ্কর। টাইপ ২ আরও। এই রোগকে তো সাইলেন্ট প্রোগ্রেসিভ ডিসঅর্ডারও বলেন ডাক্তারবাবুরা। রক্তে শর্করার পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেলে তার থেকে শরীরের নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর মধ্য়ে লিভারের (World Liver Day 2022) অসুখও থাবা বসাতে পারে। এমনকি লিভারের জটিল রোগ লিভার সিরোসিসের ঝুঁকিও থেকে যায়।
একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে ও উপসর্গ দেখা দিলেই সচেতন হলেই বশে রাখা যায় এই সাইলেন্ট কিলারকে।এটি আক্রমণের আগে নানা ভাবে জানান দেয় শরীরে। তখনই সাবধান হলে অনেকাংশেই ঠেকিয়ে রাখা যায় বিপদ।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস লিভারের জন্য বিপজ্জনক
ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ যেখানে রক্তে শর্করা বা সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন নামে একটি হরমোন যা প্যানক্রিয়াসের বিটা সেল থেকে নিঃসৃত হয়। সাধারণত, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে সেটি লিভারে গিয়ে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। ইসুলিন এই গ্লুকোজকে দেহকোষের মধ্যে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। কোষের ভেতরে গ্লুকোজ অক্সিডাইজড হয়ে অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট (এটিপি) তৈরি করে যার থেকে শক্তি আসে। এই শক্তিই কোষের পুষ্টি জোগায়। কিন্তু যদি বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যায় এবং ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায় তাহলে এই পক্রিয়াটা বাধা পায়। ইনসুলিন কোষের মধ্যে প্রবেশের জন্য যে রিসেপ্টরটি লাগে, সেটি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ইনসুলিন আর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ইনসুলিন কোষের মধ্যে গ্লুকোজকে প্রবেশ করাতে পারে না। রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যায়। একে বলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (World Liver Day 2022)
অ্যালকোহল না খেলেও লিভারের রোগ হতে পারে। যাকে ‘নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ (NAFLD) বলে। এক্ষেত্রে বংশগত কোনও ক্রনিক রোগ, কিডনির রোগ, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাইরয়েড, উচ্চরক্তচাপ নানা রকম কারণ দায়ী। ওবেসিটি বা স্থূলত্বও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের অন্যতম কারণ। এক্ষেত্রে চোখ ও ত্বকের রঙ হলদেটে হয়ে যেতে পারে, জন্ডিস হতে পারে রোগীর, ডায়ারিয়া, পেটে যন্ত্রণা, হাত-পায়ের পেশীতে ব্যথা এই রোগের কিছু সাধারণ উপসর্গ।
ডায়াবেটিস থেকে লিভারকে বাঁচাতে কী কী করবেন
ডায়াবেটিসও লাইফস্টাইল ডিজিজ। রোজকার জীবনে অনিয়ম অনেক বিপদ ডেকে আনে। এখন কায়িক পরিশ্রম অনেক কম হয়, বিশেষত করোনা কালে বাড়ি বসেই কাজ বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম বেড়ে গেছে। কাজেই আলস্য বেড়েছে। এক্সারসাইজে ইতি দিয়েছেন অনেকেই। তার ওপর অনিয়মিত ডায়েট তো রয়েছেই। স্থূলত্ব বা ওবেসিটি কিন্তু ডায়াবেটিসের অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর। নিয়মিত শরীরচর্চা ও খাদ্যাভাসে সামান্য অদলবদল করলেই রক্তে বাড়তি শর্করা বশে রাখা যায়।
দিনের এক ঘণ্টা সময়ের কিছুক্ষণ যোগাসন করা যেতে পারে। পরিমিত খাবার খেতে হবে। একসঙ্গে বেশি খাবার খেলে প্যানক্রিয়াসের উপর চাপ পরে। সেই জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের অল্প অল্প করে দিনে ছ’বার খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গেই ধূমপানের নেশা ছাড়তে হবে।
লিভারকে সুস্থ ও তরতাজা রাখার প্রধান ও প্রাথমিক শর্তগুলোই হল সঠিক ডায়েট, অ্যালকোহল থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা, নিয়মিত এক্সারসাইজ করা এবং স্ট্রেস-ফ্রি থাকার চেষ্টা করা। ভাজা-তেলমশলা-ফাস্টফুড বন্ধ করে ঘরে তৈরি খাবার খেলে সবচেয়ে ভাল। ফ্যাটি লিভার ঠেকাতে লো ক্যালরি ডায়েট দরকার। বেশি করে শাকসব্জি, ফল রাখতে হবে ডায়েটে। ভিটামিন, মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ওজন কমানো দরকার।