Anxiety Disorders: কথায় কথায় কান্না পায়, অকারণে ভয়! উদ্বেগেই দুর্বল হয় মন

গুড হেলথ ডেস্ক

শরীরের মতো মনও ভোগে। অসুখ হয় মনেও। মানুষের মনের গতিবিধি যেমন ভিন্ন, তেমনি তার অসুখের ধরনও আলাদা। মনের সবচেয়ে বড় অসুখ হল উদ্বেগ (Anxiety Disorders)। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, উদ্বেগ হল মনের একটা জটিল অবস্থা, যেখানে স্বাভাবিক চিন্তা-ভাবনার পথটা বন্ধ হয়ে যায়। ভয়, ছটফটানি, চাঞ্চল্য, দুঃখ, ফোবিয়া সব মিলেমিশে এমন এক জটপাকানো অবস্থা তৈরি হয়, যে তার ছাপ পড়ে সারা শরীরেই। উদ্বেগ ক্রনিক হয়ে গেলে তখন আর মনের অবস্থা থাকে না, জটিল অসুখে পরিণত হয়। বিশেষজ্ঞরা, তখন তার নাম দেন অবসাদ, ট্রমাটিক ডিসঅর্ডার, অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার (Anxiety Disorders) ইত্যাদি।

Anxiety disorders

 

মনের সবচেয়ে বড় শত্রু উদ্বেগ (Anxiety Disorders)

উদ্বেগ হল মনের সবচেয়ে বড় শত্রু। শুরুটা এই অসুখ দিয়েই হয়। তার থেকেই ডালপালা ছড়ায় মনের নানা বিচিত্র রোগ। বাইপোলার ডিসঅর্ডারের সূচনাটাও উদ্বেগ দিয়েই হয়। অসুখ গুরুতর হলে মন বেয়ে সোজা পৌঁছে যায় হার্টে। ফলে হার্টের রোগ, শ্বাসকষ্ট এমনকি পেশী ব্যথা, পেটের রোগ, রক্তচাপের ওঠানামা—সবই দেখা দেয় একে একে।

করোনার সময় গত দু’বছরে এই উদ্বেগই সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। ভাইরাসের সংক্রমণ, মৃত্যু, লকডাউনের একঘেয়েমি, অন্দরবাসে সম্পর্কের নানা টানাপড়েন সব মিলিয়ে মনের নানা জটিল রোগে ভুগছে মানুষ। অবসাদগ্রস্থও হয়ে পড়ছে।

Anxiety Disorders

তবে করোনা সংক্রমণ বলে শুধু নয়, উদ্বেগ (Anxiety Disorders) হানা দিতে পারে যে কোনও সময় ও পরিস্থিতিতেই। আর উদ্বিগ্ন মন ওষুধে সারে না। তার জন্য দরকার মনের যত্ন।

Warm or Cold Water? গরম না ঠান্ডা জল, কোনটা শরীরের জন্য ভাল?

 

অবসাদে কাহিল? কিছুই ভাল লাগছে না, কান্না পাচ্ছে….. 

অতিরিক্ত চিন্তা, ভাবনা, উৎকণ্ঠা উদ্বেগের (Anxiety Disorders) নানা দিক। সবকিছুতেই চিন্তার বাতিক তৈরি হয়ে গেলেই মুশকিল। সামান্য ব্যাপারেও উদ্বেগ বাড়বে। দুশিন্তা থেকেই অবসাদ বাসা বাঁধবে। তার থেকে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস, ফোবিয়া। চঞ্চল, চিন্তাগ্রস্থ মনের রোগ কখন যে ক্রনিক ডিসঅর্ডারে পৌঁছে যাবে তার টেরও পাওয়া যাবে না।

‘অ্যাংজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেসন অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ (ADAA) তাদের একটি গবেষণার রিপোর্টে বলেছিল, অতিরিক্ত উদ্বেগ থেকেই ‘জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার’ (GAD) হয়। প্রতি বছর বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ এই রোগে ভোগেন। এই ডিসঅর্ডার ছ’মাসের বেশিও স্থায়ী হয়। তখন তাকে ক্রনিক ডিসঅর্ডার বলে। এই পর্যায়ে পৌঁছে গেলে রোগীকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়মিত কাউন্সেলিং করাতে হয়।

anxiety disorders

 

সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার

কম বয়সীদের মধ্যে আরও একটা ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত বয়ঃসন্ধি বা তার আশপাশে। সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের নানা চাপ, বন্ধুবান্ধব-আত্মীয় মহল থেকে নানারকম মন্তব্য, বা পড়াশোনা-কেরিয়ারের চিন্তা সব মিলিয়েই সামাজিক মেলামশায় একটা ভয় বা আতঙ্ক তৈরি হয়। একাকীত্বে ভুগতে থাকে অনেকে, নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে। একে বলে ‘সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার।’ এই রোগ মনে ধরলে সাবধান হওয়া দরকার। একাকীত্বের বোধ থেকেই মনের আরও জটিল পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে। এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ে।

 

উদ্বেগ ধাক্কা দেয় হৃদয়ে

উদ্বেগ থেকে ফোবিয়া (Anxiety Disorders) বা আতঙ্ক তৈরি হয় মনে। যার থেকেই উৎকণ্ঠা বাড়ে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  ‘প্যানিক ডিসঅর্ডার’-এ আক্রান্ত হয় রোগী। মনোসংযোগ কমে যায়, মাত্রাতিরিক্ত চিন্তায় হৃদগতি বাড়ে। বুকে ব্যথা হতেও দেখা গেছে অনেকের। শ্বাসের গতি ধীর হয়। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও দেখা দেয়।

Panic Attacks

অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার (Anxiety Disorders) ও প্যানিক ডিসঅর্ডার যদি একটানা চলতে থাকে তাহলে অবসাদ, মাথাব্যথা, ঝিমুনিভাব, কাজে অনীহা দেখা দেয়। এমনকি স্নায়ুর উপরেও তার প্রভাব পড়ে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যায়। রক্তচাপেরও তারতম্য হতে পারে। প্যানিক ডিসঅর্ডার ক্রনিক হয়ে গেলে শরীরে এনজাইম ক্ষরণও অনিয়মিত হয়ে যায়। খাবার হজমে সমস্যা হয়, পেটের রোগও দেখা দিতে পারে। খিদে কমতে থাকে, বিপাকক্রিয়ায় বড়সড় প্রভাব পড়ে। স্ট্রেস থেকে লিভারের অসুখ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।

মনের যত্ন নিন

উদ্বেগ (Anxiety Disorders) সারাতে হলে নিজেকেই আগে উদ্যোগ নিতে হবে। চিন্তা-ভাবনায় রাশ টানতে হবে। মনে অযথা কোনও ভাবনা এলে, মেডিটেশন করে মন অন্যদিকে রাখা যেতে পারে।

এ সময়ে পরিবারের মানুষ একে অন্যের প্রতি ধৈর্যশীল, সহানুভূতিশীল হওয়া ছাড়া উপায় নেই। রাগ না করে কাছের মানুষের সব কথা শুনতে হবে, ভরসা যোগাতে হবে। যাঁরা একাকিত্বে ভুগছেন, ফোনে কথা বলে তাঁদের সঙ্গ দিতে হবে। মেলামেশা বাড়াতে হবে। কেউ একাকীত্বে ভুগছে মনে হলে তাকে সঙ্গ দিতে হবে, কথাবার্তা, আলোচনা বাড়াতে হবে।

নিয়মিত শরীরচর্চা মন হাল্কা রাখে। স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমায়। সমস্যা তীব্র হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ছাড়া গতি নেই। তখন নিয়মিত কাউন্সেলিং করানোর দরকার।