
প্রতিদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরেই মনে হয় খুব স্ট্রেস (Mental Stress) হচ্ছে? কাজের চাপ, পরিবারে সমস্যা, দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘটনা–সবকিছুই মনে হয় মানসিক চাপের কারণ?
আসলে তা নয়। আমাদের রোজকার অভ্যাসে এমন কিছু ভুল আছে যা মানসিক চাপের (Mental Stress) কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্টেসময় হয়ে উঠছে জীবন। এখন বুঝতে হবে ঠিক কোন কোন অভ্যাস স্ট্রেসের কারণ হয়ে উঠছে।
চারপাশে ক্রমশই বেড়ে চলেছে অবসাদ। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা অবসাদ। আমাদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, এমনকী নিজেরাও কখনও অবসাদে ভুগি। কখনও নিজেরা বুঝতেও পারি না ঠিক কী কারণে হচ্ছে অবসাদ। এই কারণগুলো ধরতে পারলেই সেইসব ভুলগুলো আর হবে না। স্ট্রেস, অবসাদ যাই বলুন, ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
১) অতিরিক্ত নেশা মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। লোকজন উল্টোটাই ভাবেন। কাজের চাপ বাড়লে বা উদ্বেগ বাড়লে সিগারেটে সুখটান দিয়ে ভাবেন চাপ কমবে। নিকোটিন কিছুটা সময়ের জন্য মাথা হাল্কা করে দেয় ঠিকই, কিন্তু এটা সময়িক। তামাকজাত দ্রব্য ব্রেনের চরম ক্ষতি করে। তার ওপর অ্যালকোহলের নেশা থাকলে ফল হয় আরও মারাত্মক। দীর্ঘদিনের নেশার অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদি অবসাদের কারণ হয়ে ওঠে।
২) একা থাকার অভ্যাস, মেলামেশা না করা মানসিক উদ্বেগের (Mental Stress) অন্যতম কারণ। অনেকেই নিজের পরিবারে সকলের মধ্যেও একা থাকতে পছন্দ করেন। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মেলামেশাও কম। এইসব থেকেই একাকীত্বের বোধ তৈরি হয়। আর এটাই ক্রমে অবসাদের দিকে নিয়ে যায়।
৩) অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি স্ট্রেসের অন্যতম কারণ। আগে অবসর সময়ে মানুষজন খেলাধূলা করতে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করত। এখন একটু সময় পেলেই মোবাইল, ল্যাপটপে হয় সিনেমা, ওয়েব সিরিজ বা সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটাঘাঁটি করতে শুরু করে দেয়।
মনোবিদেরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন সর্বক্ষণ নেগেটিভ খবর ঘোরাফেরা করে। খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, দুর্ঘটনা ইত্যাদির খবর ক্রমাগত পড়তে থাকলে মনের ওপরেও চাপ তৈরি হয়। তাছাড়া বাকি লোকজনের লাইফস্টাইল অনুসরণ করতে গিয়ে অজান্তেই নিজের উদ্বেগ বেড়ে যায়। চাহিদাও বাড়ে। আর সেসব পূরণ না হলেই তার থেকে হতাশা, ডিপ্রেশন দেখা দিতে থাকে।
৪) আমাদের অনেকেরই অভ্যাস থাকে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা করার (Mental Stress)। সামান্য জিনিসকেও আমরা অনেকটাই গুরুত্ব দিয়ে ফেলি নিজেদের ভাবনায়। আর এর থেকেই মনের নেগেটিভিটি বাড়তে থাকে।
মনোবিদেরা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত চিন্তায় হৃদগতি বাড়ে। বুকে ব্যথা হতেও দেখা গেছে অনেকের। শ্বাসের গতি ধীর হয়। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও দেখা দেয়। অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার ও প্যানিক ডিসঅর্ডার যদি একটানা চলতে থাকে তাহলে অবসাদ, মাথাব্যথা, ঝিমুনিভাব, কাজে অনীহা দেখা দেয়। এমনকি স্নায়ুর উপরেও তার প্রভাব পড়ে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যায়। রক্তচাপেরও তারতম্য হতে পারে।
৫) অতীতের কোনও ভুল থেকে অপরাধবোধে ভুগতে থাকলে তার থেকেও মানসিক চাপ বাড়ে। অতীতে কোনও ভুল করেছেন বা আপনার সঙ্গে কোনও অন্যায় হয়েছে তা ভেবে বর্তমানেও কষ্ট পাওয়া, অনুতাপ করা, এসবও স্ট্রের কারণ হয়ে ওঠে। আর এইধরনের মানসিক উদ্বেগ কাটিয়ে ওঠাও কঠিন। তার থেকে ধীরে ধীরে অবসাদ দানা বাঁধতে থাকে। মনোবিদেরা বলছেন, অতীত ভুলে বর্তমানের পথে চলা উচিত। কীভাবে আগামী দিন ভাল হবে সে চিন্তা করলে উদ্বেগ অনেক কমে যাবে। পজিটিভ চিন্তাই মনের স্বাস্থ্য ভাল রাখার অন্যতম ও প্রধান উপায়।