
একদিকে কেরিয়ার, অন্যদিকে সংসার–এই দুইয়ের জাঁতাকলে মেয়েদের মন স্বাস্থ্য ভাল আছে তো?
পেশার ক্ষেত্রে পাহাড়প্রমাণ চাপ, সেই কারণে মাথায় সবসময় চিন্তা, আবার অন্যদিকে পরিবার, আত্মীয়-পরিজন. সন্তান সব সামলে মহিলাদের স্ট্রেস (Women Mental Health) আরও বাড়ছে বলেই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর কারণও আছে। গবেষকরা বলছেন, মহিলারা নিজের শরীর-স্বাস্থ্যের দিকে অতটাও গুরুত্ব দেন না। পরিবার সামলে, আপনজনদের দেখাশোনার পরে নিজের জন্য সামান্য় কিছু সময়েই থাকে। মানসিক চাপ বাড়লে তাও সুকৌশলে চেপে রাখেন মেয়েরা। বাড়তে থাকা স্ট্রেস মনের ভেতরেই চাপা পড়ে সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে। এর থেকেই ঘন ঘন মুড সুয়িং, উদ্বেগ, অতিরিক্ত চিন্তা এবং শেষে অবসাদে ভুগতে থাকেন মেয়েরা।
করোনা কালে লকডাউনের সময় এই মানসিক চাপ (Women Mental Health) আরও বেড়েছে। গৃহবন্দি অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে মহিলাদের। দেশজুড়ে সমীক্ষায় দেখা গেছে, পুরুষদের থেকে অনেক বেশি মানসিক চাপ (Women Mental Health), অবসাদ ও একাকীত্বে ভুগেছেন মহিলারা। বিশেষ করে কর্মরত মহিলারা যেমন ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার থেকে বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত মহিলারাই দীর্ঘ দু’বছর অতিমহামারী পর্যায়ে মানসিক উদ্বেগের শিকার হয়েছেন নানাভাবে। গার্হস্থ্য হিংসারও শিকার হতে হয়েছে মেয়েদের।
গবেষণা বলছে, ২০২০ সাল অর্থাৎ করোনাকালের পর থেকে মহিলাদের মধ্যে মানসিক উদ্বেগ, রাগ, অবসাদের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে, যা গত ১০ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ (Women Mental Health)। গ্লোবাল উইমেনস হেলথ ইনডেক্সের করা সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, বাড়ি থেকে কাজ, বেকারত্ব, সম্পর্কের অবনতি, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, গার্হস্থ্য হিংসা–সব মিলিয়ে অবসাদ বেড়েছে। একই সঙ্গে মানসিক উদ্বেগও বেড়েছে নানা কারণে। এমনও দেখা গেছে, ইদানীংকালে সবচেয়ে বেশি অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন মহিলারা।
ব্যক্তিগত সম্পর্কেও সমস্যা তৈরি হয়েছে অনেকের। যাঁদের বাড়িতে আগে থেকেই অপ্রীতিকর পরিবেশ ছিল, তাঁদের সমস্যা ওই সময়ে আরও বেড়েছে। যার থেকেও প্রবল মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে মহিলাদের মনে। ফলে বদমেজাজ, খিটখিটে স্বভাব বেড়েছে অনেকেরই। হয় তীব্র অবসাদ, না হলে সোশ্যাল ফোবিয়া তৈরি হয়েছে। তাছাড়া ভুল বকা, ভুলে যাওয়া, স্লিপিং ডিসঅর্ডার তো রয়েছেই। মানসিক চাপ এতটাই যে তার থেকে স্লিপিং ডিসঅর্ডার দেখা দিচ্ছে অনেকের মধ্যেই। অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, ইনসমনিয়ার শিকার হচ্ছেন অনেকে।
সমাজত্ত্ববিদদের অনেকেরই মত, মানুষ চরম আতঙ্ক ও আশঙ্কায় ভুগছে। যার থেকেই বিরক্তিভাব, অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। এর জন্য করোনা পরবর্তী সময়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই দায়ী। এই পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলেই মনে করছেন গবেষক ও মনোবিদেরা। অবসাদ কাটিয়ে উঠতে হলে মেয়েদের অনেক বেশি নিজেদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিজের ভালটাও দেখতে হবে, পাশাপাশি শরীরের দিকে খেয়াল রাখাটা বিশেষ জরুরি। কারণ অবসাদ বাড়তে থাকলে তার থেকে হার্টের রোগ বাসা বাঁধবে। শারীরিক নানা জটিলতাও তৈরি হবে যা পরবর্তী সময়ে সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।