
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস: দুর্বল স্মৃতি, অসাড় পেশি, এই জটিল স্নায়ুর রোগের ইঙ্গিত আগেই দেয় শরীর
গুড হেলথ ডেস্ক
মাথার ভেতর যেন গুলিয়ে যাচ্ছে সবই। শরীর তো ভাঙছেই, জন্ম নিচ্ছে নানা মানসিক রোগও। অবসাদ, বিষণ্ণতা, একাকীত্ব যেন গ্রাস করছে। ডাক্তাররা বলেন, এ হল জটিল স্নায়বিক সমস্যা। এমন এক স্নায়ু রোগ যার প্রকৃত কারণ আজও অজানা। ডাক্তারি ভাষায় একে বলে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis) বা এমএস।
দেখা গেছে, বিশ্বে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ এই স্নায়ুর রোগে ভোগেন। মহিলাদের আবার মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষদের থেকে বেশ। গবেষকরা বলেন মহিলাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় তিন গুণ বেশি। রোগ যে বয়সকালে আসবে তেমনটাও নয়। সাধারণত দেখা গেছে, ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যেই এই স্নায়ুর রোগ বেশি হানা দেয়। পরিবেশগত কারণ থাকতে পারে। জিন বা বংশগত কারণও এর জন্য দায়ী হতে পারে।
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis) কী?
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসকে বলা হয় অটোইমিউন ডিজিজ। এটি ডি-মায়েলিটিন রোগ যেখানে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপরে প্রভাব পড়ে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বলতে বোঝায় মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ড। গবেষকরা বলেন, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস হলে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুরজ্জুতে থাকা স্নায়ুকোষগুলোর আবরণ নষ্ট হয়ে যায়। এই অবরণকে বলে মায়েলিন। মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে এই মায়েলিনের আবরণীতে ক্ষত তৈরি হয়।
মায়েলিনের কাজ হল স্নায়ুতন্তু বা নার্ভ ফাইবারকে সুরক্ষা দেওয়া। যদি এই স্তরে ক্ষত তৈরি হয় বা স্তরটি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে স্নায়ুতন্তু মস্তিষ্ক ও শরীরের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে পারে না। অর্থাৎ সোজা কথা বলতে গেলে, মাথার সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অংশের যোগসূত্র বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। যে কারণেই নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন?
আগে মনে করা হত স্নায়ুর রোগের নিরাময় তেমনভাবে হয় না। কিন্তু এখন স্নায়ুর রোগের এতরকম চিকিৎসা বেরিয়ে গেছে, যে রোগ শুরুতে ধরা পড়লে তার থেরাপি করা সহজ। ডাক্তারের নির্দেশ মেনে চললে, সঠিক ট্রিটমেন্ট, মেডিকেশনে ভাল থাকে রোগী। কিছু থেরাপিও আছে যাতে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের মতো জটিল স্নায়ুর অসুখকেও বশে রাখা সম্ভব। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে তার ট্রিটমেন্ট অনেক সহজ হয়ে যায়।
জেনে নিন কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন ডাক্তার দেখাতে হবে–
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগে অনৈচ্ছিক পেশির ওপরে প্রভাব পড়ে। যার ফলে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেকেরই দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসতে পারে।
পেশির দুর্বলতা এই রোগের অন্যতম লক্ষণ। পেশিতে ব্যথা হয় এবং সেই সঙ্গে হাত-পা নাড়ানো মুশকিল হয়ে পড়ে। পেশিতে টান, খিঁচুনি সবই দেখা দেয়।
একটা সময়ের পরে অসাড় হতে থাকে হাত-পা। পিন ফোটালেও কোনও স্পর্শের অনুভূতি থাকে না।
এই রোগের সবচেয়ে খারাপ দিক হল শরীরের ভারসাম্য বিগড়ে যায়। হাঁটাচলা করা, খাবার খাওয়া, খাবার গেলা, কথা বলায় সমস্যা হয় অনেকের।
শরীরের নানা অঙ্গে রোগ দেখা দিতে পারে। খাদ্যনালী, অন্ত্র, মূত্রনালীতে জটিল রোগ হতে পারে।
শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক রোগ দেখা দেয়। অবসাদ, উৎকণ্ঠা, একাকীত্বে ভুগতে থাকেন রোগী। হতাশা গ্রাস করে। কম বয়সে এই রোগ হলে বুদ্ধির বিকাশ বাধা পায়। ব্যবহারে, কথাবার্তায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সারাক্ষণ রোগীর মধ্যে একটা অস্থির ভাব থাকে। স্বাভাবিক ভাবনা-চিন্তায় সমস্যা হয়।
শ্রবণশক্তিও চলে যেতে পারে।
মাঝে মাঝেই শরীরে কাঁপুনি দেখা দেয়। স্বাভাবিক অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন না রোগী।