
অ্যালঝাইমার্স সারবে ওষুধে? নতুন আবিষ্কারে অসাধ্য সাধন করতে চলেছেন বিজ্ঞানীরা
গুড হেলথ ডেস্ক
সারা বিশ্বে ২০০০ সাল থেকেই অ্যালঝাইমার্স (Alzheimer’s) রোগটি দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতে ২০০৫ অবধি অ্যালঝাইমার্সকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। ডিপ্রেশন, স্কিৎজোফ্রেোনিয়া, বাই-পোলার ডিসঅর্ডার, পারকিনসন্স এইরকম বহু রোগের সঙ্গে অ্যালঝাইমার্স রোগীদেরও ‘পাগল’ বলে চিহ্নিত করা হত। কিন্তু এখন অ্যালঝাইমার্সের মতো ভয়ঙ্কর মানসিক ব্যধি নিয়ে নানারকম গবেষণা চলছে। এই রোগ সারানো যেতে পারে এমন থেরাপিও নাকি বের করে ফেলেছেন চিকিৎসক-গবেষকরা।
অ্যালঝাইমার্স রোগে আক্রান্তদের জন্য একটি নতুন ওষুধ তৈরি হয়েছে। অ্যাডুহেল্ম (Aduhelm) নামে এই ওষুধ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছিলেন। আমেরিকাতেও এই ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছিল। এতদিনে এই ওষুধ ব্য়বহারে শিলমোহর দিতে চলেছে মার্কিন ফুড অ্য়ান্ড ড্রাগ অ্য়াডমিনিস্ট্রেশন।
অ্যাডুহেল্ম হল একরকম মনোক্লোনাল অ্য়ান্ডিবডি যা ব্রেনের মৃত কোষগুলোকে সচল করার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ওষুধের কোনও সাইড এফেক্টস নেই। এতদিন অবধি অ্য়ালঝাইমার্সের রোগীদের যে ধরনের অ্য়ান্টিবডি দিয়ে ট্রিটমেন্ট করা হত তাতে ব্রেন হেমারেজের আশঙ্কা থেকে যেত (Alzheimer’s)। ব্রেনের ইমিউন কোষ যেমন মাইক্রোগিলা ও ম্য়াক্রোফাজদের ওপর প্রভাব খাটাত এইসব অ্যান্টিবডি, ফলে স্নায়ুকোষে প্রদাহ বা ইনফ্ল্য়ামেশন তৈরি হত। সেরিব্রোভাস্কুলার ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি থেকে যেত। কিন্তু মনোক্লোনাল অ্য়ান্টিবডির থেরাপিতে সেই ভয় নেই।
ক্ষত হয় ব্রেনের কোষে, ওলটপালট হয়ে যায় স্মৃতি
মানুষের মস্তিষ্ক রাসায়নিক বা কেমিক্যালে ভরা। ধীরে ধীরে মস্তিস্কের সেলগুলি নষ্ট হতে থাকে। তখন কোনও মানুষ বা জায়গা চিনতে পারা যায় না। মস্তিস্কের সংরক্ষণ প্রণালী নষ্ট হয়ে যায়। তখন দৈনন্দিন জীবনে রোজকার ঘটনাগুলোও মানুষ ভুলতে শুরু করে। অতীত পুরোপুরি ঝাপসা হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক সময় মস্তিষ্কে অতিরিক্ত কিছু প্রোটিন জমাট বাঁধলে তার থেকে হয় অ্যালঝাইমার্স রোগ। এর জেরে বয়স বাড়ার সঙ্গে কমতে থাকে প্রতিরোধশক্তি। ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকে স্মৃতিশক্তি।
এর পেছনে অনেক কারণও আছে। রাতে কম ঘুম হলে, ইনসমনিয়া বা স্লিপিং ডিসঅর্ডার থাকলে মস্তিষ্কে তার প্রভাব পড়ে। সারাদিন কাজের পরে রাতে মস্তিষ্ক বিশ্রাম করে, নিজের মেরামতির কাজ সারে। সে সময় যদি মস্তিষ্ককে সজাগ করে রাখা হয় তাহলে সেই মেরামতির কাজ বাধা পায়। সারাদিনের টক্সিন পরিষ্কার করার বদলে মস্তিষ্কেই ময়লা জমতে থাকে। অনেকের রাতের দিকে রক্তচাপ বেড়ে যায়, একে ডাক্তারি ভাষায় বলে ‘রিভার্স ডিপিং’, তেমন হলে মস্তিষ্কে এর প্রভাব পড়ে। তখন স্মৃতিনাশের সমস্যা দেখা দেয়। যার পরিণাম অ্যালঝাইমার্স।
স্মৃতির এই বাক্স যখন নানা কারণে অকেজো হয়ে যায়, তখন মানুষ আর কিছু মনে রাখতে পারে না। শুরুটা হয় রোজকার জীবনের কাজের মধ্যে দিয়ে, শেষে নিজের নাম, বাড়ির ঠিকানা, আত্মীয়-পরিজন সকলকেই ভুলে যেতে শুরু করে রোগী। উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে বা অন্য কোনও জটিল রোগ থাকলে প্রথমে ডিমেনশিয়া ও তার থেকে পরবর্তীকালে অ্যালঝাইমার্সের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। বুদ্ধিমত্তা বা ‘কগনিটিভ ফাংশন’-এর উপর প্রভাব পড়ে, যা এই ধরনের মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
এই সকল রোগীকে অ্যান্টিবডির জোগান দেওয়া গেলে সুবিধা হতে পারে বলে মত বহু চিকিৎসকের। আড্যুহেল্ম সেই কাজ করতে সক্ষম বলে জানানো হয়েছে।