
ডিপ্রেশন কাটাচ্ছে আলট্রাসাউন্ড থেরাপি? নতুন গবেষণায় সাফল্যের পথে বিজ্ঞানীরা
গুড হেলথ ডেস্ক
চরম অবসাদ, অ্যাংজাইটি বা মুড সুয়িং–আলট্রাসাউন্ড থেরাপিতেই নাকি হচ্ছে মুশকিল আসান। এমনটাই দাবি টোকিও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সের গবেষকদের। উচ্চ কম্পাঙ্কের (হাই ফ্রিকুয়েন্সি) আলট্রাসাউন্ড ভোকালাইজেশন থেরাপি করলে সারা শরীরে এমন তরঙ্গ প্রবাহ হয় যা ব্রেনের নার্ভ বা স্নায়ুর জালকে অ্যাকটিভ করে। ফলে মানসিক যে কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা এ পথেই।
মানুষ নয়, আপাতত ইঁদুরদের ওপর গবেষণা সফল হয়েছে। রডেন্ট (ইঁদুর জাতীয় প্রাণী) মডেলের ওপর আলট্রাসাউন্ডের প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, অবসাদ, বা যে কোনও রকম মুড ডিসঅর্ডার খুব কম সময়ে সেরে যাচ্ছে। শব্দের তরঙ্গ মস্তিষ্কে ঢুকে স্নায়ুর ক্ষত সারাচ্ছে। বুদ্ধি ও স্মৃতির জালগুলো সক্রিয় হচ্ছে। মস্তিষ্কের ঠিক কোন জায়গায় সমস্যা হয়েছে তাও নাকি চিহ্নিত করা সম্ভব হাই ফ্রিকুয়েন্সি আলট্রাসাউন্ড ভোকালাইজেশনে (USVs), এমনটাই দাবি টোকিও ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের।
টোকিও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সের অধ্যাপক আকিয়োশি সাইতো, সাতরু মিয়াজাকি, দেইসু ইয়ামাদা ও সুগুমি ইয়ামাউচি এই গবেষণা করছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলট্রাসাউন্ড থেরাপিতে মস্তিষ্কে যে রাসায়নিক গোলমাল হয় তা সারানো সম্ভব। নিউরোট্রান্সমিটারগুলোতে প্রয়োজনীয় বদল করা যায় উচ্চ কম্পাঙ্কের আলট্রাসাউন্ডে। হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যে কারণে মানসিক যে কোনও রোগের কারণ ও প্রতিকার এই উপায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব। বিহেভিয়র থেরাপিও আলট্রাসাউন্ডে করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ব্রেনের জটপাকানো স্নায়ুর জালের গোলমাল ধরবে আলট্রাসাউন্ড
অবসাদ, স্ট্রেস, স্মৃতিনাশ বা ডিমেনশিয়ার মতো মনোরোগের শিকার এখন অনেকেই। মনের অসুখে বেশি ভুগছেন কমবয়সীরাই। মুড সুয়িং, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, ডিপ্রেশন এই ডাক্তারি শব্দগুলো এখন চেনা। অবসাদ দিয়ে শুরু হয়, শেষে তা রোগে পরিণত হয়। চরম অবসাদ, স্ট্রেস, অ্য়াংজাইটি মুড ডিসঅর্ডারের (Mood Disorder) কারণ। রোগের বাড়াবাড়ি হলে এবং জটিল পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছলে তাকে ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারও বলা হয়। একই মানুষের মধ্যে যদি কখনও ডিপ্রেশন, আবার কখনও হাইপোম্যানিয়ার পর্ব চলতে থাকে, তাকে বলা হয় বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার । মন ও মেজাজ সবসময় দুই চরম স্থিতিতে থাকে। হয় প্রচণ্ড উচ্ছ্বাস না হলে একেবারে ভগ্ন, বিষাদগ্রস্ত, অবসাদে আচ্ছন্ন। মনের এই অসুখ যে কতটা মারাত্মক হতে পারে সেটা টের পান কাছে থাকা মানুষজনই। মনের রোগ কটা জটিল পর্যায়ে গেছে, কতটা অতল খাদে আপনি হাবুডুবু খাচ্ছেন তা ধরাই ভীষণ কঠিন।
মস্তিষ্কে সব কাজের জন্যই আলাদা আলাদা কুঠুরি থাকে। স্মৃতি ধরে রাখার বাক্সও থাকে—একে বলে হিপ্পোক্যাম্পাস। এই এলাকা স্মৃতি তৈরি করে, স্মৃতি সঞ্চয় করে, আবেগ-ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে দু’টি হিপ্পোক্যাম্পাস থাকে। স্মৃতিকে বেঁধে রাখার কাজটি করে মাথার এই অংশটিই। আর ‘এনটোরিনাল কর্টেক্স’ নামে আর একটি অংশ হিপ্পোক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই এলাকা স্মৃতির জাল তৈরি করে। মস্তিষ্কের স্নায়ুর মাধ্যমে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। এই নেটওয়ার্ক মারফৎ সিগন্যাল বা সঙ্কেত বাহিত হয়ে আসে। মস্তিষ্ক ঠিক করে কোন ঘটনাকে সঞ্চয় করে রাখা হবে আর কোন ঘটনা মস্তিষ্কে ক্ষণস্থায়ী হবে। স্মৃতির এই বাক্স যখন নানা কারণে অকেজো হয়ে যায়, তখন মানুষ আর কিছু মনে রাখতে পারে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন আলট্রাসাউন্ড থেরাপিতে এইসব গণ্ডগোল সারানো সম্ভব। শব্দতরঙ্গ ব্রেনে গিয়ে ধাক্কা দেবে। মানসিক ক্ষত সারিয়ে তুলবে দ্রুত।