
বাতের ব্যথা সর্বনাশা, গাঁটে-গাঁটে যেন চাবুক কষাচ্ছে, রেহাই মিলবে কীভাবে
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ছোটাছুটির জীবনে শারীরিক ক্লান্তি যতটা, তার থেকেও বেশি মানসিক চাপ। এই দুয়ের জাঁতাকলে পড়েই নানানটা রোগ। সেই সঙ্গে দুর্ভোগ। আজ হাত-পা-পিঠে ব্যথা, তো কাল গভীর মানসিক অবসাদ। কিসে যে রেহাই মিলবে সেটাই বোঝা যায় না! অফিসে একটানা কম্পিউটারে বসে কাজ। চেয়ার ছাড়লেই গোটা মেরুদণ্ড বেয়ে যেন বিদ্যুতের ঝলক খেয়ে যায়। বাসের সিঁড়িতে পা টা ফেলতে গেলেই টনটনিয়ে ওঠে ব্যথা। গাঁটে গাঁটে ব্যথা তো আছেই। উঠতে-বসতে হাঁটুতে অসহ্য যন্ত্রণা। মনে হয় কে যেন বেতের ঘা বসিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে পায়ের পাতাও ফুলেফেঁপে একসার, চলতে গেলেই যেন কারেন্ট লাগে।
বয়স কুড়ি হোক বা পঞ্চাশ, বাতের ব্যথা বা গাঁটে-গাঁটে যন্ত্রণা এখন আর বয়স বিচার করে আসে না। টানা ৭-৮ ঘণ্টা কম্পিউটারে বসে কাজ করেন যাঁরা, তাঁরা তো ভুগছেনই, রেহাই নেই ঘরোয়া কাজ করতে অভ্যস্ত গৃহবধূদেরও। হয়তো জোরে হাঁটতে গেলেন বা পা মুড়ে মাটিতে বসতে গেলেন, এমনি যন্ত্রণায় হাঁটুটা অবশ হয়ে গেল। লিফটে চেপে ওঠানামায় অভ্যস্ত শরীর সিঁড়ি দিয়ে কয়েক পা উঠলেই কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটা চিনচিনে ব্যথা যেন সাপের মতো ছোবল মারে। ঘর গোছাতে গেলে বা লেখালিখি করতে গেলে আঙুলে-আঙুলে টনটনিয়ে ওঠে যন্ত্রণা। এমন লক্ষণ যদি ধরা দেয় তাহলে বলতেই হয় আপনি অস্টিওআর্থ্রাইটিস বাঁধিয়ে বসেছেন। আঙুলে ব্যথাটাও আর্থ্রাইটিস তবে সেটা অন্যরকম। একে বলে রিউমাটয়েড আর্থাইট্রিস।
হাতে-পায়ে যেন চাবুক কষাচ্ছে বাতের ব্যথা, কেন এত অসহ্য যন্ত্রণা
বাতের ব্যথা বা গাঁটে-গাঁটে যন্ত্রণা এখন আর বয়স বিচার করে আসে না। টানা ৭-৮ ঘণ্টা কম্পিউটারে বসে কাজ করেন যাঁরা, তাঁরা তো ভুগছেনই, রেহাই নেই ঘরোয়া কাজ করতে অভ্যস্ত গৃহবধূদেরও। হয়তো জোরে হাঁটতে গেলেন বা পা মুড়ে মাটিতে বসতে গেলেন, এমনি যন্ত্রণায় হাঁটুটা অবশ হয়ে গেল। লিফটে চেপে ওঠানামায় অভ্যস্ত শরীর সিঁড়ি দিয়ে কয়েক পা উঠলেই কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটা চিনচিনে ব্যথা যেন সাপের মতো ছোবল মারে। ঘর গোছাতে গেলে বা লেখালিখি করতে গেলে আঙুলে-আঙুলে টনটনিয়ে ওঠে যন্ত্রণা। এমন লক্ষণ যদি ধরা দেয় তাহলে বলতেই হয় আপনি অস্টিওআর্থ্রাইটিস বাঁধিয়ে বসেছেন। আঙুলে ব্যথাটাও আর্থ্রাইটিস তবে সেটা অন্যরকম। একে বলে রিউমাটয়েড আর্থাইট্রিস।
ব্যথা প্রথম শুরু হয় অস্থিসন্ধিতে। ফলে অস্থিসন্ধির সচলতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তখন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে বা হাঁটু মুড়ে বসতে কিংবা দ্রুত চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। অনেকক্ষণ একটানা হাঁটলেও পায়ের ব্যথা শুরু হয়।
কখনও হাঁটু, কখনও আঙুল, বাতের ব্যথার রকমফের
চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিভিন্ন রকম বাতের ব্যথার উল্লেখ আছে। তবে আমাদের দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি কাবু অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে। অস্থিসন্ধির কার্টিলেজ ক্ষয়ে গিয়ে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সমস্যা শুরু হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার অস্থিসন্ধির হাড়গুলো হালকা বেঁকেও যেতা পারে। সাধারণত মাঝবয়সী মহিলারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাতের ব্যথা প্রায় মহামারীর আকার নিয়েছে। চল্লিশ পেরিয়ে হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন এমন মহিলার দেখা পাওয়া যাবে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই।

রিউমাটয়েড (Rheumatoid Arthritis)আর্থ্রাইটিস হানা দেয় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতিসক্রিয় হয়ে উঠলে। এই অতিসক্রিয়তা অস্থিসন্ধির কার্টিলেজে প্রভাব ফেলে। কার্টিলেজ ক্ষয়ে বাতের ব্যথা শুরু হয়। রিউমাটয়েড আরর্থ্রাইটিস সাধারণত দেখা দেয় আঙুলের গাঁটে-গাঁটে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় মনে হয় আঙুল অবশ হয়ে আছে। বেশিক্ষণ কাজ করলেও ব্যথা টনটনিয়ে ওঠে।
বাতের ব্যথা দূর হটো— রেহাই মিলবে কীভাবে
- বাতের ব্যথা একবার ধরে গেলে কিছু নিয়ম মানার জরুরি। যেমন বেশি সময় ধরে মাটিতে বসে না থাকা, ঘুম থেকে ওঠার সময় সটান সোজা হযে না উঠে সামান্য কাত হয়ে উঠলে ব্যথার ঝাপটা খেতে হয় না। ঝুঁকে বা দাঁড়িয়ে স্নান না করে টুলে বসে স্নান করা। একটানা কম্পিউটারে কাজ বা টিভি দেখা নৈব নৈব চ। কমোড ব্যবহার এবং অবশ্যই সরু ও উঁচু হিলের জুতো না পরা।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাড়ের সঠিক পুষ্টির অভাব ও জীবনযাত্রায় অনিয়ম এই ব্যথা আরও বেশি বাড়িয়ে তোলে। সুস্থ্য ও নিয়মমাফিক জীবনযাপনের বদলে অনেকেই হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করিয়ে নিতে বেশি আগ্রহী। সবসময় যে অস্ত্রোপচারে দারুণ সাড়া মেলে এমনটাও নয়। রোজকার চলাফেরা, ওঠাবসায় কিছু বিধি-নিষেধ মানলেই ৯০% ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয় না।
- ওষুধ খেয়ে বাতের ব্যথা থেকে রেহাই মেলে ঠিকই, তবে এর প্রভাব সাময়িক। ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করাতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম (অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের দেখানো) ও ফিজিওথেরাপি করলে অস্থিসন্ধি সচল থাকবে। ব্যথাও অনেকটা কমবে। তা ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুবই জরুরি। ওজন বশে থাকলে অস্থিসন্ধির উপরে চাপ অনেকটাই কমে যাবে। ফলে অস্থিসন্ধির ভিতরে থাকা কার্টিলেজের আরও ক্ষয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে এবং ব্যথাও কমে যায়।
- হাতের আঙুলে টান ধরলে বা ব্যথা থাকলে বিশেষজ্ঞরা অনেক সময়েই বললেন নিজের হাতে বাসন ধুতে। এতে হাতের আঙুল সচল থাকে। উষ্ণ গরম জলে এই কাজ করলে ফল আরও তাড়াতাড়ি মেলে।
- চটজলদি ব্যথা থেকে আরাম পেতে ‘হট অ্যান্ড কোল্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট’ খুবই কাজে দেয়। দুটো পাত্রের একটিতে বরফ দেওয়া ঠাণ্ডা জল ও অন্যটিতে গরম জল নিতে হবে। প্রথমে ব্যথার জায়গা ঠাণ্ডা জলে এক মিনিট ডুবিয়ে রেখে, পরে ৩০ সেকেন্ড গরম জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এইভাবে ১৫-২০ মিনিট পর্যায়ক্রমে এই প্রক্রিয়া চালালে অনেকটাই আরাম মেলে।
- কম্পিউটারে বসে কাজ করতে যাঁদের, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রতি একঘণ্টা অন্তর সিট ছেড়ে ওঠা উচিত। কখনও একটি পা, অন্যটির উপর চুলে রাখুন বা হাতের হালকা ব্যায়াম করে নিন সিটে বসেই। সারাক্ষণ অফিসের বন্ধ করে বন্দি না থেকে কিছুক্ষণ রোদে হেঁটে আসাও দরকার। তাতে গাঁটে বাত গ্যাঁট হয়ে বসতে পারে না।
- খাবারের তালিকায় ওমেগা-থ্রি-ফ্যাটি অ্যাসিড থাকাটা খুবই জরুরি। জাঙ্ক ফুড, ভাজামশলা কম খান, তবে ওমেগা-থ্রি-ফ্যাটি অ্যাসিড যেন বাদ না যায়। ভিটামিন সি ডায়েটে রাখা দরকার আর বাদাম। আমন্ড, আখরোট, পেস্তা, বাদামে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন ই ও ফাইবার। অস্টিও ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমায়।
বাতের ব্যথার মোক্ষম দাওয়াই যোগব্যায়াম
আর্থ্রাইটিসের মোক্ষম দাওয়াই হল যোগ ব্যায়াম। তাছাড়া অফিসে সারাদিন একভাবে বসে থেকে শিরদাঁড়ায় ব্যথা, পিঠে বা পায়ের ব্যথায় আরাম পেতেও নিয়মিত যোগাসন করা উচিত। যেমন, ঘাড় আর কাঁধের কিছু ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে কাঁধের ব্যথা বা ঘাড়ের ব্যথা সারিয়ে নেওয়া যায়।
সাঁতার কাটাও ব্যথা কমাবার মোক্ষম উপায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলের মধ্যে ভারশূন্য অবস্থায় পেশির ব্যথা অনেকটাই কমে।
নিয়মিত যোগাসন শরীরকে ডিটক্সিফাই করে। বয়সের ছাপ সহজে পড়তে দেয় না। নিয়মিত যোগাসন শরীরকে ডিটক্সিফাই করে। বয়সের ছাপ সহজে পড়তে দেয় না। শরীরের শক্তি বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধ ভেতর থেকে বাড়লে শরীরও শক্তপোক্ত, মজবুত হয়। অল্পে ক্লান্তির ছাপ পড়ে না। হাত-পায়ের যন্ত্রণা কমে। যোগাসনের অন্যতম বড় উপকারিতা–এনার্জি। যতই পরিশ্রম হোক না কেন, উদ্যোম আর উৎসাহের অভাব হবে না। সামান্য রোগে শরীর দুর্বল হবে না।