গর্ভাবস্থার তৃতীয় ট্রাইমেস্টার থেকেই স্তন্যপান করানোর ট্রেনিং দরকার, পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

গুড হেলথ ডেস্ক

এ বছর বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহের (Breastfeeding week 2022) থিমই হল সঠিক প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা (Step Up For Breastfeeding: Educate and Support)। মাতৃত্বের প্রথম ধাপ হল ব্রেস্টফিডিং, সন্তানকে স্তন্যপান করানো। এই ব্রেস্টফিডিংয়ের প্রস্তুতি কিন্তু প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড থেকেই শুরু হয়ে যায়। ডাক্তারবাবুরা বলে দেন, হবু মাকে ঠিক কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে। ব্রেস্টফিডিং নিয়ে মায়েদের সচেতন করতে প্রতি বছরই ১ থেকে ৭ অগস্ট বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ পালিত হয় বিশ্বজুড়ে।

মায়ের দুধ যেন সব শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমানে পায়, সেই মিশন নিয়েই এই সপ্তাহ পালন। মা ও সন্তানের শারীরিক সুস্থতা অনেকটাই নির্ভর করে ব্রেস্টফিডিংয়ের ওপরে। মায়ের দুধ শিশুর শরীরে যেমন রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়, তেমনি সন্তানকে বুকে দুধ খাওয়ালে মায়েরও অনেক শারীরিক সমস্যার সমাধান হয়। ভবিষ্যতে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।  প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডের সময় জমা বাড়তি মেদ ঝরাতেও উপকারি ব্রেস্টফিডিং।

breastfeeding

সন্তান জন্মের পর থেকেই স্তনদুগ্ধ পান করানো প্রয়োজন। জন্মের পর ৬ টি মাস শিশুকে শুধু মায়ের দুধই দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অক্সিটোসিন ও প্রোল্যাক্টিন হরমোন ক্ষরণে স্তনের দুধ তৈরি হয়। কোনও মায়ের শরীরে দুধ কম এলেও মাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে। এই সময় মা যা খাবে তার ওপরেও নির্ভর করবে সন্তানের পুষ্টি ও বিকাশ। তাই মাকে ডায়েটের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বুকের দুধ কীভাবে খাওয়াতে হবে, নিজের ডায়েটের দিকে কীভাবে খেয়াল রাখবেন মায়েরা, জীবনযাপনে কী কী সংযম মানতে হবে সে ব্যাপারে আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডের থার্ড ট্রাইমেস্টার থেকেই হবু মায়েদের ট্রেনিং দেওয়া জরুরি বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

প্রেগন্যান্সির সময় থেকেই প্রস্তুতি নেবেন মা

সন্তান গর্ভে থাকার সময়েই ডাক্তারবাবুরা বলে দেবেন মায়েদের কী কী নিয়ম মানতে হবে। প্রথমত, পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। দ্বিতীয়ত, মা স্ট্রেস ফ্রি থাকার চেষ্টা করবেন (Breastfeeding week 2022)। কোনওরকম মানসিক চাপ না রাখাই ভাল। তৃতীয়ত, স্তন্যপান নিয়ে কোনও ভ্রান্ত ধারণা যেন না থাকে। অনেক মায়েরাই প্রথমবার ডেলিভারির আগে ভয় পেয়ে যান, ব্রেস্টফিড করাতে পারবেন কিনা, এই চিন্তাও থাকে। সেসব নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সন্তান একবার ‘সাক’ করতে শুরু করলেই দুধ ঠিকঠাকভাবে তৈরি হতে শুরু করবে এবং সবটাই সহজে হবে।

জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো জরুরি, স্তন্যপান সপ্তাহে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

Breastfeeding

নজর থাক ডায়েটে

প্রেগন্যান্সির সময় মাকে প্রচুর প্রোটিন ও আয়রন খেতে হবে। এই সব পুষ্টিকর ডায়েট খুব দরকার। মাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে হবে ডায়েটে। ফলের রস খাওয়া ভাল, কিন্তু খাবারে ঝাল বেশি নয়। অনেক মায়েরা বলেন, স্তনবৃন্ত ‘ফ্ল্যাট’ হয়ে আছে, শিশু ‘সাক’ পারছে না। এর জন্য প্রেগন্যান্সির সময় থেকেই স্তনবৃন্ত টানার অভ্যাস করতে হবে মাকেই। মায়েদের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট খাওয়ান ডাক্তারবাবুরা, যাতে ব্রেস্ট-মিল্কে ডিএইচএ লেভেল বেশি হয়। এই ডিএইচএ শিশুর পুষ্টি, বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। ডিএইচ সঠিক পরিমাণে শিশুর শরীরে ঢুকলে আইকিউ লেভেল বাড়বে (Breastfeeding week 2022)।

ব্রেস্টফিড করানোর সময় বাচ্চাকে ঠিক এইভাবে ধরুন

সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় এমনভাবে কোলে রাখতে হবে যাতে স্তনবৃন্ত শিশুর নাক স্পর্শ করে, মুখ নয়। বাচ্চা নিজেই মাথা তুলে স্তন্যপান করবে। ফলে শিশুটির মাথা ও পেটের অবস্থান মায়ের শরীরের সঙ্গে সামঞ্জস্য়পূর্ণ হবে। বাচ্চার ব্যথা লাগবে না বা ঘাড়ে ব্যথা হবে না (Breastfeeding week 2022)।

Newborn Breastfeeding

বাচ্চার পেট যেন মায়ের পেটের সঙ্গে লেগে থাকে। তাহলে ঘাড়, মাথা বা পিঠ ঘুরিয়ে বাচ্চাটিকে কষ্ট করে স্তন্যপান (Breast Feeding) করতে হবে না।

মাকেও বসতে হবে সঠিকভাবে। বার বার বাচ্চাকে কোলে করে উঠে গেলে হবে না। একই জায়গায় বসে ব্রেস্ট ফিড করান। আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে নিন। বিছানায় বসুন বা চেয়ারে, চারপাশে যেন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নাগালেই থাকে। পিঠের কাছে বালিশ বা গদি নিয়ে পিঠ ঠেকিয়ে রাখুন। মায়েরা আরাম পাবেন।

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর (Breast Feeding) সময় তাড়াহুড়ো করবেন না। শিশুটি যতক্ষণ নিজে থেকে মাথা না সরাচ্ছে ততক্ষণ স্তন্যপান করতে দিন। বাচ্চা মুখ সরিয়ে নিলে তবেই স্তন বদল করুন। অনেক সময় বাচ্চা একটি স্তন থেকেই দুধ খায়। সেক্ষেত্রে জোর করবেন না।

ব্রেস্টফিড করানোর সময়ে শিশুর নাক যেন ব্রেস্টে চেপে না যায়। সে ক্ষেত্রে তাদের অ্যাসফিক্সিয়া বা শ্বাসরোধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে।

স্তন্যপান করানোর সময় মায়েরা মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না। খাওয়ানোর পরে শিশুর যাতে ঢেকুর ওঠে, সেটা দেখাও ভীষণ জরুরি।

ব্রেস্টফিড (Breast Feeding) করানোর আগে ও পরে মায়েদের ব্রেস্ট ও নিপল ভাল করে পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুর শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়, এমন ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। এতে ক্র্যাকড নিপলের সমস্যাও কম হয়।