
ভ্যাজাইনার সুস্বাস্থ্যে নজর দিন, অনেক বড় অসুখের সম্ভাবনা বাড়তে পারে লজ্জায় ও অযত্নে
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নারীস্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনায় যতটা আসে নারীশরীরের পুষ্টির কথা, স্ত্রী-রোগের চিকিতসার কথা, মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা, ততটা হয়তো আলোচিত নয় পরিচ্ছন্নতার দিকটি। এর কারণ যাই হোক না কেন, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, নারীস্বাস্থ্য ভাল রাখার এবং একাধিক স্ত্রী রোগ এড়িয়ে চলার একটা বড় ও প্রাথমিক পদক্ষেপ হল যোনির পরিচ্ছন্নতা। ভ্যাজাইনাল হেল্থ যদি ভাল থাকে, তাহলে অনেক অসুখকেই আটকানো যায়। গবেষণা বলছে, কেবল এই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়া এ দেশের সারভিক্যাল ক্যানসারের একটা বড় কারণ।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কী কী উপায়ে ভ্যাজাইনাকে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রাখা যেতে পারে।
-
১. প্রথমেই মনে রাখতে হবে, ভ্যাজাইনা শরীরেরই একটা অঙ্গ। তাই এর সুস্থতা নির্ভর করছে শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপরেও। তাই ভাল খাবার, নিয়মিত শরীরচর্চা ও একটি নিয়মমাফিক জীবন খুব জরুরি। আসলে শরীর এমন একটি যন্ত্র, যেখানে একটি সমস্যার সঙ্গে অন্যটি জুড়ে যেতে সময় লাগে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। এখন কেউ যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তাহলে মূত্রনালীতে ইস্ট-সংক্রমণের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। যা ভ্যাজাইনার সুস্বাস্থ্যের অত্যন্ত ক্ষতি করে।
-
২. নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে নিজেকে। পাশাপাশি, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও পরীক্ষা করাতে হবে। একটা বয়সের পর থেকে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে নিয়মিত প্যাপ স্মেয়ার টেস্ট করা জরুরি যোনিকে সুস্থ রাখার জন্য। সেই সঙ্গে এইচপিভি ভ্যাকসিনেশনও জরুরি। এটি সারভিক্যাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
-
৩. ভ্যাজাইনাকে নিরাপদ রাখতে চাইলে, যৌন সংসর্গের সময়ে কনডোম ব্যবহারের কোনও বিকল্প নেই। কেবল অযাচিত গর্ভধারণ রোধ করার জন্য নয়, এটি অনেক ছোঁয়াচে অসুখ থেকেও সুরক্ষা দেয় নারীশরীরকে। যোনির সংক্রমণের ঝুঁকিও কমে।
-
৪. নিয়মিত যোনি পরিষ্কার করা জরুরি। তবে সে জন্য কেবল জলই যথেষ্ট। কেমিক্যালযুক্ত সাবান, ওয়েট টিস্যু, স্যানিটাইজার– এই সব কিছুই ভাল নয় যোনির জন্য। একান্ত যদি ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে বাইরের দিকে সাবান দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যোনির ভিতরে কোনও রকম বাইরের বস্তুই প্রবেশ করানো উচিত নয় পরিষ্কার করার জন্য। দুর্গন্ধ দূর করার নামে বেশ কিছু তরল বিক্রি হয় বাজারে, সেগুলিরও কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি থাকে না অনেক সময়ে।
-
৫. যদি কোনও কারণে যোনিকে পিচ্ছিল করার প্রয়োজন হয়, তবে তা নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলের মতো কোনও প্রাকৃতিক তেল দিয়েই করা ভাল। কেমিক্যাল যুক্ত লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করা উচিত নয়।
-
৬. মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরেও যদি কখনও রক্তপাত হয় যোনি থেকে, সেটা অবহেলা করবেন না। যোনিতে সমস্যার একটা বড় ইঙ্গিত হতে পারে এই রক্তপাত।
-
৭. যোনি শিথিল হয়ে যাওয়া আপাত ভাবে কোনও সমস্যার কারণ নয়। তবে তাতে যদি প্রস্রাবের সময়ে সমস্যা হয়, কোনও অস্বস্তি হয়, ব্যথা করে, তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করুন।
-
৮. ভ্যাজাইনা নিঃসৃত ইস্ট্রোজেন হরমোন যোনির স্বাস্থ্যের জন্যই ভাল। এটি নিয়ে অহেতুক ভয় বা দুশ্চিন্তা করবেন না। এতে যোনি পিচ্ছিল থাকে, মূত্রনালী সংক্রমণের ঝুঁকি কমে। তবে অতিরিক্ত সাদাস্রাব হলে ডাক্তার দেখানো উচিত।
- ৯. অন্তর্বাস কাচুন নিয়মিত। সেই ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত কড়া সাবান ব্যবহার না করাই ভাল। কাচার পরে কড়া রোদে শুকোনো জরুরি। অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় শুকনো করা অন্তর্বাস কিন্তু সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
- ১০. ঋতুস্রাবের সময়ে নির্দিষ্ট সময়ের অন্তরে ন্যাপকিন বদল করার কথা আলাদা করে বলার বিষয় নয়। তার পরেও সমস্যা এড়াতে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ভাল বিকল্প হতে পারে ঋতুস্রাবকালীন যোনি-সমস্যার সুরাহায়।