
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে গর্ভবতী, সদ্য মায়েদের ওপর, মৃত্যুহারও বেশি
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা সংক্রমণ গর্ভবতী মায়েদের শরীরে কেমন প্রভাব ফেলবে সে নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। গর্ভস্থ ভ্রূণ কতটা সুরক্ষিত সে নিয়েও সঠিক তথ্য মেলেনি। অন্তঃসত্ত্বাদের শরীরে তাই কোভিড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করতেও ভরসা পাননি বিশেষজ্ঞরা। আর সেই কারণেই কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত গর্ভবতী ও সদ্য সন্তানের জন্ম দেওয়া মায়েরা, এমনটাই জানাচ্ছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)।
করোনা কতটা প্রভাব ফেলেছে গর্ভবতীদের ওপরে?
আইসিএমআরের গবেষণা বলছে, কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে অন্তঃসত্ত্বা ও সদ্য মায়েদের মধ্যে সংক্রমণের হার ছিল ১৪.২ শতাংশ। দ্বিতীয় ঢেউয়ে এমনিতেও ভাইরাসের নানা প্রজাতি দ্বিগুণ সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এর জের পড়েছে প্রসূতীদের মধ্যেও। দেখা গেছে, দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মে অবধি, গর্ভবতী ও সদ্য মায়েদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেড়ে হয়েছে ২৮.৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রথম ঢেউয়ের থেকে দ্বিগুণ বেশি।
সংক্রমণের হারই শুধু বাড়েনি, বেড়েছে মৃত্যুহারও। আইসিএমআরের সমীক্ষা বলছে, কোভিড মহামারী শুরু হওয়ার পরে প্রসূতীদের মধ্যে সংক্রমণজনিত কারণে মৃত্যুহার ছিল কম, দ্বিতীয় ঢেউয়ে তাই বেড়ে হয়েছে ৫.৭%। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড আক্রান্ত হয়ে বা করোনা পরবর্তী পর্যায়ে নানারকম শারীরিক অসুস্থতায় মৃত্যু হয়েছে।
গর্ভবতী মায়েদের শরীরে করোনার কী কী উপসর্গ দেখা গেছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভবতী মায়েরা সংক্রমিত হলে কতটা জটিল অসুখ করতে পারে তা এখনও সঠিকভাবে বলা যায়নি। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সব ক্ষেত্রে সংক্রমণ জটিল পর্যায়ে পৌঁছয়নি। হাল্কা জ্বর, মাথাব্যথা, গা-হাতপায়ে ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা গেছে। ভাইরাল ফ্লু-এর মতো উপসর্গও দেখা গেছে অনেকের। আবার অনেকেরই রোগের কোনও বাহ্যিক লক্ষণ দেখা যায়নি। উপসর্গহীন বা অ্যাসিম্পটোমেটিক মায়েরা প্রসবের আগে জানতে পেরেছেন তাঁরা করোনা আক্রান্ত। আর প্রসবের পরে দেখা গেছে সন্তানের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
ইদানীংকালে মানে দ্বিতীয় ঢেউয়ে জ্বর ও নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ বেশি দেখা গেছে। শ্বাসের সমস্যাতেও ভুগেছেন অনেক গর্ভবতী মায়েরা। জটিল অসুখ করলেও সেটা শুধুমাত্র কোভিডের কারণে হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়নি, এই কারণেই অন্তঃসত্ত্বাদের শরীরে করোনা কতটা প্রভাব ফেলতে পারে সে নিয়ে এখনও দ্বিধায় রয়েছেন গবেষকরা।
প্রসঙ্গত, ‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল প্যাথোলজি’ নামে বিজ্ঞান পত্রিকায় একটি রিপোর্ট বেরিয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল, কোভিড পজিটিভ একজন গর্ভবতী মায়ের প্লাসেন্টার মধ্যে অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে। প্লাসেন্টার মধ্যে অনিয়মিত রক্তপ্রবাহ, রক্তপাতের ঘটনাও ঘটেছে। তবে প্লাসেন্টা ভাইরাস সংক্রামিত হলে সেখান থেকে গর্ভস্থ ভ্রূণের শরীরে সংক্রমণ ঢুকবে কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়নি। তবে আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দিতে পারেননি চিকিৎসকরা।
গর্ভবতীদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়নি, তাই কি এমন বিপর্যয়?
দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যামিনী সারওয়াল বলছেন, বিশ্বের অনেক দেশেই গর্ভবতীদের শরীরে কোভিড ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়েছে। আমাদের দেশে এখনও গাইডলাইনে গর্ভবতীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলা হয়নি। তাছাড়া অন্তঃসত্ত্বাদের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রভাব কতটা হবে সে নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে। তাই প্রাথমিক সুরক্ষাটুকু নেই। সেই কারণেই হয়ত অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের মধ্যেও সংক্রমণের হার বেড়ে চলেছে।
সম্প্রতি ল্যানসেটের একটি গবেষণাও বলেছে, গর্ভবতী মহিলাদের কোভিড পজিটিভ ধরা পড়লে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে সে নিয়েও যথোপযুক্ত গাইডলাইন নেই। করোনা চিকিৎসায় যে ওষুধগুলিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে তাই দেওয়া হচ্ছে অন্তঃসত্ত্বাদেরও। এমনকি স্টেরয়েডের ডোজও দেওয়া হচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে মা ও সন্তানের শরীরে। বিশেষ করে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়ালে তার প্রভাব পড়বে গর্ভস্থ শিশুর শরীরেও। নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম, জন্মের সময় অতিরিক্ত কম ওজনের ঝুঁকি বাড়বে। তাই অন্তঃসত্ত্বাদের কোভিড থেরাপির জন্য অবিলম্বে সুর্দিনিষ্ট গাইডলাইন দরকার বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।