
মধ্য চল্লিশে ভুঁড়ি! মেনোপজের সময় পেট-কোমরের মেদ বাড়লে বিপদ, জবাব দেবে হার্ট
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চল্লিশ পার হলেই পেট-কোমর যেন আর বশে থাকে না। মেদ জমতে থাকে তলপেটে। বিশেষত মহিলাদের মধ্যপ্রদেশ স্ফীত হতে শুরু করে অর্থাৎ সোজা কথায় অ্যাবডোমিনাল ফ্যাট জমতে শুরু করে। আর বাঙালি মেয়েদের তো কথাই নেই। চল্লিশ পার করে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছেই। চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে এই বয়সটা কিন্তু মহিলাদের একটু বেশিই সতর্ক থাকতে হবে। একদিকে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হতে থাকে, অন্যদিকে মেনোপজের সময় এসে যায়। তার ওপর পেট-কোমরে মেদ জমলে চাপ পড়ে সটান হার্টের ওপরে।
চল্লিশের পর থেকে মেয়েদের শরীরে এমনিতেই নানা বদল আসে। ওজন বেড়ে যায় অনেকের। থলথলে চর্বি জমে তলপেটে। এসবরে কারণই হল ব্যায়ামের প্রতি অনীহা, খাদ্যাভ্যাস এবং সংসার-পরিবার সামলাতে গিয়ে নিজের প্রতি যত্নের অভাব। অনেককেই আবার দেখা যায়, ওজন হয়ত তেমন বাড়েনি, কিন্তু সারা শরীর ফুলেফেঁপে গেছে। বিশেষ করে পেট ও কোমর সাঙ্ঘাতিকভাবে চওড়া হয়ে গেছে। এসব কিছুই কিন্তু বিপদ সঙ্কেত হতে পারে।
‘মেনোপজ’ নামক মেডিক্যাল জার্নালে মহিলাদের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে এই তথ্য দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ গ্র্যাজুয়েট স্কুলের বিজ্ঞানীরা। গবেষণা বলছে, ওবেসিটি বা স্থূলত্বের সঙ্গে হার্টের রোগের সরাসরি যোগসূত্র আছে। তেমনি মেনোপজের কাছাকাছি চলে আসা বা মেনোপজের পরবর্তী সময়ের মহিলাদের সেন্ট্রাল বডি ফ্যাট বা অ্যাবডমিনাল ফ্যাট হার্টের রোগের কারণ হতে পারে। বয়স ৫০ পার হলে বিপদ আরও বাড়ে। কারণ সে সময় হার্টের এজিং শুরু হয়ে যায়। তার ওপর মেদবাহুল্য করোনারি আর্টারির ওপরে চাপ দিতে শুরু করে।
গবেষকরা বলছেন, মেদ শুধু বাইরে জমে না, বিভিন্ন অঙ্গের ভেতরেও জমে। রিস্ক ফ্যাক্টর সেটাই। যদি অ্যাবডমিনাল ফ্যাট ২০% বেড়ে যায়, তাহলে করোনারি আর্টারির ওপরে তার চাপ পড়ে।
কীভাবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে? হৃদপিণ্ডের মাঝে করোনারি আর্টারি নামে দুটি ছোট ধমনী থাকে। এই ধমনীদের কাজ হল হার্টকে সচল ও কার্যক্ষম রাখা। পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দিয়ে হার্টকে ঝরঝরে ও তরতাজা রাখা। যদি এই ধমনীর মধ্যে ফ্যাট জমতে থাকে তাহলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ধমনী যদি ব্লক হয়ে যায় তাহলে পুষ্টি উপাদান আর হৃদপেশিতে পৌঁছতে পারে না। তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। করোনারি আর্টারি বা ধমনী ব্লক হয়ে গেলে নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে শরীরে। নিঃশব্দে হানা দেয় হৃদরোগ।
স্ত্রী যৌন হরমোন ইস্ট্রোজেন রক্তনালীর নমনীয়তা ধরে রাখে। মেদ বা ক্যালসিয়ামের স্তর জমতে দেয় না। ইস্ট্রোজেন হরমোন যতদিন স্বাভাবিকভাবে ক্ষরিত হয় হৃদপেশীকে শক্ত হতে দেয় না। ফলে হৃদপিণ্ডে রক্ত ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহে বাধা তৈরি হয় না। কিন্তু মেনোপজের পরে ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ কমতে শুরু করে। মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল বন্ধ হয়ে যায়। ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় রক্তনালীর মধ্যে প্লাক জমার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই সময় যদি পেট-কোমরে মেদ জমতে থাকে বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গে মেদের পরিমাণ বাড়ে, কোলেস্টেরল বেড়ে যায় তাহলেই বিপদ। খারাপ কোলেস্টেরল ফাইব্রোলোজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যা ব্লাড ক্লটের অন্যতম কারণ। তখন আচমকা হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায় মহিলাদের।
মেনোপজের সময় তাই বেশি সাবধান থাকা উচিত। নিয়ম মেনে শরীরচর্চা, সঠিক ডায়েট, পরিমাণ মতো জল খাওয়া জরুরি। নিয়মিত যোগব্যায়াম খুব কাজে দেয় এই সময়। আসলে, সারাদিনে আমরা এমন কিছু খাবার খাচ্ছি যা শরীরে প্রচুর ফ্যাট তৈরি করছে। জামাকাপড় কাচা, ঘর পরিষ্কার, উবু হয়ে বসে তরকারি কাটা, বাটনা বাটা বা ঘর মোছার মতো কাজ এখন অনেকেই করেন না। সবই যন্ত্রের মাধ্যমে বা কাজের লোকের মাধ্যমে হয়ে যায়। বাঙালি মহিলাদের দুপুরে ভাতঘুম দেওয়ার অভ্যাসও আছে।
তার ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বসে সিরিয়াল দেখা, হাঁটাচলা না করা ইত্যাদি অ্যাবডমিনাল ফ্যাট বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানসিক চাপ বাড়লে অনেকের মধ্যেই বেশি খাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। যা থেকে ওজন বাড়ে। তাই এই সময় সমস্ত মানসিক উত্তেজনা, চাপ, স্ট্রেস দূরে রাখাই ভাল। রাতে টানা আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি। নিয়ম করে হেলথ চেকআপ দরকার। শুধু পরিবারের খেয়াল না রেখে মেয়েরা একটু নিজেদের যত্নও নিন, তাহলেই যে কোনও বিপদ সহজেই পার করা যাবে।