ঘনঘন বার্থ কন্ট্রোল পিল থাইরয়েডের সমস্যা বাড়াতে পারে! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

দ্য ওয়াল ব্যুরো: বার্থ কন্ট্রোল পিলের অনেক রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ঘন ঘন গর্ভনিরোধক পিল খেলে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিতে পারে কিনা, সে নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন আছে। বিশেষত, যে সমস্ত মহিলারা হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় আছেন, আবার বার্থ কন্ট্রোল পিলও খাচ্ছেন, তাঁদের ভয়ের কারণ কতটা, সে নিয়ে বিস্তারিত বললেন বিশেষজ্ঞরা। গর্ভনিরোধক বড়ি থেকে থাইরয়েড বাড়তে পারে কিনা সে নিয়ে গবেষণাও বলছে।

ডাক্তারবাবুরা বলছেন, বার্থ কন্ট্রোল পিলের যথেচ্ছ ব্যবহার স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আগে চলিশোর্ধ্ব মহিলাদের এই সমস্যা দেখা দিত। এখন ৩০ বছরের পর থেকেই এই রোগ ধরছে অনেকের। বিশেষ করে অনেক মহিলাই প্রতিবার সঙ্গমের পরে মুড়িমুড়কির মতো বার্থ কন্ট্রোল পিল খেয়ে ফেলেন। ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে যে কোনও ব্র্যান্ডের গর্ভনিরোধক পিল খান অনেকেই, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক। এই ধরনের ওষুধ হরমোনের ওপর প্রভাব ফেল। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে দিতে পারে। কাজেই থাইরয়েড হরমোনের ওপরেও যে এর প্রভাব পড়বে তা বলাই বাহুল্য।

থাইরয়েড হরমোনের কাজ অনেক। শ্বাসনালীর কাছে ছোট্ট একটা গ্রন্থি আছে যাকে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বলে, এখান থেকেই হরমোন বের হয়। বিপাক ক্রিয়া, বুদ্ধির বিকাশ, বয়ঃসন্ধি, মহিলাদের গর্ভধারণ, ঋতুস্রাব সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে এই গ্রন্থি থেকে বের হওয়া হরমোন।

সাধারণত দুই ধরনের থাইরয়েড হরমোন গ্রন্থি থেকে বের হয়—টি৪ (থাইরক্সিন) এবং টি৩ (ট্রায়োডোথাইরোনিন) । ডাক্তারবাবুরা বলেন, মূল থাইরয়েড হরমোন বলে হল টি৪। এই দুই হরমোন শরীরের বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই দুই হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে বা কমে গেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। থাইরযেডের রোগ দু’রকম হতে পারে.. ১) হাইপারথাইরয়েডিজম—যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, ২) হাইপোথাইরয়েডিজম—যখন থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোন কম ক্ষরিত হয়। হাইপারথাইরয়েডিজম মানেই ওজন কমে যাওয়া, বেশি গরম লাগা, বুক ধড়ফড় করা, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, এমনকি মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আর হাইপোথাইরযেডিজমে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওজন বেড়ে যেতে থাকে, শরীর দুর্বল, পেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, গর্ভধারণে সমস্যা, এমনকি রোগী মানসিক অবসাদেও ভুগতে পারে।

এই থাইরয়েড হরমোন শরীরে ঘুরতে ঘুরতে রক্তের প্লাজমা প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়। তিন ধরনের প্রোটিন আছে—থাইরক্সি-বাইন্ডিং গ্লোবিউলিন (টিবিজি), ট্রান্সথাইরেটিন (টিটিআর) ও অ্যালবুমিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কী পরিমাণ থাইরয়েড হরমোন শরীরে উন্মুক্ত ভাবে ঘুরবে আর কী পরিমাণ প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হবে তার একটা ভারসাম্য আছে। এর কম বা বেশি হলেই নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। তখন হাইপো বা হাইপার থাইরয়েড রোগ ধরা পড়ে। বার্থ কন্ট্রোল পিল এই ভারসাম্যটা নষ্ট করে দিতে পারে।

সেটা কীভাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কী পরিমাণ টি৩ বা টি৪ হরমোন প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হবে তার ব্যালান্সটা নষ্ট করে দেয় গর্ভনিরোধক পিল। এই জাতীয় ওষুধে ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন থাকে। এই ইস্ট্রোজেন থাইরয়েড হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বার্থ কন্ট্রোল পিল খেতে শুরু করার দু’সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় টিবিজি বা টাইরক্সিন-বাইন্ডিং গ্লোবিউলিন প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ফলে বেশি পরিমাণ হরমোন প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করে। ফ্রি টি৩ বা টি৪ হরমোনের পরিমাণ কমে যায়। এর কারণে নানা সমস্যা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইপোথাইরয়েডিজমের থেরাপিতে রয়েছেন এমন মহিলারা যদি ঘন ঘন বার্থ কন্ট্রোল পিল খেতে থাকেন, তাহলে তাদের টিএসএইচ লেভেল ঠিক রাখার জন্য থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। মোদ্দা কথা হল, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া  গর্ভনিরোধক পিলের বেশি ব্যবহার থাইরয়েডের সমস্যা ডেকে আতে পারে বা যাদের থাইরয়েড আগে থেকেই রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে হরমোনের পরিমাণে আরও তারতম্য হতে পারে।

বার্থ কন্ট্রোল পিল খেতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ মেনেই খাওয়া উচিত, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রক্তে টিএসএইচের মাত্রা কতটা, এফটি-ফোর, অ্যান্টি টিপিও অ্যান্টিবডি, ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইত্যাদি পরীক্ষা করিয়ে নিলে আরও ভাল হয়।